শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১১

ধূমপানমুক্তকরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন



বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ৩১ মে ২০১০ উপলে
ধূমপানমুক্তকরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন, রমনা মডেল থানা
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট

তামাকজাত দ্রব্য বিশ্বে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। তামাকের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫৭ হাজার মানুষ মারা যায়, ৩ ল ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। তামাকের ভয়াবহ তিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করতে প্রতিবছর পালন করা হয় বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। ১৯৮৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উদযাপন হতে যাচ্ছে। এ বছরের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে "এবহফবৎ ধহফ ঃড়নধপপড় রিঃয ধহ বসঢ়যধংরং ড়হ সধৎশবঃরহম ঃড় ড়িসবহ". বাংলায় ’’তামাকের আগ্রাসী বিজ্ঞাপন মহিলা ও শিশু জন্য হুমকি’’। ’’প্রতিদিনই হোক তামাকমুক্ত দিন’’। তামাকজাত দ্রব্যের তিকর দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করেছে। এ আইনে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিড়ি-সিগােেটর ধোঁয়া অধূমপায়ীদের জন্য তিকর। পরো তি হতে জনসাধারণকে রায় এ আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি।

আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেন। আইনের প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ এ ধরনের বিভ্রান্তির কারণেও অনেকে আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে থাকেন। আইনের কোথাও প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়নি, বরং সুনির্দিষ্ট পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির ল্েয পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

এষড়নধষ অফঁষঃ ঞড়নধপপড় ঝঁৎাবু (এঅঞঝ) এবং ওঞঈ ইধহমষধফবংয ঘধঃরড়হধষ জবঢ়ড়ৎঃ ড়হ ঊাধষঁধঃরড়হ ড়ভ ঞড়নধপপড় ঈড়হঃৎড়ষ চড়ষরপরবং রহ ইধহমষধফবংয ২০০৯ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে অগগতি হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সম্পর্কে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান হ্রাস পেয়েছে, দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপন হচ্ছে। প্রিণ্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়েছে, সিগারেটের প্যাকেটে লিখিত বানী প্রচার হচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে আইন প্রণয়নের ফলাফল। এ অর্জন সরকার, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন ও গণমাধ্যমের সম্মিল্লিত প্রয়াস।

দেশের থানাগুলো প্রতিটি এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্লেস। প্রতিদিন এখানে প্রচুর জনসাধারণ বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য এসে থাকে। এছাড়া পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণকে সাধারন মানুষ আইন বাস্তবায়নের প্রতীক হিসেবে মনে করে থাকেন। পাবলিক প্লেস হিসেবে থানা ধূমপানমুক্তকরণ উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদপে। দেশের থানাগুলো ধূমপানমুক্ত করার মাধ্যমে আইন বাস্তবায়ন এবং ধূমপানমুক্ত স্থান বিষয়ে জনমনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। থানা ধূমপানমুক্ত করার মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের যে উদ্যোগ গ্রহণ করলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, তা বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিহাস হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এ ইতিহাস এর গর্বিত অংশীদার।

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী দেশের আইন শৃঙ্খলা রার্থে অকান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এর মাঝেও পুলিশ বাহিনীর অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পুলিশ ইতোপূর্বে অনেক ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। গত ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ উপলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জনস্বার্থে নববর্ষের জনসমাগমস্থলকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগ দেশের জন্য একটি ইতিবাচক পদপে। এ পদেেপর পর দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলাও নববর্ষের মেলা/ অনুষ্ঠান ধূমপানমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আজকে রমনা মডেল থানা ধূমপানমুক্ত করনের মাধ্যমে যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা আশা করি তা দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় ও দৃষ্টান্ত হবে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে পুলিশের মতা প্রদান করার কথা বলা হলেও আইনটি বাস্তবায়নের ল্েয পুলিশের মতা খুবই সীমিত। আইনের ধারা ১৪ (ক) অনুসারে যেহেতু একটি আমলযোগ্য অপরাধ যে জন্য পুলিশ কর্মকর্তা কোন ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আটক বা ধূমপানমুক্ত স্থান হতে বহিষ্কার করতে পারে। কিন্তু জরিমানা আদায় বা আরোপের মতা পুলিশের নেই। শুধুমাত্র মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেই এ আইন বাস্তবায়নে জরিমানা আদায় করা হয়। অপরদিকে বিদ্যমান মেট্রোপলিটন পুলিশ আইনগুলোতে ধূমপানমুক্ত এলাকা সাইন থাকা স্বত্বেও, এ সংক্রান্ত ধারাভঙ্গের প্রেেিত ১০০-৩০০ টাকা জরিমানা বিধান রয়েছে। কিন্তু এই ধারা অনুসারেও সরাসরি পুলিশ কর্মকর্তা জরিমানা আদায় করতে পারেন না।

পাবলিক প্লেস বা পরিবহনে ধূমপানের কারণে কোন ব্যক্তিকে আটক করে ম্যাজিট্রেট এর নিকট প্রেরণ এবং জরিমানা করা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমাদের একটি বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন ধূমপায়ীরা অপরাধী নয়, বরং তারা আসক্তির শিকার। আমাদের ল্য তাদের এ আসক্তি হতে মুক্ত করা। সামাজিক ও মানবিক কারণে পাবলিক প্লেস বা পরিবহনের ধূমপানের কারণে এ দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় একজনকে আটক করে বিচারের সম্মুখীন করার অনেকের নিকটই গ্রহণ যোগ্য নয় এবং সাী উপস্থাপনসহ নানাবিধ কারণে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া।

পাবলিক প্লেস এ ধূমপান যখনই সংঘটিত হয়, ঠিক তৎনাৎ আইনটি প্রয়োগ তথা জরিমানা করা প্রয়োজন। আর এ েেত্র আইন প্রয়োগ বা জরিমানা আদায়ের মতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পরিধি সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পুলিশ সদস্যগণ নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ দায়িত্ব পালনের বিভিন্ন কারণে দেশের প্রায় সকল পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের অবস্থান অপোকৃত বেশি। এেেত্র পুলিশ কর্মকর্তাদের পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের ধূমপানের প্রেেিত জরিমানা আদায়ের মতা আইন মতা প্রদান করা হলে আইনের বাস্তবায়ন অনেক সহজতর হবে। ভারতে বাস চালক, স্কুল শিককে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানমুক্ত সংক্রান্ত ধারাভঙ্গের প্রেেিত জরিমানা আদায়ের মতা প্রদান করা হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই পুলিশকে এধরনের আইন বাস্তবায়নে সরাসরি মতা প্রদান করা হয়েছে।

সিগারেটের ধোঁয়া অধূমপায়ীদের জন্যও তিকর। অধূমপায়ী বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের ধূমপানের ধোঁয়া হতে রায় পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের ধূমপান নিষিদ্ধ সংক্রান্ত ধারা কার্যকর বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এ ধারাটি বাস্তবায়নের করার সম্ভব হলে দেশে ধুমপায়ীর মাত্রাও কাঙ্খিত মাত্রা হ্রাস করা সম্ভব।

আমাদের সুপারিশ
১. রমনা মডেল থানার মতো দেশের সকল থানা ও পুলিশের অন্যান্য অফিসগুলোতে ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপন।

২. পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রশিন কারিকুলামে সম্পৃক্তকরণ ।

৩. পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানমুক্ত সংক্রান্ত ধারাটি বাস্তবায়নের ল্েয মেট্রোপলিটন আইন ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জরিমানা আরোপোর মতা প্রদান করা।

৪. জরিমানা আরোপের জন্য স্ট্যাম্প ব্যবস্থা প্রর্বতন করা, যাতে সহজেই পুলিশ কর্মকর্তারা জরিমানা আরোপ করতে পারে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে জবাবদিহিতা ও আইনের বাস্তবায়ন সহজ হবে।

৫. পুলিশ সদস্যগণ জনগনের নিকট আইন প্রয়োগের প্রতীক। তাই পোষাক পরিহিত ও কর্তব্যরত অবস্থায় পাবলিক প্লেসগুলোতে পুলিশ সদস্যদের ধূমপান হতে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ করা দরকার।

পরিশেষে আমি আজকের মহতী এ অনুষ্ঠানের সম্মানিত প্রধান অতিথি, মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আসাদ্জ্জুামান খান, মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আসমা জেরীন ঝুমু, সম্মানিত আইজিপি জনাব নূর মোহাম্মদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর কমিশনার জনাব এ কে এম শহীদুল হক, উপ-পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় এবং বাংলাদেশ পুলিশ, গণমাধ্যম কর্মী ও সুধীবৃন্দÑআপনাদের সকলকে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের প থেকে শুভেচ্ছা জানাই।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী-
সৈয়দ মাহবুবুল আলম, এল এল বি
সম্পাদক, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন