শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১১

সকল কিছুর দাম বাড়ে তামাকের দাম বাড়বে না কেন?

সকল কিছুর দাম বাড়ে তামাকের দাম বাড়বে না কেন?
সৈয়দ মাহবুবুল আলম, নীতি বিশ্লেষক

তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার হ্রাসে সব ধরনের তামাকের উপর কর বৃদ্ধি ও প্রকৃত মূল্য বৃদ্ধি, ধূমপানমুক্ত স্থান, বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, প্যাকেটের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্যসতর্কবানী ইত্যাদি আইন ও নীতিগত বিষয়গুলো আন্তর্জাতিকভাবে পরিীত একটি কার্যকর উপায়। বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানমুক্তকরণ, বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, প্যাকেটের গায়ে স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদানের পদপে গ্রহণ করেছে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির সাথে সামঞ্চস্য রেখে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাসে কর বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশে যথার্থ পদপে গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ৪৩.৩% (৪১.৩ মিলিয়ন) প্রাপ্ত বয়স্ক লোক তামাক ব্যবহার করে । এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে রায় এবং নিরুৎসাহিত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মতো কার্যকর পদপে গ্রহণ করা জরুরি।

আজকের আলোচনার ২০১০-২০১১ সালের বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের বিষয়ে যে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে তা তুলে ধরছিঃ
১) জনস্বাস্থ্যের জন্য তিকর বিবেচনায় সিগারেটের মূল্যস্তর ও সম্পুরক শুল্ক যুক্তিসঙ্গত হারে বৃদ্ধি।
২) কৃষি জমিতে তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে তামাক (আন-ম্যানুফ্যাকচার্ড) রপ্তানির েেত্র ১০ শতাংশ হারে রপ্তানি শুল্ক আরোপ।
৩) সকল প্রচার সিগারেট, বিড়ি, গুল, জর্দ্দাকে কুটির শিল্পের আ্ওতা বহির্ভুতকরণের ল্েয প্রজ্ঞাপন জারিকরণ।
৪) সিগারেটের খুচরা মূল্য এবং সম্পুরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেেিত মূল্যস্তর ভেদে বিভিন্ন স্ট্যাম্প/ব্যান্ডরোল ব্যবহার এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পুরক শুল্ক পরিশোধ বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক একটি সাধারণ আদেশ জারিকরণ।
৫) ফিল্টারযুক্ত বিড়ির েেত্র স্থানীয় পর্যায়ে নতুনভাবে ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণের প্রেেিত মাঠ পর্যায়ে গৃহীতব্য কার্যক্রমের বিষয়ে একটি সাধারণ আদেশ জারিকরণ।

জনস্বাস্থ্যের জন্য তিকর বিবেচনায় দীর্ঘদিন পর বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাসের ল্েয যে সকল পদপে গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আমরা আশা করি প্রতিবছর সরকার তিকর তামাকজাত দ্রব্য হতে উচ্চ হারে কর আদায় করে বিকল্প কর্মসংস্থান ও তামাকজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যয়কৃত অর্থের যোগান নিশ্চিত করবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের উপর কর বৃদ্ধির যে প্রস্তাবনা করা হয়েছে মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় কম। ফিল্টার বিড়ির েেত্র কর আরোপ করা হয়েছে। বাজারে ফিল্টার বিড়ির ব্যবহার নেই বললেই চলে। অপরদিকে বাজারে বহুল ব্যবহৃত বিড়ির উপর কোন ধরনের শুল্ক আরোপ করা হয়নি।

তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি কেন জরুরি
তামাক একটি মরণঘাতী পণ্য। এ পণ্যের কারণে প্রতিদিন দেশের মানুষ নানাবিধ কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আপনাদের অবগতির জন্য বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিত্র তুলে ধরছি।

১. তামাক ব্যবহারের প্রত্য ফল হিসেবে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫৭,০০০ জন মৃত্যুবরণ, ৩৮২,০০০ লোক পঙ্গুত্ব বরণ করে
২. প্রতিবছর ১২,০০,০০০ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত প্রধান ৮টি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে রোগীর চিকিৎসা, অকালমুত্যু, পঙ্গুত্বের কারণে বছরে দেশের অর্থনীতিতে ১১০০০ কোটি টাকার তি হচ্ছে
৩. তামাক চাষ ও উৎপাদনে লাভবান হয় কোম্পানির মালিক। তিগ্রস্ত হয় চাষী, শ্রমিক ও ব্যবহারী। তামাকের উপর হতে উচ্চকর আদায় করে তামাক সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান ও তামাকজনিত রোগের চিকিৎসার আর্থিক যোগান নিশ্চিত করা সম্ভব।
৪. কৃষি জমিতে তামাক চাষ ও তামাক পাতা শুকানোর জন্য গাছ কেটে বনাঞ্চল ধ্বংস করায় খাদ্য ঘাটতি তৈরী হচ্ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে ।
৫. তামাক ব্যবহার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলছে। তামাকের পিছনে ব্যয়কৃত অর্থের ৬৯% খাদ্যের পিছনে ব্যায় করা হলে ৫০% শিশুকে অপুষ্টি থেকে বাচাঁনো সম্ভব ।
৬. ধূমপানসহ তামাক সেবন মাদক ব্যবহারের প্রবেশদ্বার। তামাক ব্যবহার বৃদ্ধি দেশে মাদক ব্যবহারকে আরো বৃদ্ধি করবে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির পদপে গ্রহণ জরুরি। মানুষের জীবন অপো কোন কিছুই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১১ এবং অনুচ্ছেদ ১৮ (১) সমূহের এ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হানিকর মদ ও ভেজষের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের করনের কথা বলা হয়েছে। আন্তজার্তিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-র আর্টিকেল-৬ নং ধারায় তামাক ব্যবহার হ্রাস কর বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে । নীতিনির্ধারনের েেত্র জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতির উপর তামাকের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিবেচনা তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর আরোপ করার অর্থ সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন।

তামাক ব্যবহার হ্রাসে কর বৃদ্ধির গুরুত্ব:
বিগত কয়েক বছরের অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেলেও তামাকজাত দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায়নি বরং কমেছে। সস্তায় তামাকজাত দ্রব্য প্রাপ্তির কারণে মানুষের মধ্যে তামাক ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, গড়ে ১০% মূল্য বৃদ্ধিতে উচ্চ আয় ও নিম্ন আয়ের দেশসমূহে ধূমপায়ী এবং ধূমপানজনিত মৃত্যু উল্লেখ্যযোগ্য হারে হ্রাস পায়। দণি এশিয়ার দেশগুলোতে ধূমপায়ী হ্রাসের মাত্রা (সিগারেট ব্যবহারী) ৩ মিলিয়ন এবং মৃত্যু হ্রাসের মাত্রা হবে ০.০৭ মিলিয়ন । গবেষণায় দেখা যায় থ্যাইল্যান্ডে ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে যারা ধূমপান ত্যাগ করেছে তার মধ্যে ৬১.২% মূল্যবৃদ্ধির কারণে ধূমপান ত্যাগ করেছে। ২০০৮ সালে মেক্সিকোতে সিগারেটের দাম ১০% বৃদ্ধির প্রেেিত তামাক ব্যবহার ৬.৪% হ্রাস পায় ।

বাংলাদেশে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর উচ্চহারে কর বাড়ালে ধূমপায়ীদের ৬০.১% বলেছেন তামাক ব্যবহার হ্রাস করবে, ২৮.২% বলেছেন সম্পূর্ণ ত্যাগ করবে, ৫.২% অন্য সস্তা তামাক ব্যবহার করবে। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় তামাক ব্যবহার হ্রাসে আইনের পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের উপর প্রতিনিয়ত কর বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধি, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক
তামাক ব্যবহারকারী হ্রাস হবে বিধায় কোম্পানিগুলো তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধিকে ভয় পায়। বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলো নানা ধরনের বিভ্রান্তমূলক প্রচারণার মাধ্যমে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে থাকে। কর বৃদ্ধি হলে সরকারের রাজস্ব হ্রাস পাবে এটি তাদের বিভ্রান্তমূলক প্রচারণা। গবেষণা ও অভিজ্ঞতায় দেখা যায় তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির ফলে সরকারের রাজস্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। মেক্সিকোতে ২০০৮ সালে সিগারেটের দাম ১০% বৃদ্ধিতে সরকারের রাজস্ব ১৬% বৃদ্ধি পায় । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ গবেষণা ঞড়নধপপড় ঈড়হঃৎড়ষ রহ উবাবষড়ঢ়রহম ঈড়ঁহঃৎরবং এ দেখা যায়, তামাকের উপর ১০% কর বৃদ্ধিতে সরকারের রাজস্ব ৭% বৃদ্ধি পায়। ১৯৯১, ১৯৯৩ এবং ২০০৭ সাল পর্যন্ত থ্যাইল্যান্ড সরকার তামাকজাত দ্রব্যের উপর ৮ বার কর বৃদ্ধি করেছে। ফলে কর বৃদ্ধি ও এ কারণে সিগারেটের দাম বাড়ায় ধূমপানের হার ও ধূমপায়ীর সংখ্যা কমলেও থাই সরকারের রাজস্ব ব্যাপক হারে বেড়েছে। ৯৩ সালে থাই সরকারের রাজস্ব যেখানে ১৫,৩৮৫ মিলিয়ন বাথ ছিল, তা ২০০৭ সালে বেড়ে দাড়ায় ৪১,৫২৮ মিলিয়ন বাথ। থ্যাইল্যান্ড সরকার তামাক হতে প্রাপ্ত রাজসের একটি অংশ জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য ব্যয় করছে। উন্নয়ন সমন্বয় এবং ট্যোবাকো ফ্রি কিডস এর গবেষণায় দেখা যায় সিগারেটের উপর ৭৯% নির্ধারণ করা হলে এবং বিড়ির উপর ২৬% কর বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার ২০১০-২০১১ অর্থ বছরের সিগারেটে হতে ৯০৩ কোটি টাকা আয় করতে পারে, যা বর্তমান রাজস্বের ২০ শতাংশ এবং বিড়ি হতে ৬৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারে।

তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি বিকল্প কর্মসংস্থান সম্ভাবনা:
তামাকজাত শিল্প হতে লাভবান হয় কোম্পানির মালিক। তিগ্রস্ত হতে হয় তামাক চাষী, শ্রমিক এবং সেবনকারীদের। কোম্পানির মালিকের লাভের জন্য দরিদ্রতা, রোগ, অশিা, স্বাস্থ্যহানি এবং মৃত্যু এ সকল কিছুই জোটে জনগনের ভাগ্যে। তামাক কোম্পানিগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থ কোন অবস্থাই মানসম্মত নয় । তবু যখনই সরকারর বিড়ি-সিগারেটসহ সব তামাকের উপর কর বৃদ্ধির পদপে গ্রহণ করে তখনই কোম্পানিগুলো কর্মসংস্থান কমে যাবে বলে বিভ্রান্তকর প্রচারণা চালিয়ে নীতিনির্ধিারক, গণমাধ্যম কর্মীসহ সংশ্লিস্টদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে থাকে।

প্রথমেই একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন শুধুমাত্র কোম্পানির লাভের জন্য আমরা এদেশের জনগনকে কোন স্বাস্থ্যহানিকর কর্মকান্ডে নিয়োজিত রাখতে পারি না। আমরা অবশ্যই চাই না দরিদ্ররা তামাক ব্যবহার করুক। আমরা চাই দরিদ্ররা তাদের অর্থ মৌলিক প্রয়োজনে ব্যয় করুক। এজন্য তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নেই।

পাটের মতো একটি পরিবেশবান্ধব এবং অর্থকরী শিল্প যেখানে আমরা রা করতে পারিনি। নানা কারণে দেশের অনেক পাটকল বন্ধ হয়েছে। সেখানে কেন তামাক নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে পারবো না? তামাকজাত দ্রব্য হতে উচ্চ কর আদায় করে, সেই অর্থে পাটের মতো পরিবেশ বান্ধব শিল্পে বিনিয়োগ করা সম্ভব।

শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বেই তামাক কোম্পানিগুলো শ্রমিকের সংখ্যা ও কর্মসংস্থান এর বিষয়গুলো তুলে কর বৃদ্ধির বিরোধী করে থাকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরে‌্যা ২০০৭ প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ১৫ বছর ও তার উর্ধ্বে প্রায় ২,৬৬,৮১৮ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করে । অথচ কোম্পানিগুলো তার চেয়ে অনেক বেশি তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে আসছে।

বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ হলে ১৮.৭% চাকুরি বৃদ্ধি পাবে। উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণায় দেখা যায় বর্তমান ২০১০-২০১১ বাজেটের বিড়ির উপর ২৬% কর বৃদ্ধি করলে ৮৪৭ জন কাজ হারাবে । তামাক হতে আদায়কৃত করে মাধ্যমে এ সকল লোকের কর্মসংস্থানও সম্ভব।

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিবছরের বিড়ির পিছনে যে পরিমান টাকা (২৯১২ কোটি টাকা) খরচ হয় তা দিয়ে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে। এ গবেষণা অনুযায়ী বিড়ির বার্ষিক খরচ দিয়ে ৪৮৫ কোটি ডিম অথবা ২৯ কোটি ১ কেজি ওজনের মুরগী, অথবা ২৯ ল গরু অথবা ১৪ ল টন চাল অথবা ২৩ ল রিকশা কিনা সম্ভব । এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তামাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যহানিকর পেশায় রাখব, নাকি তাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বান্ধব কার্যক্রমের সৃষ্টি করবে।

তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মাধ্যমে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব সরকার প্রয়োজনে দরিদ্র লোকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় করতে পারে। প্রায়শই কোম্পানিগুলো অনেক টাকা রাজস্ব দেয়া বলে নিজেদের জাহির করতে চায়। আমাদের মনে রাখা দরকার, কোম্পানিগুলো মূলত সংগৃহীত ভ্যাট রাজস্ব খাতে জমা দেয়, ভ্যাট পুরোটা জনগনের টাকা। মাত্র ১৫% ভ্যাটের টাকা রাজস্ব খাতে দিয়ে, সরকারের উপর রোগ ও অসুস্থ্যতার বোঝা চাপিয়ে কি পরিমান অর্থ লাভ হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। আমরা আশা করি জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্মত কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে বাজেটে সরকার সকল ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির পদপে গ্রহণ করবে।

৫.খাদ্যের জমিতে, তামাক চাষ- আমাদের শংকা:
বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে কৃষি জমির পরিমান এমনিতেই কম। দেশের মানুষের জন্য খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ২০০৮-০৯ সালে বাংলাদেশে ৩২৯৭০একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল। ২০০৯-২০১০ সালে তামাক কোম্পানিগুলোর প্রলুব্ধকর প্রচারণার কারণে তামাক ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এ বছর প্রায় ১,০১,২৭০ একর এলাকায় তামাক চাষ হয় । বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় তামাক চাষ ও তামাক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোন প্রকার আর্থিক সাহায্য না করার জন্য দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক-কে নির্দেশনা জারি করে। সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী তামাক চাষের জন্য সকল ধরনের ভতুর্কী বন্ধের ঘোষণা করেছেন। তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক এর এই নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

অধিক জনসংখ্যার সীমিত ভুখন্ডের এ দেশ। খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। পাশাপাশি তামাক চাষ দরিদ্রতা ও অপুষ্টি বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তামাক পাতা শুকানোর জন্য প্রতিবছর দেশের বনাঞ্চল ধবংস হয়ে যাচ্ছে, বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। তামাক চাষের সময়ে স্কুলে বাচ্চাদের উপস্থিতির হার কমে যায় । তামাক প্রক্রিয়াজত করণের সাথে বেশিরভাগ েেত্র নারী ও শিশুরা জড়িত। তামাক চাষ অনেক শ্রমের প্রয়োজন ও কঠিন কাজ। তামাক ফলে নারী ও শিশুরা বিভিন্ন শারিরীক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে । তামাক চাষের জন্য পরিবারের প্রতিটি লোকজনকে শ্রম দিতে হয়। কিন্তু হিসেবে এ শ্রমকে আনা হয় না। তামাক চাষে যে শ্রম দিতে হয় তা যোগ করলে তামাক চাষ কোনভাবেই লাভজনক হয় না ।

তামাক চাষের সঙ্গে সম্পৃক্তদের হাঁপানিসহ শ্বাস ও চর্মজনিত রোগের বিস্তার ল্য করা যায়। এছাড়া মারাত্মক বার্জাজ ডিজিজ এর মত ভয়াবহ রোগও ল করা যাচ্ছে। তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায় এবং ১০ বছর পর সে জমি সম্পূর্ণভাবে চাষ অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর কার্যক্রম দরকার। এ অবস্থার প্রেেিত আমাদের ভাবতে হবে মানুষের জন্য খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো, না স্বাস্থ্যহানিকর তামাক চাষ করবো?

পরিশিষ্ট:
তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয শতভাগ ধূমপানমুক্ত স্থান, বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, প্যাকেটের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানীর, সচেতনতার পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি একটি কার্যকর উপায় বলে স্বীকৃত। কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণের এ পদপে গ্রহণ করতে গেলে একটি শ্রেণী কর্মসংস্থান হ্রাস হবে, রাজস্ব কমে যাবে, দরিদ্র মানুষ তিগ্রস্ত হবে বলে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে থাকে। কিছু রাজস্ব পাব বলেই কি আমরা মানুষের রোগ ও মৃত্যুঘাতী পন্যকে উৎসাহিত করবো কিনা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। মানবিকতা, সংবিধান জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি কোন দিক থেকেই তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকে উৎসাহিত করা সম্ভব নয়। তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং সংশোধনে যে ধরনের সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির েেত্র অনুকরণীয় ও দৃষ্টান্তমূলক পদপে গ্রহণ করা প্রয়োজন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন