শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১১

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম : সরকারের কাজে প্রত্যাশা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম : সরকারের কাজে প্রত্যাশা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক
৩০ মে ২০০৯, সিরডাপ মিলনায়তন
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট

সম্মানিত সুধী, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-এর আমন্ত্রণে এই গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা ও পরামর্শ বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে গতিশীল করতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসকে সামনে রেখে জোটের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের তথ্যাদি তুলে ধরছি। প্রতিবছরের মতো এবছরও ৩১ মে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে যাচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ঞড়নধপপড় ঐবধষঃয ডধৎহরহম-তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও জোটভুক্ত সংগঠনগুলো এই দিবসকে সামনে রেখে মাস ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গত ৩ মে ২০০৯ জাতীয় চিত্রশালায় আয়োজত হয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বিষয়ক প্রদর্শনী। এ প্রর্দশনীতে ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে বিগত দশ বছরের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। প্রদর্শনীর অনুষ্ঠানের অন্যতম বিষয় ছিল তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান এবং তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান। সারা দেশের প্রায় ৩০০ সংগঠন এই মেলায় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া জোটভুক্ত সংগঠনগুলো তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির ল্েয অর্থমন্ত্রী ও রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের বরাবরে লেটার ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে।

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসকে সামনে রেখে সারাদেশের সদস্য সংগঠনগুলো আইন মনিটরিং, আইন সম্পর্কে সচেতনতা, র‌্যালী, সেমিনার, ধূমপানমুক্ত পাবলিক প্লেস ও পরিবহন তৈরি, লিফলেট ক্যাম্পেইন, তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স সক্রিয় করতে এডভোকেসি সভাসহ নানা ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এ কার্যক্রমে সরকারী-বেসরকারী সংগঠন, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যমকর্মী, শিক-ছাত্র, ধর্মীয় নেতা, কমিউনিটি সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এ বছর সারা দেশের ৫০ টি জেলায় ১৬০ টির বেশি উপজেলায় প্রায় ২০০ টি বেশি সংগঠন এই দিবস পালণ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট জাতীয় পর্যায়ে গোলটেবিল বৈঠক, র‌্যালী, ভ্রাম্যমান গানে দলের মাধ্যমে প্রচারণার আয়োজন করেছে।

সম্মানিত সুধী আপনারা জানেন, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার ও আইন বাস্তবায়নের ল্েয চতুর্থ বার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নসহ জাতীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে আইন বাস্তবায়ন টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। তামাক কোম্পানীর অবৈধ বিজ্ঞাপন অপসারন, পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা যুগান্তকারী পদপে হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বিগত বছরে বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্যের কর ও ট্যারিফ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। যা জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জল করেছে।

তামাক নিয়ন্ত্রণে নীতিগত পদপে গ্রহণে অনেকখানি অগ্রগতি সাধিত হলেও, কাঙ্গিত মাত্রায় তামাক ব্যবহারে হ্রাসের ল্েয আরো অনেকটা সময় অপো করতে হবে। পাশাপাশি আরো কিছু নীতিগত পদপে গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ধারাবাহিক উদ্যোগ আমাদের আশান্বিত করে। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠনগুলো বিগত বছরগুলোতে কর্মশালা, আলোচনা সভা, সেমিনারসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয বিভিন্ন সুপারিশ ও জনগনের প্রত্যাশা তুলে নিয়ে এসেছে। এ সকল সুপারিশ ও প্রত্যাশা সমূহ আপনাদের অবগতির জন্য সংপ্তি আকারে তুলে ধরছি।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন উন্নয়ন:
তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রণয়নের ফলে অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এ কথা সত্যও আইনটিতে নানা সীমাবদ্ধতা থাকায় আইনটি বাস্তবায়ন আশানুরূপ হচ্ছে না। কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয আইনটি উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়নের ল্েয যে সকল সুপারিশগুলো উঠে এসেছে তা হল ঃ তামাকজাত দ্রব্যের সংঙ্ঘায় বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, গুল, জর্দ্দা, খৈনী, সাদাপাতা, সিগার এবং পাইপে ব্যবহার্য মিশ্রন (মিস্কার)সহ সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যকে সংযুক্ত করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্রত্য ও পরো বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০% শতাংশ জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান; বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, রেষ্টুরেন্টসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও জনসমাগমস্থলকে ধূমপানমুক্ত স্থান ঘোষণা করা; সিনেমা, নাটক, প্রামান্যচিত্রসহ অন্য মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রচার বা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; সামাজিক দায়বদ্ধতা নামে তামাক কোম্পানির নাম, লগো ব্যবহার করে প্রমোশনাল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক বা কৌটার অনুরূপ বা সাদৃশ্যে অন্য কোন প্রকার দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যে কোন নাগরিককে মামলা করার অধিকার প্রদান; আইনভঙ্গের প্রেেিত তামাক কোম্পানিগুলোর জরিমানা ও শাস্তির পরিমান বৃদ্ধি করা; তামাকের বিকল্প চাষ ও কর বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা প্রণয়নের বিধান সংযুক্ত করা; তামাক কোম্পানিগুলো হতে স্বাস্থ্যকর নামে কর আদায় এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিধি বৃদ্ধি করা। আমরা আশা করি সরকার আইন উন্নয়নের ল্েয এ বিষয়গুলো গুরুত্বে সাথে বিবেচনা করবে।

তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি:
তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয কর বৃদ্ধি একটি কার্যকর উপায়। বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণায় দেখা যায়, তামাকের দাম যদি ১০ ভাগ বৃদ্ধি পায় তাহলে উন্নত দেশে এর ব্যবহার ৪% এবং উন্নয়নশীল দেশে ৮% কমে আসবে। তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি ্িবষয়ে পরিচালিত ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, মানবিক ও হেলথ ব্রিজের গবেষণায় দেখা যায়, জরিপে ৭৩.২% লোক তামাকের উপর কর বৃদ্ধি করা উচিত বলে মতামত প্রদাণ করেন। তামাকের উপর উচ্চহারে দাম বৃদ্ধির প্রেেিত ৬০.১ % তামাক ব্যবহার কমিয়ে দেবেন, ২৮.২% একেবারে ধূমপান ত্যাগ করবেন, ৫.২% সস্তা দামের তামাক ক্রয় করবেন, মাত্র ১.৯% অন্যান্য দ্রব্য অপো তামাকের পিছনে আরো বেশি ব্যয় করবেন বলে জানান। এ গবেষণার মাধ্যমে দেখা যায় অধিকাংশ মানুষ তামাকের উপর কর ও মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি সমর্থন করেন। উন্নয়ন সমন্বয়ের এক গবেষনায় দেখা যায়, বিড়ি সিগারেটে উপর ১৫% সম্পুরক শুল্ক বৃৃদ্ধি এবং বিড়ি প্রতি প্যাকেটের উপর ২ টাকা ধার্য করা হলে, ধূমপায়ীর সংখ্যা ২০% হ্রাস পাবে এবং সরকার এই খাতে রাজস্ব আরো ৯৫০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে।

দুঃখজনক হলেও সত্য তামাক কোম্পানিগুলোর কুট কৌশলের ফলে বিগত কয়েক বছরে তামাকজাত দ্রব্যের কর মুদ্রাস্ফীতির সাথে সামঞ্চস্য রেখে করা সম্ভব হয়নি। বিড়ির উপর কর অনেক কম, তার উপর বিড়ি কোম্পানিগুলো অহরহ কর ফাকি দিচ্ছে, অনেক কোম্পানিকে নানা কারণে করের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। গুল, জর্দ্দা, সাদাপাতা অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য এখনো করের আওতায় নিয়ে আসা হয়নি। আমরা আশা করি সরকার তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির ল্েয একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করবে, যাতে সকল তামাকজাত দ্রব্যকে করের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তামাকজাত পন্য উৎপাদনকারী হতে স্বাস্থ্যকর নামে একটি কর সংগ্রহ করা হবে, যা তামাক নিয়ন্ত্রণ কাজের জন্য ব্যয় করা হবে।

তামাক-এর বিকল্প ফসল উৎপাদনে সহযোগিতাঃ
স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিবেশসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় তামাক একটি তিকর ফসল। আমাদের সীমিত জমিতে তামাক চাষ বৃদ্ধি একধরনের হুমকি স্বরূপ। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলের তামাকের চাষবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে আশংকাজনকভাবে। প্রত্য ও পরো নানা ধরনের কৃষি সুবিধা ও তামাক কোম্পানিগুলোর প্রলুব্ধতার কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে তামাকের চাষাবাদ। পার্বত্য এলাকায় তামাক চাষের জন্য ধ্বংস হচ্ছে বন, পানি উৎস ও কৃষি জমি। তামাক চাষের এই ভয়াবহ আগ্রাসী থাবা হতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে রায় বিকল্প ফসল উৎপাদনের তড়িৎ পদপে গ্রহণ করা প্রয়োজন। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকএর বিকল্প ফসল উৎপাদনের ৫ বছর পর্যন্ত ঋণ প্রদানের কথা বলা হলেও, এ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন ধরনের পদপে গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণের ল্েয সরকারের বিকল্প ফসল উৎপাদনে সহযোগিতার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি।

তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচারণা ঃ
বাংলাদেশে তামাক বিরোধী প্রচারণা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারী-বেসরকারী সংগঠনগুলো বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, স্টিকার, পোষ্টার, লিফলেটসহ বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তামাক বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, দি ইউনিয়ন, টিএফকে, এফসিএ সহযোগিতায় তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে আসছে। মানস, প্রত্যাশা, মানবিক, উন্নয়ন সমন্বয়, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট সামর্থ্য অনুসারে অন্যান্য সংগঠনের সহযোগিতায় মাসমিডিয়া ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ইপসা, হাঙ্গার প্রজেক্ট, স্কোপ, র‌্যাক, ওআরডিসহ বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-র অনেক সদস্য সংগঠন জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে। বাংলাদেশ হেলথ ফাউন্ডেশন বুল্মবার্গ কার্যক্রমের আওতায় ধর্মীয় নেতাদের মাঝে তামাক বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো স্বপ্রনোদিতভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার ল্েয গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তথাপিও জনসংখ্যার অনুপাতে এ প্রচারণা কার্যক্রম যথেষ্ট নয়। তামাক বিরোধী প্রচারণা জন্য সরকারীভাবে আরো সহযোগিতা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।



তামাক ব্যবহার ত্যাগে সহায়ক কর্মসূচী :
যারা তামাক বা ধূমপান করেন তাদের প্রতিপ ভাবার কোন অবকাশ নেই, বরং তারা হচ্ছেন ভিকটিম। তাদের তামাক ব্যবহার হতে মুক্ত করার ল্েযও চিন্তা করা প্রয়োজন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তামাক ব্যবহার ত্যাগে বিভিন্ন সহায়ক কর্মসূচী পরিচালিত হলেও বাংলাদেশে এ কার্যক্রম খুবই নগন্য। মানবিক ও বিআইসিডি নিজস্ব পরিসরে ধূমপান ত্যাগে সহায়ক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এধরনের কার্যক্রম পরিচালনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সীমিত পরিসরে সহযোগিতা প্রদান করে। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, মানস, আধূনিক, জাতীয় অধূমপায়ী ফোরামসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ধূমপান ত্যাগে সহায়ক প্রকাশনা রয়েছে। তামাক ব্যবহারে ত্যাগে সহায়ক ঔষধও এদেশে সহজ লভ্য নয়। দেশের বিশাল জনগোষ্টীকে তামাক ও ধূমপান হতে বিরত রাখতে ’’তামাক বর্জন কার্যক্রম’’ জোরালোভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। সরকারী পৃষ্টপোষকতা ছাড়া এ কার্যক্রমকে জোরদারভাবে পরিচালনা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

তামাকজাত সামগ্রীর মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান ঃ
তামাকজাত সামগ্রীর মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদানের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে আমাদের দেশে লিখিত স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদানের বিধান রয়েছে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ নিরর বিধায় এই বিষয়টি খুব একটা কাজে আসছে না। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট পরিচালিত দেশের ৩০ টি জেলার ৩০৫০ জন ধূমপায়ীর মাঝে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্যসতর্কবানী : জনগনের প্রত্যাশা শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা যায়, ৭৪.৪% ধূমপায়ী বলেছে বর্তমান সতর্কবানী কোন প্রভাব ফেলছে না। “ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য তিকর” তা হতে ধূমপানে কি কি তি হয় তা বোঝা যায় কি না এ প্রশ্নের উত্তরে ৬৪.৪% ধূমপায়ী বলেছেন তারা বোঝেন না আর মাত্র ৩৫.৬% অংশ ধূমপায়ী বলেছেন তারা কিছুটা বোঝে। ৯৫.৫% ভাগ ধূমপায়ী বলেছে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবানী তা প্রভাব রাখতে সম্পূর্ণ রূপে সম হবে। তাই অধিকাংশ মানুষকে তামাকজাত দ্রব্যের তিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করতে আইন উন্নয়নের েেত্র ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। উল্লেখ বাংলাদেশ কনসোটিয়াম অন্য টোব্যাকো কন্ট্রোল (ক্যাব, মানবিক, প্রত্যাশা, ফুলকুড়ি, ওয়াক এই সংগঠনগুলোর একটি সমন্বিত প্রকল্প) তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদানের বিষয়ে জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালণ করে আসছে।

জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স শক্তিশালী করা:
দেশব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার ল্েয সরকার জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স গঠন করে। যা একটি প্রশংসনীয় এবং কার্যকরী সিদ্ধান্ত। সরকারী সংস্থা, তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠন, জেলা আইনজীবী সমিতি, গন্যমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে এই টাস্কফোর্স। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন এবং তামাক বিরোধী প্রচারণার েেত্র এই সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালণ করতে পারে। কিন্তু কার্যক্রম পরিচালনার েেত্র উপকরণ, অর্থ ও অন্যান্য কারিগরি সহযোগিতার অভাবে এ টাস্কফোর্স অনেক েেত্রই নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। টাস্কফোর্সগুলো সক্রিয় করার ল্েয নিয়মিত মনিটরিং, উপকরণ ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থ এবং কারিগরি সহযোগিতা সরকারের নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল:
তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার ল্েয সরকারের অপর একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হচ্ছে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতা এই সেলে কার্যক্রম বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণের সেলের প্রয়োজনীয় লোকজন, অর্থ ও কারিগরি অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে, এই সেল দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে।

তামাক কোম্পানির বেআইনী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ঃ
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনের পরবর্তীতে সময়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তামাক বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যায়, যা বড় ধরনের সফলতা। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো নিত্য নতুন কার্যক্রমের মাধ্যমে নিয়মিত তামাকের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। তামাক কোম্পানিগুলো আইনভঙ্গের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মাত্র ২ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোম্পানিগুলোর আইনভঙ্গের প্রেেিত কোন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কোম্পানিগুলো এই সুযোগে আইন সম্পর্কে বিভ্রান্তকর তথ্য পরিবেশ করছে। অনেক েেত্র তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীদের বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তকর তথ্যের মাধ্যমে হেয় প্রতিপন্ন করছে। তামাক কোম্পানিগুলো এ ধরনের আইনভঙ্গ কার্যক্রম ও বিভ্রান্তকর তথ্যে পরিবেশনের প্রেেিত কঠোর আইনি পদপে গ্রহণ করা জরুরি। আমরা আশা করি সরকার তামাক কোম্পানিগুলোর এ ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অচিরেই কঠোর পদপে গ্রহণ করবে।
তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করতে সরকারের নিকট সুপারিশ
১. তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন বা উন্নয়নের েেত্র নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ সংযুক্ত করা।
ক্স তামাকজাত দ্রব্যের সংঙ্ঘায় বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, গুল, জর্দ্দা, খৈনী, সাদাপাতা, সিগার এবং পাইপে ব্যবহার্য মিশ্রন (মিস্কার)সহ সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যকে সংযুক্ত করা;
ক্স তামাকজাত দ্রব্যের প্রত্য ও পরো বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা;
ক্স তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০% শতাংশ জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান;
ক্স বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, রেষ্টুরেন্টসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও জনসমাগমস্থলকে ধূমপানমুক্ত স্থান ঘোষণা করা;
ক্স সিনেমা, নাটক, প্রামান্যচিত্রসহ অন্য মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রচার বা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা;
ক্স সামাজিক দায়বদ্ধতা নামে তামাক কোম্পানির নাম, লগো ব্যবহার করে প্রমোশনার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা;
ক্স তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক বা কৌটার অনুরূপ বা সাদৃশ্যে অন্য কোন প্রকার দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা;
ক্স তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যে কোন নাগরিককে মামলা করার অধিকার প্রদান;
ক্স আইনভঙ্গের প্রেেিত তামাক কোম্পানিগুলোর জরিমানা ও শাস্তির পরিমান বৃদ্ধি করা;
ক্স তামাকের বিকল্প চাষ ও কর বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা প্রণয়নের বিধান সংযুক্ত করা;
ক্স তামাক কোম্পানিগুলো হতে স্বাস্থ্যকর নামে কর আদায় এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার;
ক্স কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিধি বৃদ্ধি করা;

২. তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির ল্েয একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং সকল তামাকজাত দ্রব্যেকে করের আওতায় নিয়ে আসা।
৩. তামাক-এর বিকল্প সফল উৎপাদনের কৃষকদের সহযোগিতার ল্েয নীতিমালা প্রণয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ।
৪. তামাক বিরোধী প্রচারণার ল্েয সরকারীভাবে পৃষ্টপোষকতা প্রদান।
৫. তামাক ব্যবহার ত্যাগে সহায়ক ব্যাপক কর্মসুচী গ্রহণ।
৬. তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০% জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান।
৭. জাতীয় ও স্থানীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স সক্রিয় করতে উপকরণ, কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।
৮. জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের লোকবল ও অন্যান্য কারিগরি সুবিধা নিশ্চিত করা।
৯. তামাক কোম্পানিগুলো আইন ভঙ্গের প্রেেিত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।


------------------

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন