সোমবার, ১৪ জুন, ২০১০

জলবায়ু বিপর্যয় রোধে ইকো নগরয়ায়ন ও আমাদের করনীয়।

পরিবেশ দূষণের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে মানব সভ্যতা। ক্ষতিগ্রসত্দ হচ্ছে অর্থনীতি, উন্নয়ন, মানুষের বিকাশ। নগরায়ন ও শিল্পায়ন পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রদান কারণ। কিন্তু এ সত্য জানার পরও থেমে নেই পরিবেশ দূষণের মাত্রা। দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশালী জীবন যাপন আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের আজব লক্ষ্যে জিডিপি বৃদ্ধির উম্মদনায় ধ্বংস করা হচ্ছে পরিবেশ, মানবতা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি। গুটি কয়েক ব্যক্তির বা সংস্থার সম্পত্তির বৃহৎ সম্পদের পাহাড়ের গড় হিসাবের অর্থনীতির মারপ্যাচে হয়ত জিডিপির অংক বৃদ্ধি পেলেও, অন্যান্য সমস্যাগুলোর সাথে বাড়ছে দারিদ্র মানুষের ভোগানত্দি আর বিনষ্ট হচ্ছে সামাজিক সমপ্রতি। ধনী আরো ধনী হচ্ছে, গরীব আরো গবীর হচ্ছে। নগরগুলো হচ্ছে শোষনের আবাসস্থল। অধিকাংশ মানুষের সুবিধাকে ছিনিয়ে উন্নয়নে নামে করা হচ্ছে নগরায়ন।

শত বছরের পুরাতন এই ঢাকা নগরীতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করার পরও বিজ্ঞজনের আশংকা এই নগরী দ্রুত মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এই নগরীর পরিবেশ দূষণ, যানজট, স্বাস্থ্য, পানি, শিক্ষা, যোগাযোগ কোন বিষয়েই পরিবেশবান্ধব হয়নি। বরং দিন দিন খারাপ হচ্ছে। অথচ একদিন এই শহরই ছিল একটি আর্দশ নগরী। কিভাবে ধ্বংস করা হলো সেই পরিবেশবান্ধব নগরীকে, কেন করা হলো? কেন সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে? আমাদের পরিকল্পনা মৌলিকতা কি কোন ভূল আছে? না এ প্রশ্ন খোজার চেষ্টা হয়নি। বরং একটি ভুলকে ঢাকতে আরো একটি ভূল করা হচ্ছে। সবচেয়ে ভয়কর বিষয় হচ্ছে ঢাকা নগরীর পরিকল্পনাগুলো দেশের অন্য এলাকাগুলোতেও করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিগত দিনের ভুলগুলো হতে শিক্ষা নিয়ে পরিবেশ, অর্থনীতি ও মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় একটি পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ার আজ আর কোন বিকল্প নেই।

উন্নত জীবনের সন্ধানে এই নগরে ছুটে আসলেও, এ নগর মানুষের উন্নত জীবনের অনত্দরায়। জীবন ধারনের অন্যতম প্রধান উৎপাদন মাটি, পানি, বায়ু দূষণ কারণের মানুষ বিভিন্ন প্রানঘাতী রোগে আক্রানত্দ হচ্ছে। নগরের যাতায়াত ও অবকাঠামোর প্রতিবন্ধকতার কারণে হ্রদরোগ, স্ট্রোক, ডায়বেটিক অতিরিক্ত মোটা হওয়াসহ নানা ধরনের অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। খেলাধুলা ও পর্যাপ্ত বিনোদনের অভাবের কারণে শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শারিরীক বিকাশ বাধাগ্রসত্দ হচ্ছে।

একটি শহরের পরিকল্পনা নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবন এবং কার্যক্রমকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। নগর পরিকল্পনা হওয়া প্রয়োজন মানুষের কথা মাথায় রেখে। একটি সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত নগরী দক্ষ মানবগোষ্ঠী গড়ে তুলতে সহায়ক। গণমুখী টেকসই সমন্বিত নগর পলিল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান যেমন উন্নত হবে, তেমনি একটি আনত্দরিক, পরিবেশবান্ধব বসবাস উপযোগী শহর গড়ে তোলা সম্ভব।

আমাদের শহরগুলো হওয়া উচিত এইরূপ_যেখানে বাসস্থানের পাশাপশি প্রচুর গাছপালা থাকবে, প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে না, শিশুরা ঘরের বাইরে নিরাপদে খেলাধূলার পরিবেশ পাবে, নগরবাসী পাবে একটি সুস্থ বিনোদনের পরিবেশ, প্রতিবেশীদের মধ্যে থাকবে আন্তরিক সম্পর্ক, প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগানের জন্য বাসস্থানের কাছাকাছি পযর্াপ্ত কৃষি জমি থাকবে। যেখানে নগরের গতানুগতিক যান্ত্রিকতা এড়িয়ে আনত্দরিকতাপূর্ণ সুন্দর জীবন উপভোগ করা সম্ভব হবে। বর্তমানে সারা বিশ্বব্যপী জলবায়ু বিপর্যয় ব্যপক প্রভাব পড়ছে। জলবায়ু বিপর্যয় রোধে ইকো নগরায়ন অত্যনত্দ কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।

একটি পরিবেশবান্ধব নগরের জন্য অনেকগুলো বিষয়ে মধ্যে বিনোদন, উম্মুক্ত স্থান, আবাসন, যাতায়াত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ পর্যায়ের আলোচনায় একটি শহরের এ বিষয়গুলো কিভাবে নিশ্চিত করা যায় তা সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

পরিবেশবান্ধব নগরীর আবাসন ব্যবস্থা
নগর পরিকল্পনায় সর্বপ্রথম আমাদের মনে রাখতে হবে নগর তৈরীর উদ্দেশ্য। একটি শহর গড়ে ওঠে মানুষকে উন্নত কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, বিনোদনের সুযোগ প্রদান এবং মানুষের পাস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির মিলনকেন্দ্র হিসাবে। এই সমস্ত সুবিধাগুলো মানুষের হাতের নাগালের মধ্যেই থাকা উচিত।

নগরের আবাসন সংস্থান করতে গিয়েও আমরা মানুষের কল্যাণের দিকটি চরমভাবে উপেক্ষা করছি। নগরের মধ্যে এবং শহরের নিকটবর্তী স্থানে বিভিন্ন আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্লট ভিত্তিক উন্নয়ন করায় মানুষের মধ্যে পারষ্পরিক যোগাযোগের সুযোগ কমে যাচ্ছে। এ ধরনের আবাসিক এলাকায় কাছাকাছি বাজার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান, অফিস না থাকায় দূরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে এছাড়া বিনোদনের সুবিধা ও মানুষের মেলামেশার জন্য উন্মূক্তস্থান না থাকায় পারস্পরিক যোগাযোগ ব্যহত হয় । একইভাবে এপার্টমেন্ট ভিত্তিক যে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠছে তাতেও মানুষের সাথে মানুষের সামাজিক যোগাযোগের সুযোগ রাখা হচ্ছে না। ফলে আগে আমাদের এলাকা ভিত্তিক যে আন্তরিক পরিবেশ ছিল তা ক্রমেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষের সাথে মানুষের দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে যা সমাজের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ।

সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নগর ও পরিবহণ পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রযোজন। নগর পরিচালনার সুবিধার্থে এলাকা ভাগ করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে মিশ্র এলাকা অথবা পৃথক এলাকা কোনটি হবে তার উপর নির্ভর করে পরিবহণ ব্যবস্থা কেমন হবে। এলাকায় বাসা, স্কুল, বাজার, কর্মস্থল, হাসপাতাল ও বিনোদন অল্প দূরত্বের মধ্যে থাকায় যাতায়াতের চাহিদা হ্রাস করে। মিশ্র এলাকা নির্মাণে কিছু বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। সেটি হচ্ছে মিশ্র এলাকায় কি কি থাকবে এবং কি কি থাকবে না। এছাড়া মিশ্র উন্নয়নের জন্য নির্ধারিত এলাকায় কাঙ্খিত জনসংখ্যা অনুপাতে প্রতিষ্ঠান ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। যেন কম বা বেশি কোনটিই না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এভাবে প্রতিটি এলাকায় প্রয়োজন অনুসারে উন্নয়নের মাধ্যমে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাতায়াতের চাহিদা বেশিরভাগই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্লান (১৯৯৫-২০১৫) এর অধীনে স্ট্রাকচার প্লান এ মিশ্র এলাকা নির্মাণের দিক-নির্দেশনা রয়েছে। সেই আলোকেই ডিটেইল এরিয়া (ডিএপি) প্লান তৈরি করার নিয়ম। কিন্তু খসড়া ডিএপি-এ কার্যক্রমের ভিত্তিতে পৃথক এলাকা নির্মাণের প্রসত্দাব করা হয়েছে। স্ট্রাকচার প্লান অনুসারে ডিএপি প্রণীত হলে ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য রাখতে সহায়ক হবে। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়মানুসারে স্ট্রাকচার প্লান মেনে এবং যাতায়াত চাহিদা হ্রাস করতে ডিএপি-তে মিশ্র গড়ে তোলার প্রতি মনযোগী হবেন।

নগরীর পরিবহন ব্যবস্থা
যানজট শুধু ঢাকা নয়, বিশ্বের অনেক শহরেরই দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে ইতিপূর্বে অনেক পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়েছে, যার কোনটির সঙ্গে কোনটির সমন্বয় করা হয়নি। ফলে কাঙ্খিত সমাধান আসেনি। যানজট নিয়ন্ত্রণ ও একটি সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা জরুরী। বর্তমানে পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ লক্ষ্যণীয়। তবে সেগুলি বাসত্দবায়নের পূর্বে দেশীয় এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আরো ভালোভাবে যাচাই বাছাই করা প্রয়োজন। ঢাকা'র চলমান পদক্ষেপসমূহ বাসত্দবায়নের আগে ইতিপূর্বে বাসত্দবায়িত কার্যক্রমের ফলাফল বিশ্লেষন করা প্রয়োজন। এসবের সঙ্গে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে বাসত্দবমূখী ভাবনা যানজট নিয়ন্ত্রণ তথা পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

মানুষ বনাম গাড়িকেন্দ্রিক পরিবহণ পরিকল্পনা:
ঢাকায় এ পর্যনত্দ গাড়িকে কেন্দ্র করেই পরিবহণ নীতিমালা ও পরিকল্পনাসমূহ তৈরি হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে দেখা হয় একটি সড়কে কি পরিমাণ গাড়ি ধারণ করতে পারে অথবা সড়কটি দিয়ে কতগুলি গাড়ি অতিক্রম করতে পারবে। এর উপর ভিত্তি করেই কত বিনিয়োগ এবং কি ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধানত্দ নেওয়া হয়। মানুষের যাতায়াতের প্রয়োজনে গাড়ির প্রয়োজন রয়েছে। এখানে গাড়িই মূখ্য নয়।

পরিবহণ পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মানুষ। মানুষের যাতায়াতের প্রয়োজনে কোন ধরনের বাহন কি পরিমাণ ব্যবহার করা হবে সেটি পরের বিষয়। প্রথমে দেখতে কি পরিমাণ মানুষের যাতায়াতের প্রয়োজন রয়েছে। যাতায়াতের দূরত্ব কতটুকু এবং কোন মাধ্যমটি সবচেয়ে উপযোগী। উপযোগীতা নিরূপণে যাতায়াত খরচ, সময়, নিরাপত্তা, দূষণ ও জ্বালানী ব্যবহারের মতো বিষয়গুলি বিবেচনায় নিতে হবে। গাড়িকেন্দ্রিক পরিকল্পনায় হেঁটে ও জ্বালানীমুক্ত যানে চলাচলকারীরা অবহেলিত থেকে যায় এবং নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মূখীন হয়।

ঢাকা'র পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়নে চলমান পরিকল্পনা ও পদক্ষেপসমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতিনিয়ত প্রাইভেট কারকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এরপর ক্রমানুসারে বাস, রিকশা ও সাইকেল এবং হেঁটে চলাচলকারীরা সকল দিক থেকেই অবহেলা ও নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার । অথচ এই ধরনের ব্যবস্থা থেকে সাময়িক সুবিধা পাচ্ছে দুই শতাংশ মানুষ যাদের প্রাইভেট কারের মালিকানা রয়েছে। এখানে সাময়িক সুবিধা এই অর্থে বলা হচ্ছে এই কারণে যে, আর অল্প কিছু সংখ্যক প্রাইভেট কার বৃদ্ধি পেলে বর্তমানকার সুবিধাও থাকবে না। যে সুবিধা তৈরি করা হয়েছে জ্বালানীমুক্ত যান চলাচল নিষিদ্ধ করে এবং হেঁটে ও পাবলিক পরিবহণকে উপেক্ষা করে। ফলশ্রতিতে আটানব্বই শতাংশ মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে অধিকার বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে।

পরিবহণ পরিকল্পনায় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। বিশ্বব্যাপী নগর পরিবহণ ব্যবস্থায় হেঁটে চলাচলকারীদের প্রাধান্য সর্বাগ্রে । ঢাকায় বেশিরভাগ পায়ে হেঁটে যাতায়াত হয়ে থাকে। আরো বেশি মানুষকে হেঁটে চলাচলে উৎসাহী করতে উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে সঠিক পরিকল্পনা, বিনিয়োগ এবং অতিদ্রুত তা বাসত্দবায়নে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এরপর ক্রমানুসারে জ্বালানীমুক্ত যান ও পাবলিক পরিবহণের সুবিধা বৃদ্ধি এবং প্রাইভেট কারের অবস্থান থাকবে সবার শেষে। বর্তমানে ঢাকার বেলায়ও একই কথা বলা হচ্ছে। তবে তা এখন পর্যনত্দ কথাবার্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এ ক্রমটি বিনিয়োগ ও পরিকল্পনার ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা হলে গণমূখী পরিবহণ ব্যবস্থা চালুর পথটি সুগম হবে।

গণমুখী সমন্বিত পরিবহন পরিকল্পনা
আমাদের নগর পরিকল্পনায় পরিবহন ব্যবস্থা এবং তার সাথে সম্পৃক্ত আন্যান্য বিষয়গুলোকে বিবেচনা করা প্রয়োজন। আমাদের মনে রাখতে হবে মানুষের মূল উদ্দেশ্য যাতায়াত নয় বরং দ্রব্য এবং সেবা প্রাপ্তি। আমাদের পরিবহন পরিকল্পনার মূল সমস্যা এখানেই যে যাতায়াত উদ্দেশ্য বিবেচনা না করেই পরিকল্পনা করা হয়। মানুষ যদি তার প্রয়োজনীয় জিনিষগুলো হাতের কাছেই পেয়ে যায় তাহলে তার দূরে যাবার প্রয়োজন হয়না। শহরের অবকাঠমো এমনভাবে তৈরী করা প্রয়োজন যার ফলে মানুষের দূরে যাবার প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে হ্রাস পায়।

এখন পর্যনত্দ আমাদের শহরগুলোতে কাছাকাছি বাজার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান, কর্মসংস্থান, বিনোদনের সুবিধা অধিকাংশ যাতায়াতই হয়ে থাকে স্বল্প দূরত্বে। আর এর জন্য হেঁটে চলা বা অযান্ত্রিক যানের ব্যবহার হয়ে থাকে সবচেয়ে বেশী । কিন্তু আমাদের নগরের পরিবহন পরিকল্পনাগুলো কখনই এই সকল গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যমকে যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। একই সাথে নগরের ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা এবং পরিবহন পরিকল্পনার মধ্যে যে ওতোপ্রোত সম্পর্ক বিদ্যমান তাও কখনও তেমন ভাবে অনুধাবন করা হয়নি।

সড়ক অবকাঠামো ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রাইভেট কারের বৃদ্ধি এবং তার প্রভাব:
ঢাকা শহরে সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কিছু সংযোগ সড়কের প্রয়োজন রয়েছে। তবে আগে দেখতে বিদ্যমান সড়ক অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা নিরসন করা যায় কি না। এসটিপি'র সুপারিশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের দিক নির্দেশনা রয়েছে। যা বাসত্দবায়নের পূর্বে এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভালোভাবে সমীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। কেউ কেউ বলে থাকেন একটি শহরে সড়কের জন্য ২৫ % জায়গা প্রয়োজন। ঢাকা শহরে সড়কের পরিমাণ ৮% হওয়ায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এই কথার যথার্থতা কতটুকু? মূলত প্রাইভেট কার নির্ভর পরিবহণ ব্যবস্থায় বেশি বেশি সড়কের প্রয়োজন পড়ে। উন্নয়নশীল এশিয়ান দেশগুলির তুলনায় আমেরিকান শহরগুলিতে প্রাইভেট গাড়ি নির্ভর যাতায়াত ব্যবস্থা হওয়ায় সড়কের পরিমাণ মাথাপিছু ১০ গুন বেশি হলেও যানজট অনেক বেশি । ৩৩% সড়ক হওয়ার পরও লসএঞ্জেলস বিশ্বের মধ্যে অন্যতম যানজটপূর্ণ শহর।

এশিয়ান শহরগুলির তুলনায় আমেরিকান শহরগুলিতে পরিবহণ খাতে জ্বালনী ব্যবহারের পরিমাণ মাথাপিছু ৮ গুণের বেশি। এছাড়া পরিবহণ থেকে কার্বণ উৎপাদনের পরিমাণ মাথাপিছু প্রায় সাড়ে ৫ গুন । আমেরিকান শহরগুলিই বিশ্বে যানজটপূর্ণ শহরগুলির শীর্ষে অবস্থান করছে। ২০০৯ সালে টেঙ্াস ট্রান্সপোর্টেশন ইন্সটিটিউট এর আরবান মবিলিটি রিপোর্টে দেখা যায়, লস এঞ্জেলসে যানজটের কারণে ৪৮,৫০,২২,০০০ কর্মঘন্টা নষ্ট হয়, অতিরিক্ত জ্বালানী ব্যয় হয় ৩৬,৬৯,৬৯,০০০ গ্যালন। এর জন্য সর্বমোট প্রায় ১০,৩২৮ মিলিয়ন ডলার অপচয় হয় ।

ঢাকায় যানজটের কারণে বছরে সর্বমোট প্রায় ৭৭১ মিলিয়ন ডলার অপচয় হয়। আমরা অবশ্যই এই সমস্যা থেকে উত্তরণ চাই। তবে সমাধান হিসেবে বেশি বেশি সড়ক ও এলিভেটেড এঙ্প্রেসেওয়ের মতো অবকাঠামো নির্মান করলে উল্টো খেসারত দিতে হবে। যা আমেরিকান শহরগুলির দিকে তাকালে পরিলক্ষিত হয়। ঢাকায় ভূমির পরিমাণ খুবই সীমিত জনসংখ্যা অনেক বেশি। এখানে পরিবহণ ব্যবস্থায় প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি পাবলিক পরিবহণ, পথচারী, সাইকেল ও রিকশাকে প্রাধান্য প্রয়োজন। যা যানজট নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে দূষণ, জ্বালানীর ব্যবহার, দূর্ঘটনা, অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় ও যাতায়াত খরচ কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

পাবলিক বাস এর সঙ্গে পথচারী ও জ্বালানীমুক্ত যানের সমন্বয় :
পরিবহণ ব্যবস্থায় মাধ্যমগুলির ক্রমনির্ধারণ করার পাশাপাশি এর মধ্যে সঠিকভাবে সমন্বয় করা প্রয়োজন। যেমন-মানুষকে বাসে চলাচলে উৎসাহী করতে সেবামান বাড়ানো এবং এর সঙ্গে অন্যান্য মাধ্যমের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। বাসা থেকে বাস স্টপেজে যাওয়ার জন্য সুবিধাজনকভাবে হেঁটে, সাইকেল ও রিকশায় চলাচলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। একইভাবে বাসস্টপেজ থেকে নেমে কর্মস্থলে পেঁৗছানোর জন্য ব্যবহৃত মাধ্যমের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

ঢাকা শহরে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) চালুর প্রসত্দাব রয়েছে। কারো কারো মতে ঢাকায় বিআরটি চালুর জন্য সড়কের পরিমাণ অপ্রতুল। বিআরটি হচ্ছে বিশেষ বাস সার্ভিস। এই ব্যবস্থায় বাসের জন্য পৃথক লেন থাকবে। এর একটি হচ্ছে একেবারে ডিভাইডার দিয়ে লেন আলাদা করা থাকবে। অন্য কোন বাহন এই লেনে ঢুকে বাস চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারবে না। যেখানে শুধুমাত্র জরুরী বাহন যেমন-এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস এর গাড়ি এবং পুলিশ ভ্যান ঢুকতে পারবে। বিআরটি লেন ডিভাইডার ছাড়াও হয়। শুধুমাত্র দাগ দিয়ে বাসের জন্য লেন বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে বিআরটি এর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে ডিভাইডার দিয়ে পৃথক লেন তৈরি করা প্রয়োজন। এসটিপি গবেষণায় দেখানো হয়েছে কিভাবে ঢাকা শহরে আট মিটার থেকে শুরু করে চলি্লশ মিটার প্রস্থের সড়কে বিআরটি করা যাবে। কত মিটার সড়কে বাসের সঙ্গে কোন কোন মাধ্যমের সমন্বয় করা হবে তা সুনির্দ্দিষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। বিআরটি সঠিকভাবে করা না হলে হীতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ব্যবস্থায় বাসের সঙ্গে পথচারী সাইকেল এবং রিকশার সমন্বয় এর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি প্রাইভেট কারকে যতটা সম্ভব নিরুৎসাহিত করতে হবে। ঢাকার প্রেক্ষাপটে খুব সহজেই এই কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব।

আমেরিকার শহরগুলির তুলনায় উন্নয়নশীল এশিয়ান শহরগুলিতে পাবলিক পরিবহণ, হেঁটে ও জ্বালানীমুক্ত যানে অনেক বেশি চলাচল হয়ে থাকে। যে কারণে জ্বালানীর ব্যবহার এবং দূষণ তুলনামূলক অনেক কম। ঢাকায় একই অবস্থা বিদ্যমান। তবে এই সকল মাধ্যমের সমন্বয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী।

বিকেন্দ্রীকরণ
রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকা মহানগরীর গুরুত্ব অবশ্যই অনেক বেশি। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও তার সুফল সর্বত্র সুষম বন্টনের লক্ষ্যে অন্যান্য শহরগুলির উন্নয়ন জরুরী। কিন্তু দেশে সব কিছুই ঢাকার মধ্যে পুঞ্জীভূত করা হচ্ছে। প্রশাসনিক-নিরাপত্তা কর্মকান্ড থেকে ব্যাবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবা, অফিস আদালত সব কিছুই ঢাকাকে কেন্দ্র করে। তাই চাকরি, ব্যবসা, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা, পরিবারের সুচিকিৎসা, বিনোদন এসব কিছুর আশায় মানুষ আজ ঢাকামূখী। তাছাড়া দেশে যে কোন দূর্যোগে সর্বহারা মানুষ দু-মুঠো ভাত পাবার আশায় কাজের জন্য ছুটে আসছে ঢাকা শহরে । এই অতিরিক্ত মানুষের চাপে ঢাকার জনজীবনে নানা সঙ্কট বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধীরে ধীরে লোপ পেতে বসেছে মানুষের সকল সুযোগ-সুবিধা। কোন কোন ক্ষেত্রে পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দূর্ভোগ। ঢাকা শহরের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা শহরের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অন্যান্য শহরগুলির উন্নয়নে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বিনোদন ও উম্মুক্ত স্থান
শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সুবিধা প্রদান এবং নগরবাসীর সুস্থ সুন্দর বিনোদনের জন্য শহরগুলোতে পর্যাপ্ত বিনোদনকেন্দ্র, পার্ক, খেলার মাঠ প্রয়োজন। দিনে দিনে ঢাকা সহ ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে মানুষের বাইরে উন্মুক্তস্থানে বিনোদন বা সামাজিক কার্যক্রমগুলোর পরিধি ক্রমশই সংকুচিত হচ্ছে। পরিকল্পনায় ঘাটতি কিংবা সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিনিয়তই মানুষকে এর উন্নয়ন কিংবা সুবিধা বৃদ্ধির জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। পরিকল্পনার দৈন্যতার কারণে মানুষ তার এই মৌলিক সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। খেলার মাঠ, পার্ক কিংবা উদ্যানের সল্পতা কিংবা আবাসিক এলাকায় প্রকৃতির অনুপস্থিতি ক্রমশই মানুষকে গৃহকেন্দ্রিক কিংবা টেলিভিশন নির্ভর করে তুলছে। ফুটপাতে হাঁটার পরিবেশের অভাব কিংবা মাঠে খেলাধুলার পরিবেশের অভাবও প্রকট আকারে পরিলক্ষিত হয়। শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক কিংবা বৃদ্ধ বিবেচনায় উন্মুক্তস্থানের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা আবশ্যক। নগর পরিকল্পনা পুরো অবকাঠামোর সাথে সমন্বয় রেখে, পরিকল্পিতভাবে জনসাধারনের জন্য গুনগতমান সম্পন্ন পর্যাপ্ত বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট
নগর মানেই শুধু ইট, কাঠ, পাথরের বসতি বা যান্ত্রিকতা নয়। বহুমানুষের মিলনকেন্দ্রই হচ্ছে নগর। একটি নগরীর গড়ে ওঠা নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। একটি সুষ্ঠু সুন্দর পরিকল্পিত নগরী, দক্ষ মানবগোষ্ঠী গড়ে তুলতে সহায়ক। পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হোক এটি আমাদের সকলেরই কাম্য।

ধূমপান ও তামাক ব্যবহারের দৃশ্য বন্ধ করা হোক

নাটক, সিনেমা ও প্রচার মাধ্যমে
ধূমপান ও তামাক ব্যবহারের দৃশ্য বন্ধ করা হোক

সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আইন প্রণয়ন করছে। এই আইনে বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হওয়ার কারনে প্রিন্ট ও মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন বন্ধ রয়েছে। জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

কিন্তু আইনে নাটক সিনামাতে তামাক ব্যবহারে কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকার কারনে নাটক সিনেমাতে অবাধে চলছে ধূমপান ব্যবহারের দৃশ্য। তারকাদের ধূমপান ব্যবহারের দৃশ্য যুব/তরুণ সমাজকে ধূমপানে আশক্ত হওয়ার প্রবনতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তামাক ব্যবহার হ্রাস। কিন্তু নাটক সিনেমায় প্রলুব্ধকরভাবে ধূমপানের দৃশ্য প্রর্দশনের কারণে তরুণ/তরুণীদের মাঝে ধূমপানের ব্যবহার বাড়ছে। তামাক ব্যবহার হতে যুব সমাজকে বিরত রাখতে ধূমপানের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।

নাটক সিনেমা ও প্রচার মাধ্যমে ধূমপানের দৃশ্য বন্ধে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। এই লক্ষ্যে ইউ এস ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছ। এরই ধারাবাহিকতায় তারা কোন চলচিত্রের শুরতে ধূমপান বিরোধী সতর্কবানী প্রচার এবং চলচিত্রে তামাক সংক্রানত্দ কোন দ্রব্যাদি ব্যবহারে কোন অর্থনৈতিক সহযোগীতা পাননি তা চলচিত্রের শেষে স্বীকারোক্ত মূলকভাবে লেখা থাকার সিদ্ধানত্দ গ্রহণ করেছে। তাছাড়া প্রথিবীর বিভিন্ন দেশেও নাটক সিনেমাতে তামাকের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

১. আমেরিকার এক গবেষনায় দেখা গেছে যারা চলচিত্রে ১৫০ বারের বেশী ধূমপানের দৃশ্য দেখে তাদের মধ্যে ৩১% কিশোর ধূমাপান ব্যবহার শুরু করে আর যারা ৫০ বারের কম চলচিত্রে ধূমপান ব্যবহারের দৃশ্য দেখে তাদের মধ্যে ৪% কিশোর ধূমপান শুরু করে।

২. আমেরিকার অপর এক গবেষনায় দেখা গেছে শিশুদের চলচিত্রে প্রিয় অভিনেতার ধূমপানের দৃশ্য তাদের ধূমপানে অসক্তি অন্যন্য শিশুদের তুলনায় ১৬ গুন বেশী বাড়িয়ে দেয়।
৩. ১৯৮৮-১৯৯৭ সালে হলিউডের ২৫টি বঙ্ অফিস তুমূল জনপ্রিয় চলচিত্রের ৮৫% দৃশ্যে ধূমপানের দৃশ্য দেখানো হয়। যা গত অর্ধ শতাব্দির মধ্যে সর্বোচ্চ। এসর চলচিত্রের এক তৃতীয়াংশই শিশুতোষ যেখানে তামাক কোম্পানির লগো ব্যবহার করা হয়েছে।

৪. ১৯৯১-২০০২ সালের ৩৯৫টি ইন্ডিয়ান সিনামার উপর করা এক গবেষনায় দেখা যায় ৩০২ বা ৭৬.৫% সিনামায় তামাকের ব্যবহার দেখানো হয়।

আমাদের দাবী
১. নাটক সিনেমা এবং গনমাধ্যমে ধূমপান ও তামাকের দৃশ্য প্রদর্শন বন্ধের লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ।
২. তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়নের ক্ষেত্রে নাটক সিনেমা এবং প্রচার মাধ্যমে সিগারেট দৃশ্য প্রদর্শন বন্ধ সংক্রানত্দ বিধান সংযুক্তকরণ।
৩. আনত্দঃরাষ্ট্রীয় তামাক দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৪. তামাকজাত দ্রব্যের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধকরণ।

তরুণ ও যুব সমাজকে তামাকজাত দ্রব্যের জ্ঞতি হতে রক্ষায় এখনই নাটক সিনেমা ও প্রচার মাধ্যমে তামাক ব্যবহারের দৃশ্য বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। নাটক সিনেমা ও প্রচার মাধ্যমে তামাক তথা ধূমপানের দৃশ্য প্রর্দশন বন্ধ করা না হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের উদ্দেশ্য ব্যহত হবে।

তামাকের ক্ষতিকর দিক থেকে নারীদের রক্ষা করতে হবে

তামাক ব্যবহারের ভয়াবহতা এবং নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আলোচনা আমাদের দেশে নারীদের তামাক ব্যবহার ও ক্ষতির বিষয়টি সব সময় অবহেলিত রয়ে যায়। আমাদের দেশের নারীরা তামাকজাত অন্যান্য পণ্য যেমন- জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে। ইদানিং প্রচারণার বিভিন্ন কারণে নারীদের মাঝে সিগারেটের ব্যবহারও বাড়ছে। বর্তমানে পুরুষদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার বেশি হলেও, নারী মাঝে তামাক সেবীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ওঞঈ (ঞযব ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঞড়নধপপড় ঈড়হঃৎড়ষ চড়ষরপু ঊাড়ষঁঃরড়হ চৎড়লবপঃ) ২০১০ এর তথ্য অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে নারী তামাক সেবী বেড়েছে ২৪.৪% থেকে ৩২.০% এবং নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়েছে ১.৩ %.


নারীদের তামাক ব্যবহারের ভয়াবহতা অনুধাবন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারন করেছে ুএবহফবৎ ধহফ ঃড়নধপপড় রিঃয ধহ বসঢ়যধংরং ড়হ সধৎশবঃরহম ঃড় ড়িসবহচ্ যা প্রশংসার দাবী রাখে। নারীদের মাঝে তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নারীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের ভয়াবহতা ব্যপক। তামাক ও ধূমপানের ফলে ফুসফুসে ক্যান্সার, মুখ, জরায়ু ও মুখগহররে নানারকম ক্যন্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তামাক সেবনের ফলে হাঁপানি, যক্ষ্মা, কাশি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবে গর্ভধারন ক্ষমতা দ্রুত লোপ পায়, ঋতুস্রাবে সমস্যা দেখা দেয়। তামাক ও ধূমপানের প্রভাবে মহিলাদের কম ওজনের বা মৃতু্য শিশু বা অকাল প্রসবের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

নারীরা শুধূমাত্র ধূমপান বা তামাক সেবনের মাধ্যমেই নয়, পরোক্ষ ধূমপানের কারনেও মারাত্বমকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ধূমপায়ীরা ধূমপানের সময় সামান্য পরিমাণ ধোঁয়া গ্রহণ করে এবং বেশিরভাগ ধোঁয়া বাইরে ছেড়ে দেয়। ফলে ধূমপায়ীর আশপাশে অবস্থানকারী নারী-শিশুসহ অধুমপায়ীরাও পরোক্ষ ধূমপানের ফলে ধূমপানজনিত ক্ষতির ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। বাসায় বাবা-ভাই-স্বামীর ধূমপান, কর্মক্ষেত্রে সহকমর্ীর ধূমপান, যানবাহনে ও পাবলিক প্লেসে অন্যান্যদের ধূমপানের ফলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়ায় অ্যাজমা, সত্দন ও ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। তবে দেশে তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে সরকার ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করে। এ আইন হওয়ার পর পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়ায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা এসেছে। তবে এখনও বিভিন্ন স্থানে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচেছ নারীরা।

তাছাড়া নারী শ্রমিকদের স্বল্প মজুরিতে পাওয়া যায় বিধায় তামাক চাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও তামাক শুকানোসহ সব কাজে নারীকে সম্পৃক্ত করা হয়। ফলে নারীরা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তারা পরিবারে ঠিকভাবে সময় দিতে পারে না। তামাকের বিরূপ প্রভাব থেকে নারীদের রক্ষায এখনই সচেতনতার পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর বৃদ্ধি, আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমেই তামাক ব্যবহার হ্রাস করা সম্ভব।

তামাক ব্যবহারের ভয়াবহতা শুধূমাত্র বাংলাদেশী নারীরা নয় সারা বিশ্ব ঝুঁকির মধ্যে আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে প্রায় ১ বিলিয়ন নারী ধূমপান করে যা বিশ্বের মোট ধূমপায়ীর ২০%। এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুধূতাই নয় বিশ্বে তরুনীদের মধ্যেও তামাক ব্যবহার ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৫১টি দেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় সে সমসত্দ দেশে প্রায় ৭% কিশোরী ধূমপান করে যেখানে কিশোর ধূমপায়ীর সংখ্যা ১২%। কিছু কিছু দেশে কিশোর কিশোরী ধূমপায়ীর হার প্রায় সমান। তামাকের ভয়াবহতা রোধে নারীদের স্বাস্থ্য রক্ষা ও এর উন্নয়ন বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের সুস্বাস্থ্য ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এই শতাব্দিতে ১ বিলিয়ন লোক তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে মারা যাবে। নারীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের মাত্রা কমিয়ে আনার মাধ্যমে অনেক জীবন রক্ষা করা যেতে পারে। সচেতনতার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে ধূমপান নিষিদ্ধ, শতভাগ ধূমপানমুক্ত স্থান, তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি, সকল তামাকজাত দ্রব্যেকে আইন ও করের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে নারীদের তামাকের ক্ষতিকর দিক হতে রক্ষা করা বহুলাংশে সম্ভব।

কামরুনি্নছা মুন্না,

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করণীয়

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করণীয়
২৩ মে ২০১০, গোলটেবিল বৈঠক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবন
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট


সম্মানিত সুধী,
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-র পক্ষ হতে শুভেচ্ছা জানবেন। বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আপনাদের স্বাগত। এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে \"Gender and tobacco with an emphasis on marketing to women"। এই গোলটেবিলের আলোচনা শুরুতে প্রথমেই বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-র সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও এ দিবস উপলক্ষ্যে গৃহীত কার্যক্রম আপনাদের অবগতির জন্য তথ্য তুলে ধরছি।

১. বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট :
বাংলাাদেশ তামাক বিরোধী জোট তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠনগুলোর একটি সম্মিলি্লত মঞ্চ। তামাক নিয়ন্ত্রণের নীতি প্রণয়নে এডভোকেসি, নীতি বাসত্দবায়নে সহযোগিতা, সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন, দক্ষতা বৃদ্ধি, সরকারী ও আনত্দর্জাতিক সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন, সদস্য সংগঠনের স্বার্থরক্ষা জোটের অন্যতম কার্যক্রম।

সাংগঠনিক, সহযোগি ও নেটওয়ার্ক এই তিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারা দেশের সংগঠনগুলো এ নেটওয়ার্কর সাথে যুক্ত রয়েছে। ৩০ এপ্রিল ২০১০ অনুসারে বর্তমানে এর সাথে যুক্ত সংগঠনের সংখ্যা ৬৮৫ টি। এ সংগঠনগুলো অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাসত্দবায়ন ও উন্নয়ন, কর বৃদ্ধি, ইত্যাদি ইসূ্যভিত্তিক কমিটি, ৬টি বিভাগীয় ফোকাল পয়েন্ট এবং বিভিন্ন সংগঠনের একদল তরুন স্বেচ্ছাসেবীর কমিটি জোটের সচিবালয় পরিচালিনা করছে। জোট একটি স্বেচ্ছাসেবী তামাক বিরোধী আন্দোলনের মঞ্চ।

বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-র সদস্য সংগঠনগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মনিটরিং, আইন বাসত্দবায়নে প্রশাসনকে সহযোগিতা, ধূমপানমুক্ত স্থান সৃিষ্ট, আইন উন্নয়ন জনমত, কর বৃদ্ধির বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিসহ নানাবিধ কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালিত করছে। এ যাবত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সারা দেশের ৬৪ টি জেলায় প্রায় ২০০ টি বেশি উপজেলার ২৩০ টি বেশি সংগঠন বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তবে এ নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত প্রতিটি সংগঠনই নিজস্ব পরিসরে কোন না কোন কাজ করে থাকে।

এ পর্যায়ে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণের বর্তমান অবস্থার কিছু বিষয় তুলে ধরছি:

২. তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাসত্দবায়ন:
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ বিষয়ে আলোচনার শুরুতে এ আইনের বাসত্দবায়ন হচ্ছে না বলে কেহ কেহ অভিমত ব্যক্ত করেন। কিন্তু Global Adult Tobacco Survey এবং ITC Bangladesh National Report on Evaluation of Tobacco Control Policies in Bangladesh 2009 বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাসত্দবায়নে অগগতি হয়েছে। মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান হ্রাস পেয়েছে, দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে ধূমপানমুক্ত সাইনসহ স্থান সংরক্ষিত হচ্ছে। প্রিণ্ট ও ইলেকট্রনিঙ্ মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়েছে, সিগারেটের প্যাকেটে লিখিত বানী প্রচার হচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে আইন প্রণয়নের ফলাফল। এ অর্জন সরকার, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন ও গণমাধ্যমের সম্মিলি্লত প্রয়াস।

তবু বলা যেতে পারে আইনের অগ্রগতি প্রত্যাশিত মাত্রায় নয়। এখনো আইন অনুসারে সকল পাবলিক প্লেস ও পরিবহন ধূমপানমুক্ত নয়। এসকল স্থানে ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপনও সম্ভব হয়নি। তামাক কোম্পানিগুলো আইন লঙ্গন করে পরোক্ষ বিজ্ঞাপন প্রচার করছে, কিছু কোম্পানি প্যাকেটের গায়ে আইন অনুসারে সতর্কবাণী প্রচার করছে না, তামাক চাষের বিকল্প ফসলের সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি, তামাক ব্যবহার ও শিল্প স্থাপনে নিরুৎসাহিত করতে নীতিমালা বা কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

৩. তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন :
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এখন সময়ের দাবি। আইনের সীমাবদ্ধতার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে আইনটি সুফল জনগনের নিকট তুলে দেওয়া যাচ্ছে না। আশার কথা হচ্ছে সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে। উক্ত কমিটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতামতের উপর ভিত্তি করে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নিকট একটি খসড়া প্রসত্দাবনা পেশ করেছে। উক্ত খসড়া প্রসত্দাবনার বিষয়ে পুনরায় সকলের নিকট মতামত আহবান করা হয়েছে। আমরা আশা করি সরকার এফসিটিসি-র আলোকে আগামী Conference of the Party (COP) -র সভার পূর্বে আইনটি সংশোধন করবে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়ন বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা প্রেক্ষিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানের স্থান সংক্রানত্দ বিধান বাতিল করা; সকল তামাকজাত দ্রব্যকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা; প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০% শতাংশ জুড়ে ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান; সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে তামাক কোম্পানির নামে লগো ব্যবহার করে প্রমোশনার কার্যক্রম নিষিদ্ধ; তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক বা কৌটার অনুরূপ বা সাদৃশ্যে অন্য কোন প্রকার দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যে কোন নাগরিককে মামলা করার অধিকার প্রদান; আইনভঙ্গের প্রেক্ষিতে তামাক কোম্পানিগুলোর জরিমানা ও শাসত্দির পরিমান বৃদ্ধি; তামাকের বিকল্প চাষ ও কর বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, তামাক কোম্পানিগুলো হতে স্বাস্থ্যকর (ঐবধষঃয ঞধী) নামে কর আদায়, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিধি বৃদ্ধি এবং ধূমপানমুক্ত স্থান তৈরির করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কতর্ৃপক্ষের শাসত্দির ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়গুলো আইনেরযুক্ত করার সুপারিশ করেন।

৪. তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি:
দেশীয় ও আনত্দর্জাতিক গবেষণায় দেখা যায় তামাক ব্যবহার হ্রাসে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি একটি কার্যকর উপায়। তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এফসিটিসি অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের উপর বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অথচ বিগত কয়েক বছরে তামাকজাত দ্রব্যের উপর মুদ্রাস্ফীতি অনুসারে কর বৃদ্ধির কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বরং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সসত্দায় তামাকজাত দ্রব্য প্রাপ্তির প্রেক্ষিতে তামাক ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত বছরে সরকার তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও কোম্পানিগুলোর ভ্রানত্দ প্রচারণার কারণে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি।

তামাক কোম্পানিগুলো কর বৃদ্ধি হলে রাজস্ব এবং কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে বলে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, কর বৃদ্ধি হলে তামাক ব্যবহার হ্রাস পেলেও দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ হলে ১৮.৭% চাকুরি বৃদ্ধি পাবে।

তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মাধ্যমে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব সরকার প্রয়োজনে দরিদ্র লোকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় করতে পারে। প্রায়শই কোম্পানিগুলো অনেক টাকা রাজস্ব দেয়া বলে নিজেদের জাহির করতে চায়। আমাদের একটি কথা স্মরণ রাখা প্রয়োজন কোম্পানিগুলো মূলত সংগৃহীত ভ্যাট রাজস্ব খাতে জমা দেয়, ভ্যাট পুরোটা জনগনের টাকা। মাত্র ১৫% ভ্যাটের টাকা রাজস্ব খাতে দিয়ে, সরকারের উপর রোগ ও অসুস্থ্যতার বোঝা চাপিয়ে কি পরিমান অর্থ লাভ হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। আমরা আশা করি জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্মত কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে এ বাজেটে সরকার সকল ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

৫.খাদ্যের জমিতে, তামাক চাষ- আমাদের শংকা:
এ বছর বাংলাদেশে তামাক চাষ আংশকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সমপ্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় তামাক চাষ ও তামাক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোন প্রকার আর্থিক সাহায্য না করার জন্য দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক-কে নির্দেশনা জারি করে । তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এর এই নির্দেশনা দেশের জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভনের মাধ্যমে চাষীদের তামাক চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।

অধিক জনসংখ্যার সীমিত ভুখন্ডের এ দেশ। খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। পাশাপাশি তামাক চাষ দরিদ্রতা ও অপুষ্টি ঘাটতি বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তামাক পাতা শুকানোর জন্য প্রতিবছর দেশের বনাঞ্চল ধবংস হয়ে যাচ্ছে, বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। তামাক চাষের সময়ে স্কুলে বাচ্চাদের উপস্থিতির হার কমে যায়। তামাক চাষ অনেক শ্রমের প্রয়োজন ও কঠিন কাজ। তামাক চাষের সঙ্গে সম্পৃক্তদের হাঁপানিসহ শ্বাস ও চর্মজনিত রোগের বিসত্দার লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া মারত্মক বার্জাজ ডিজিজ এর মত ভয়াবহ রোগও লক্ষ করা যাচ্ছে। তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায় এবং ১০ বছর পর সে জমি সম্পূর্ণভাবে চাষ অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে আরো কঠোর কার্যক্রম দরকার।

৬. তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক দক্ষতা বৃদ্ধি ও সচেতনতা
তামাক নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্য বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগ দক্ষতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। তামাক বিরোধী সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও, সিবিও, সিভিল সোসাইটি ও গনমাধ্যমের কর্মীদের তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে। বিগত বছরে সরকারীভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দি ইউনিয়নের সহযোগিতায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাসত্দবায়নের সাথে জড়িত সরকারী কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মশালা আয়োজন করা হয়। তবে এ ধরনের কর্মশালা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনারে অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পালণ ও তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর দিক বিষয়ে এখনো সরকারীভাবে সীমিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। তবে সরকারের সহযোগি স্বেচ্ছাসেবী তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠনগুলো এক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে তামাক বিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এর মধ্যে বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, পোষ্টার, স্টিকার, লিফলেট, ভ্রাম্যমান গানের দল, পথ নাটক, বিভিন্ন ক্যাম্পেইন অন্যতম। তবে জনসংখ্যার অনুপাতে এ সকল কার্যক্রম খুবই অপ্রতুল। সরকারকে এক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক দক্ষতা বৃদ্ধি ও সচেতনতা ক্ষেত্রে সরকারী ও স্বেচ্ছাসেবী তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠনগুলো মাঝে আরো বেশি সমন্বয় সাধন জরুরি।

৭. তামাক নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমের ভূমিকা
তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সক্রিয় ও অগ্রণী ভূমিকা পালণ করে আসছে। ভয়েজ অব ডিসকভারী প্রতিহত, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস, এফসিটিসি র্যাটিফাই, স্বাস্থ্য সচেনতা, তামাক চাষের ভয়াবহতা ও তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে জনমত সৃষ্টিতে গণমাধ্যম সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ বেশ কয়েকবার পত্রপত্রিকায় আইন বিষয়ে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। ধারাবাহিকভাবে তামাক বিরোধী সচেতনতার লক্ষ্যে সরকারী পৃষ্টপোষকতায় গণমাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম জরুরি।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাসত্দবায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ থাকলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তা গণমাধ্যমে কর্মীদের নিকট পৌছে না। সরকারীভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকার ও দেশের ইতিবাচক উদ্যোগগুলো গণমাধ্যমের নিকট পৌছে দেয়া প্রয়োজন। এ ধরনের পদক্ষেপ গণমাধ্যমকে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সঠিক ও সময়পোযোগী তথ্য খুজে বের করতে সহযোগিতা করবে।

৮. ধূমপান ত্যাগে সহযোগিতা
তামাক ব্যবহার হ্রাসে ধূমপান ত্যাগে সহযোগিতা একটি অন্যতম উপায়। কিন্তু বাংলাদেশ এ প্রক্রিয়া এখনো জোরালোভাবে শুরু করা সম্ভব হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় সীমিত পর্যায়ে বিআইডিসি রাজশাহী এবং এখলাসপুর সেন্টার অব হেলথ নামক তামাক বিরোধী সংস্থা কুইট কার্যক্রম সফলতার সাথে পরিচালনা করে। মানবিক নামক অপর একটি সংস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতা ডক্টর ফর হেলথ এবং কুইট লাইনের মাধ্যমে কিছু সময় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। দেশের ক্রমবর্ধমান তামাক ব্যবহারকারীর কথা বিবেচনা করে সরকারী পৃষ্টপোষকতায় এ ধরনের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

৯. National Strategic Plan of Action for Tobacco Control
তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় National Strategic Plan of Action for Tobacco Control 2007-2010 প্রণয়ন করে। দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে দিক নির্দেশনা প্রদানের এ পরিকল্পনা পত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এ বছর এ দলিলের সময় সীমা শেষের প্রেক্ষিতে এ দলিল মূল্যায়ন ও পুণপ্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

১০. জাতীয়, জেলা ও উপজেলা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) টাস্কফোর্স
তামাক আইন বাসত্দবায়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার জাতীয়, জেলা ও উপজেলা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) টাস্কফোর্স গঠণ করেছে। প্রশাসন, মিডিয়া ও তামাক বিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এ কমিটি তামাক নিয়ন্ত্রণে একটি শক্তি কেন্দ্র। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) টাস্কফোর্স-র সভায় নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না এবং কার্যক্রমও গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে মনিটরিং-র অভাব, আর্থিক সীমাবদ্ধতা, প্রয়োজনীয় উপকরনের অভাবসহ নানা বিধি কারণ জেলা ও উপজেলা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) টাস্কফোর্স কমিটির কার্যক্রমকে বাধাগ্রসত্দ করছে। তথাপিও দেশের অনেক স্থানের টাস্কফোর্স তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাসত্দবায়নে অনেক অনুকরণীয় সিদ্ধানত্দ গ্রহণ করেছে। এ সকল কমিটিরগুলোকে প্রশিক্ষন, উপকরণসহ নানা সুবিধা মনিটরিং-র মাধ্যমে নিশ্চিত করার সম্ভব হলে স্থানীয় পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে।

১১. আনত্দজার্তিক অঙ্গনে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ
তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রেক্ষিতে আনত্দর্জাতিক অঙ্গনে ভাবমূর্তি উজ্বল করেছে। মোবাইল কোর্ট, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) টাস্কফোর্স, সরকারী ও তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠনগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন অপসারণ, ভয়েজ অব ডিভকভারীর কার্যক্রম বন্ধ, নিত্য নতুন তামাক বিরোধী আন্দোলন, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে কার্যরত ব্যাপক সংখ্যাক তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন সম্পৃক্তকরণ ইত্যাদি বিষয়গুলো আনত্দর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠানগুলোই বাংলাদেশ থেকে শিখছে। সরকারী, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন এবং গণমাধ্যমের যৌথ কার্যক্রমের ফসল এই আনত্দর্জাতিক অর্জন ও সম্মান। বাংলাদেশের অনেক তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মী আনত্দর্জাতিক অনেক সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে স্বেচ্ছাসেবী বা পেশাগতভাবে দায়িত্ব পালণ করে যাচ্ছে।

তবে, অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের নিজেদেরও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিভিন্ন দেশ হতে এ সকল বিষয়গুলো শেখার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভারের কারণে অনেকের পক্ষেই এ জ্ঞান লাভ করা সম্ভব হয় না, এমনকি নিজেদের অভিজ্ঞতা ও অর্জনগুলো তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সুযোগ ও সুবিধা সৃষ্টিতে সরকারকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন, যাতে যোগ্য লোকজন তাদের অভিজ্ঞতাগুলো বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দিতে পারে এবং বিশ্ব হতেও নিজের দেশের জন্য শিখতে পারে।

১২. তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষণা:
তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রানত্দ আলোচনার ক্ষেত্রে এক সময় আমাদের বিদেশী ডাটা বা তথ্য ব্যবহার করতে হতো। আমাদের জন্য আনন্দের ও আশার কথা হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সিডিসিসহ বিভিন্ন আনত্দর্জাতিক সংস্থার কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার জাতীয়ভাবে Global Adult Tobacco Survey (GATS) সার্ভে সম্পন্ন করেছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়াটার লু বিশ্ববিদ্যালয়ে ITC Bangladesh National Report on Evaluation of Tobacco Control Policies in Bangladesh 2009 নামক অপর একটি জাতীয় পর্যায়ের গবেষণা সম্পন্ন করেছে।

ডাবি্লউবিবি ট্রাস্ট, এইচআরডিসি ট্রাস্ট, উন্নয়ন সমন্বয়, উবেনীগ, ক্যাব, মানবিক, আরটিএম ইত্যাদি সংগঠনগুলো বিড়ি ব্যবহার, তামাক নিয়ন্ত্রণ, তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি, তামাক চাষ, প্যাকেট ওয়ানিং ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেছে। এ সকল গবেষনাগুলো জাতীয় সম্পন, যা দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে গতিশীল করবে। তথ্যাপিও দেশে তামাক ব্যবহার ত্যাগে সমস্যা, আইন বাসত্দবায়নের প্রতিবন্ধকতা, আইন পালণে করণীয় ইত্যাদি বিষয়েও গবেষণার প্রয়োজনীতা রয়েছে।


১৪. পরিশিষ্ট
তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অর্জন অনেকখানি। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত দেশের এই অর্জনকে বাধাগ্রসত্দ করতে অব্যাহত প্রয়াশ চালাচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ ও তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো বিষয়ে নৈতিবাচক প্রচারণা তাদের এ সকল কার্যক্রমের অন্যতম হাতিয়ার। কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসার স্বার্থে নানাভাবেই দেশের তামাক বিরোধী কার্যক্রমকে বাধাগ্রসত্দ করতে চাচ্ছে।

তামাক কোম্পানির তাদের মুনাফার উদ্দেশ্যে মানুষকে রোগ ও মৃতু্যর দিকে ঢেলে দিচ্ছে, অপর দিকে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীদের উদ্দেশ্য মানুষের স্বাস্থ্যকে রক্ষা করা। মানুষের স্বাস্থ্য অপেক্ষা অর্থ কখনোই মুখ্য হতে পারে না। সরকার, প্রশাসন, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন, গণমাধ্যমকর্মীদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও পদক্ষেপ কোম্পানির অশুভ উদ্দেশ্য প্রতিহত করে জনগনের স্বাস্থ্যকে রক্ষা করবে এ আমাদের বিশ্বাস।

সুপারিশ:
* তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাসত্দবায়নের মনিটরিং জোরদার, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপন;
* এফসিটিসি-র আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ;
* বিড়ি-সিগারেটসহ সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর বৃদ্ধি করা। কর বৃদ্ধির অর্থ দরিদ্র বিড়ি শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় করা;
* পরিবেশ, অর্থ, স্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ;
* আইন বাসত্দবায়নের সাথে সম্পৃক্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ;
* তামাক বিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারীভাবে উদ্যোগ গ্রহণ;
* সরকারীভাবে নিয়মিত গণমাধ্যমকে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কার্যক্রম বিষয় তথ্য প্রদানের প্রক্রিয়া তৈরি;
* ধূমপানত্যাগে সহায়ক কর্মসূচী তৈরি করা;
* National Strategic Plan of Action for Tobacco Control 2007-2010 মূল্যায়ণ এবং পুণপ্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ;
* আনত্দর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ;
* জেলা ও উপজেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স-র প্রশিক্ষন, উপকরণসহ নানা সুবিধা ও মনিটরিং নিশ্চিত করা;
* স্থানীয় সরকার, দেশীয় দাতা গোষ্ঠীগুলোর সহযোগিতায় স্থানীয় পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ;

ধূমপানমুক্তকরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন, রমনা মডেল থানা

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ৩১ মে ২০১০ উপলক্ষে
ধূমপানমুক্তকরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন, রমনা মডেল থানা
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট

তামাকজাত দ্রব্য বিশ্বে প্রতিরোধযোগ্য মৃতু্যর অন্যতম প্রধান কারণ। তামাকের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫৭ হাজার মানুষ মারা যায়, ৩ লক্ষ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। তামাকের ভয়াবহ ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করতে প্রতিবছর পালন করা হয় বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। ১৯৮৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উদযাপন হতে যাচ্ছে। এ বছরের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে \""Gender and tobacco with an emphasis on marketing to womenবাংলায় ''তামাকের আগ্রাসী বিজ্ঞাপন মহিলা ও শিশু জন্য হুমকি''। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নির্ধারণ করা হয়েছে ''প্রতিদিনই হোক তামাকমুক্ত দিন''। তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করেছে। এ আইনে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিড়ি-সিগােেটর ধোঁয়া অধূমপায়ীদের জন্য ক্ষতিকর। পরোক্ষ ক্ষতি হতে জনসাধারণকে রক্ষায় এ আইনের কার্যকর বাসত্দবায়ন জরুরি।

আইনের বাসত্দবায়ন হচ্ছে না বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেন। আইনের প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ এ ধরনের বিভ্রানত্দির কারণেও অনেকে আইন বাসত্দবায়নের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে থাকেন। আইনের কোথাও প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়নি, বরং সুনির্দিষ্ট পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ সংক্রানত্দ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

Global Adult Tobacco Survey (GATS এবং ITC Bangladesh National Report on Evaluation of Tobacco Control Policies in Bangladesh 2009 বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাসত্দবায়নে অগগতি হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সম্পর্কে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান হ্রাস পেয়েছে, দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপন হচ্ছে। প্রিণ্ট ও ইলেকট্রনিঙ্ মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়েছে, সিগারেটের প্যাকেটে লিখিত বানী প্রচার হচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে আইন প্রণয়নের ফলাফল। এ অর্জন সরকার, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন ও গণমাধ্যমের সম্মিলি্লত প্রয়াস।

দেশের থানাগুলো প্রতিটি এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্লেস। প্রতিদিন এখানে প্রচুর জনসাধারণ বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য এসে থাকে। এছাড়া পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণকে সাধারন মানুষ আইন বাসত্দবায়নের প্রতীক হিসেবে মনে করে থাকেন। পাবলিক প্লেস হিসেবে থানা ধূমপানমুক্তকরণ উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেশের থানাগুলো ধূমপানমুক্ত করার মাধ্যমে আইন বাসত্দবায়ন এবং ধূমপানমুক্ত স্থান বিষয়ে জনমনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। থানা ধূমপানমুক্ত করার মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাসত্দবায়নের যে উদ্যোগ গ্রহণ করলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, তা বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিহাস হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এ ইতিহাস এর গর্বিত অংশীদার।

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে অক্লানত্দ পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এর মাঝেও পুলিশ বাহিনীর অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাসত্দবায়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পুলিশ ইতোপূর্বে অনেক ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। গত ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জনস্বার্থে নববর্ষের জনসমাগমস্থলকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগ দেশের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপের পর দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলাও নববর্ষের মেলা/ অনুষ্ঠান ধূমপানমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আজকে রমনা মডেল থানা ধূমপানমুক্ত করনের মাধ্যমে যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা আশা করি তা দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় ও দৃষ্টানত্দ হবে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাসত্দবায়নে পুলিশের ক্ষমতা প্রদান করার কথা বলা হলেও আইনটি বাসত্দবায়নের লক্ষ্যে পুলিশের ক্ষমতা খুবই সীমিত। আইনের ধারা ১৪ (ক) অনুসারে যেহেতু একটি আমলযোগ্য অপরাধ যে জন্য পুলিশ কর্মকর্তা কোন ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আটক বা ধূমপানমুক্ত স্থান হতে বহিষ্কার করতে পারে। কিন্তু জরিমানা আদায় বা আরোপের ক্ষমতা পুলিশের নেই। শুধুমাত্র মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেই এ আইন বাসত্দবায়নে জরিমানা আদায় করা হয়। অপরদিকে বিদ্যমান মেট্রোপলিটন পুলিশ আইনগুলোতে ধূমপানমুক্ত এলাকা সাইন থাকা স্বত্বেও, এ সংক্রানত্দ ধারাভঙ্গের প্রেক্ষিতে ১০০-৩০০ টাকা জরিমানা বিধান রয়েছে। কিন্তু এই ধারা অনুসারেও সরাসরি পুলিশ কর্মকর্তা জরিমানা আদায় করতে পারেন না।

পাবলিক প্লেস বা পরিবহনে ধূমপানের কারণে কোন ব্যক্তিকে আটক করে ম্যাজিট্রেট এর নিকট প্রেরণ এবং জরিমানা করা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমাদের একটি বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন ধূমপায়ীরা অপরাধী নয়, বরং তারা আসক্তির শিকার। আমাদের লক্ষ্য তাদের এ আসক্তি হতে মুক্ত করা। সামাজিক ও মানবিক কারণে পাবলিক প্লেস বা পরিবহনের ধূমপানের কারণে এ দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় একজনকে আটক করে বিচারের সম্মুখীন করার অনেকের নিকটই গ্রহণ যোগ্য নয় এবং সাক্ষী উপস্থাপনসহ নানাবিধ কারণে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া।

পাবলিক প্লেস এ ধূমপান যখনই সংঘটিত হয়, ঠিক তক্ষৎনাৎ আইনটি প্রয়োগ তথা জরিমানা করা প্রয়োজন। আর এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ বা জরিমানা আদায়ের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পরিধি সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পুলিশ সদস্যগণ নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ দায়িত্ব পালনের বিভিন্ন কারণে দেশের প্রায় সকল পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের অবস্থান অপেক্ষাকৃত বেশি। এক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তাদের পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের ধূমপানের প্রেক্ষিতে জরিমানা আদায়ের ক্ষমতা আইন ক্ষমতা প্রদান করা হলে আইনের বাসত্দবায়ন অনেক সহজতর হবে। ভারতে বাস চালক, স্কুল শিক্ষককে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানমুক্ত সংক্রানত্দ ধারাভঙ্গের প্রেক্ষিতে জরিমানা আদায়ের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই পুলিশকে এধরনের আইন বাসত্দবায়নে সরাসরি ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।

সিগারেটের ধোঁয়া অধূমপায়ীদের জন্যও ক্ষতিকর। অধূমপায়ী বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের ধূমপানের ধোঁয়া হতে রক্ষায় পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের ধূমপান নিষিদ্ধ সংক্রানত্দ ধারা কার্যকর বাসত্দবায়ন করা প্রয়োজন। এ ধারাটি বাসত্দবায়নের করার সম্ভব হলে দেশে ধুমপায়ীর মাত্রাও কাঙ্খিত মাত্রা হ্রাস করা সম্ভব।

আমাদের সুপারিশ
১. রমনা মডেল থানার মতো দেশের সকল থানা ও পুলিশের অন্যান্য অফিসগুলোতে ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপন।

২. পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রশিক্ষন কারিকুলামে সম্পৃক্তকরণ ।

৩. পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানমুক্ত সংক্রানত্দ ধারাটি বাসত্দবায়নের লক্ষ্যে মেট্রোপলিটন আইন ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জরিমানা আরোপোর ক্ষমতা প্রদান করা।

৪. জরিমানা আরোপের জন্য স্ট্যাম্প ব্যবস্থা প্রর্বতন করা, যাতে সহজেই পুলিশ কর্মকর্তারা জরিমানা আরোপ করতে পারে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে জবাবদিহিতা ও আইনের বাসত্দবায়ন সহজ হবে।

৫. পুলিশ সদস্যগণ জনগনের নিকট আইন প্রয়োগের প্রতীক। তাই পোষাক পরিহিত ও কর্তব্যরত অবস্থায় পাবলিক প্লেসগুলোতে পুলিশ সদস্যদের ধূমপান হতে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

পরিশেষে আমি আজকের মহতী এ অনুষ্ঠানের সম্মানিত প্রধান অতিথি, মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আসাদু্জ্জামান খান, মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আসমা জেরীন ঝুমু, সম্মানিত আইজিপি জনাব নূর মোহাম্মদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর কমিশনার জনাব এ কে এম শহীদুল হক, উপ-পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় এবং বাংলাদেশ পুলিশ, গণমাধ্যম কর্মী ও সুধীবৃন্দ_আপনাদের সকলকে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাই।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী-
সৈয়দ মাহবুবুল আলম, এল এল বি
সম্পাদক, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট