শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১১

বিকল্প কর্মসংস্থান ও রোগের চিকিৎসা খরচ তামাকজাত দ্রব্য হতে আদায় করতে হবে

বিকল্প কর্মসংস্থান ও রোগের চিকিৎসা খরচ
তামাকজাত দ্রব্য হতে আদায় করতে হবে
সৈয়দ মাহবুবুল আলম, নীতি বিশ্লেষক


রোগ ও মৃত্যু রোধ করা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের ল্েয মানুষের রোগ ও মৃত্যু হ্রাসে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করছে। সড়ক ও রেল দুঘর্টনা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা অন্য ঘটনায় কোন কারণে এক সঙ্গে কিছু মানুষের মৃত্যু হলে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়। সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এ মৃত্যু রোধে নানামুখি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবি জানায়। অথচ তামাক ব্যবহারের প্রত্য ফল হিসেবে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৭,০০০ জন মৃত্যুবরণ এবং ৩৮২,০০০ লোক পঙ্গুত্ব বরণ করলেও এ বিষয়ে কার্যকর পদপে করা হয়নি। বরং এ ল্েয গৃহীত বিভিন্ন পদপেগুলোকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।

তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয শতভাগ ধূমপানমুক্ত স্থান, বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, প্যাকেটের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানীর, সচেতনতার পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি একটি কার্যকর উপায় বলে স্বীকৃত। কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণের এ পদপে গ্রহণ করতে গেলে একটি শ্রেণী কর্মসংস্থান হ্রাস হবে, রাজস্ব কমে যাবে, দরিদ্র মানুষ তিগ্রস্ত হবে বলে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে থাকে। প্রথমত প্রশ্ন হচ্ছে অর্থ বা রাজস্ব পাব বলেই কি আমরা মানুষের রোগ ও মৃত্যুঘাতী পন্যকে উৎসাহিত করবো কিনা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। মানবিকতা, সংবিধান ইত্যাদি কোন দিন থেকেই তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকে উৎসাহিত করা সম্ভব নয়।

তামাক চাষ ও উৎপাদনের লাভবান হয় কোম্পানির মালিক। তিগ্রস্ত হয় চাষী, শ্রমিক ও ব্যবহারী। অথচ চাষী, শ্রমিক ও ব্যবহারীকারীদের দোহাই দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণের বিরোধীতা করা হয়। তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্তর্জাতিক চুক্তি এফসিটিসি অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের উপর বৃদ্ধির ল্েয সরকার পদপে গ্রহণ করা প্রয়োজন। অথচ বিগত কয়েক বছরে তামাকজাত দ্রব্যের উপর মুদ্রাস্ফীতি অনুসারে কর বৃদ্ধির কোন পদপে গ্রহণ করা হয়নি। বরং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সস্তায় তামাকজাত দ্রব্য প্রাপ্তির প্রেেিত তামাক ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত বছরে সরকার তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি পদপে গ্রহণ করলেও কোম্পানিগুলোর ভ্রান্ত প্রচারণার কারণে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি।

তামাক এর অনেকগুলো তিকর দিকের মধ্যে তামাক চাষ অন্যতম। কৃষি জমিতে তামাক চাষ ও তামাক পাতা পোড়ানোর জন্য গাছ কেটে বনাঞ্চল ধ্বংস করায় খাদ্য ঘাটতি তৈরী হচ্ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এ বছর বাংলাদেশে তামাক চাষ আংশকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিক জনসংখ্যার সীমিত ভুখন্ডের এ দেশ। খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে।

তামাক ব্যবহার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলছে। গবেষণায় দেখা যায় তামাকের পিছনে ব্যয়কৃত অর্থের ৬৯% খাদ্যের পিছনে ব্যায় করা হলে ৫০% শিশুকে অপুষ্টি থেকে বাচাঁনো সম্ভব। এছাড়া তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির ফলে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাস করে এবং তামাক কোম্পানির নতুন ধূমপায়ী (বিশেষ করে যুবক এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে) তৈরিতে বাধাগ্রস্ত করে।

তামাক কোম্পানিগুলো কর বৃদ্ধি হলে রাজস্ব এবং কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে বলে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, কর বৃদ্ধি হলে তামাক ব্যবহার হ্রাস পেলেও দাম বৃদ্ধির প্রেেিত সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ হলে ১৮.৭% চাকুরি বৃদ্ধি পাবে। তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মাধ্যমে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব সরকার প্রয়োজনে দরিদ্র লোকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় করতে পারে। তামাককের উপর কর বৃদ্ধির ফলে সরকার তিনভাবে লাভবান হবে, প্রথমত রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে, দ্বিতীয়ত জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন হবে, তৃতীয় তামাক হতে রাজস্বের আদায়কৃত রাজস্ব তামাক শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানে ব্যয় করা সম্ভব হবে।

প্রায়শই কোম্পানিগুলো অনেক টাকা রাজস্ব দেয়া বলে নিজেদের জাহির করতে চায়। আমাদের একটি কথা স্মরণ রাখা প্রয়োজন কোম্পানিগুলো মূলত সংগৃহীত ভ্যাট রাজস্ব খাতে জমা দেয়, ভ্যাট পুরোটা জনগনের টাকা। মাত্র ১৫% ভ্যাটের টাকা রাজস্ব খাতে দিয়ে, সরকারের উপর রোগ ও অসুস্থ্যতার বোঝা চাপিয়ে কি পরিমান অর্থ লাভ হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়।

তামাক চাষ ও উৎপাদনে প্রেেিত কোম্পানির মালিক, কর্মকর্তাগণ লাভবান হলেও, তিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ ব্যবহারকারী, চাষী ও শ্রমিক আর এ সকল দিক বিবেচনায় এ সকল তিপুরণ কোম্পানি হতেই আদায় করা প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্মত কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা অগ্রাধিকার দিয়ে এ বাজেটে সরকার সকল ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির পদপে গ্রহণ করবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন