সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০১০

সেবাখাত বিরাষ্ট্রীয়করনে প্রেক্ষাপট-জনগনের সেবা প্রাপ্তির অধিকার

উন্নয়ন যে কোন জাতি ও মানুষের পরম একটি কাঙ্গিত বিষয়। কিন' উন্নয়ন কি? আমরা কিসের উন্নয়রেন জন্য কাজ করছি? আমরা কি প্রত্যাশিত উন্নয়নের দিকে যাচ্ছি? এ বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই মত বিরোধ রয়েছে। তবে প্রচলিত অর্থে অনেকেই আমরা উন্নয়ন বলতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বুঝে থাকি। আর এখানেই প্রশ্ন অর্থনৈতিক উন্নয়ন কিসের জন্য? আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাই, যাতে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর নিশ্চিত করা যায়। কিন' বিগত দিনে আমাদের পদক্ষেপর ফলে কি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত হয়েছে? না আরো অনেক মানুষের জীবন অনিশ্চয়তা দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? সমাজে সুখ, শানিত্ম, সম্পৃতি কি বৃদ্ধি পেয়েছে? উন্নয়ন মানে কি শুধু সুউচ্চ দালাল কোটা, দামী গাড়ী, প্রশসত্ম রাসত্মা, আধূনিক যন্ত্রপাতি, দামী রেষ্টুরেন্ট, কিছু লোকের ধনী হওয়া, অর্থনৈতিক সুচক বৃদ্ধি, বিদেশী বিনিয়োগ? উন্নয়নের সুচক হওয়া উচিত রাষ্ট্র সুবিধা বঞ্চিত মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে কতটুকু সক্ষমতা অর্জন করতে সামর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রত্যেক মানুষের স্বপ্ন। আমরা সকলেই চাই এ দেশ এগিয়ে যাক সুখ ও সমৃদ্ধির দিকে। সরকার এ স্বপ্ন বাসবায়নের অন্যতম কান্ডারী। রাষ্ট্রীয় সম্পদ তথা রাষ্ট্র যন্ত্রের যথাপোযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে ’’রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতি মানুষ (কৃষক ও শ্রমিক) কে এবং অনগ্রসর জনগনের অংশ সমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা’’ এবং অনুচ্ছেদ ০৭ অনুসারে জনগনই প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতা উৎস, অনুচ্ছেদ ৪৭ অনুসারে বাংলাদেশে রাষ্ট্রয়াত প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এবং খনিজ সম্পদের মালিক জনগন। কিন' রাষ্ট্রীয় সেবাখাত বিরাষ্ট্রীয়করনের মাধ্যমে এ দেশের মানুষকে অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হতে নির্বিচারে শ্রমিক ছাটাই করার মাধ্যমে দেশে দারিদ্রতা ও বেকারত্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে।

অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলো বিশ্বব্যাংক, আই এম এফ, এডিবি-র মতো ঋণলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে তাদের স্বার্থে আমাদের মতো দেশের সেবাখাত বিরাষ্ট্রীয়করণের দিকে ঠেলে দেয়। আর এ দেশের মানুষের সম্পদ লুটপাট করে নেয় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে এ সকল কার্যক্রম গ্রহণ করে হলেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন আসেনি। জনগনের সম্পদ ব্যক্তির খাতে তুলে দিয়ে জনগনকে ব্যক্তির নিকট জিম্মি করার সংবিধান সম্পন্ন নয়। রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিরাষ্ট্রীয়করণের ফলে মানুষের অর্থনীতি, পরিবেশ, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। দেশ জিম্মি হয়ে পড়ে বহুজাতিক কোম্পানি ও গুটি কয়েক ব্যক্তির কাছে।

বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার কথা আমাদের সকলের জানা। বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী দেশ হওয়ার পরও আমেরিকা, ইংল্যান্ড এর মতো দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার প্রকোপ হতে রক্ষা পাচ্ছে না। এ সকল রাষ্ট্র ব্যাংক, রেলসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ব করেছে। আইসল্যান্ড তাদের সর্ববৃহৎ ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ব করেছে। এ সকল দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার প্রেক্ষিতে সরকার রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে অর্থ প্রদাণ করে এ সকল প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ব করেছে। আর ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশে একের পর এক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কোম্পানি করার নামান-রে বিরাষ্ট্রীয়করণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ বছর সরকার আর কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে বিরাষ্ট্রীয়করন না করার চিন-া করছেন, যা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন' উৎকণ্ঠা রয়েই যাচ্ছে কারণ আগামী বছর কি আবার কোম্পানির নামানত্মরে বিরাষ্ট্রীয়করণ করা হবে।

সেবাখাত বানিজিককরণ
অর্থনীতিতে সেবা খাতের অবদান অত্যেনত্ম দূ্রত হারে বেড়ে যাবার ফলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে আর্বিভুত হয়েছে । এ ধরনের একটি প্রেক্ষাপটে বিশ্ব বানিজ্য সংস'ায় সেবাখাত সংক্রানত্ম চুক্তি (জেনারেল এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ইন সার্ভিসেস’বা গ্যাটসের ) মাধ্যমে সেবা খাতকে আনুষ্টানিক ভাবে বিশ্ব বানিজ্য ব্যবস'ার অধীনে আনা হয় । এ চুক্তিতে যেসব যেসবসেবাখাত অনত্মর্ভুক্ত হয়েছে সেগুলোকে ১২ াট ভাগে ভাগ করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ১৬০টি উপখাত । মূল খাত গুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়িক সেবা যোগাযোগ সেবা ,নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল সেবা ,বিতরন সেবা,শিক্ষা সেবা,পরিবেশগত সেবা , আর্থিক সেবা ,স্বাস'্য সংক্রানত্ম ও সামাজিক সেবা ,পর্যটন ও ভ্রমন সংক্রানত্ম সেবা ,বিনোদন সেবা , এবং অন্যান্য সেব িযেগুলো অন্য কোথাও উল্লেখ্য করা হয়নি ।

১৯৯৫ সালে গ্যাটস প্রতিষ্ঠার সময়ে সিদ্বানত্ম হয় যে , প্রতিষ্টার পাচঁ বছরের মধ্যে আলোচনা শুরু করতে হবে । সে অনুযায়ী ২০০০সালের জানুয়ারি মাসের আলোচনা শুরু হয় । গ্যাটস প্রতিষ্টার সময়ে কিছু কিছু বিষয় অমীমাংসিত ছিল যে গুলো পরবর্তীতে আলোচনার সময় নিষ্পত্তি করার সিদ্ধানত্ম হয় । ২০০০থেকে ২০০১সালের মার্চ পর্যনত্ম আলোচনা চলার পর সেবাখাতে বানিজ্য উদারীকরনের একটি নীতিমালা প্রণীত হয় । এতে দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক , ও সার্বজনীন আলোচনার মাধ্যমে সেবাখাত উন্মুক্ত করার রূপরেখা ঠিককরা হয় । আর আলোচনার উপায় হিসাবে অনুরোধ-প্রসত্মাব পদ্ধতি নির্ধারন করা হয় । একটি দেশ অন্য একটি দেশকে সেদেশের কোন একটি সেবা খাত উন্মুক্ত করার অনুরোধ জানাবে । প্রত্যুত্তরে এই দেশটি কোন কোন খাত কি পরিমানে উন্মুক্ত করতে পারবে তার প্রসত্মাব দেবে ।


ভতুর্কী, ঋণ, সহায়তা, বিনিয়োগ এবং অনুদান
দেশের নাগরিক হিসেবে প্রতিটি নাগরিক কর প্রদান করে আসছে। সরকার কর আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নাগরিক হিসেবে এ কর প্রদানের উদ্দেশ্য আমরা কিছু সেবা পাবো। কিন' যদি রাষ্ট্রীয় সকল সেবাখাতগুলো বেসরকারী করে, তবে জনগনের কর প্রদানের উদ্দেশ্য বিষয়ে প্রশ্ন জাগে, জনগণ কেন কর প্রদান করবে? একদিকে রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য জনসাধারণকে চাপ দেওয়া এবং অপর দিকে রাষ্ট্রীয় সুবিধাসমূহ সংকুচিত করার কোনভাবেই রাষ্ট্রীয় নীতি হতে পারে না।

অর্থনীতির ভাষার পারম্যাচে অনেক ক্ষেত্রেই দেশের মানুষদের বিভ্রানত্ম করা হয়। ভতুর্কী, ঋণ, সহায়তা, বিনিয়োগ এবং অনুদান যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, এর ব্যয় বহন করতে হয় জনগনকে। অথবা বলা যেতে পারে জনগনের অর্থে এ সকল খাতে খরচ করা হয়। ঋণলগ্নিকারী সংস'াগুলো জনগনের কল্যাণে সেবাখাতে ভর্তুকীকে নিরুৎসাহিত করে থাকে এবং ভতুর্কীকে আর্থিক ক্ষতি হিসেবে অবহিত করে। কিন' অপর দিকে সরকারকে একের পর এক ঋণ গ্রহনের জন্য উৎসাহী করে থাকে। ঋণ ও ভতুর্কী উভয় খাতের অর্থই জনগনকে বহন করতে হয়।

ঋণলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পরামর্শে উন্নয়নে দোহাই দিয়ে সেবাখাত বিরাষ্ট্রীয়করণ করা হলেও বিগত কয়েক বছরের এ দেশের দরিদ্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩গুন, ২০০৯-১১ সালের মধ্যে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার লোক বেকার হবে এবং বৈদেশিক ঋণের পরিমান হ্রাস পেলেও, ঋণ অর্থ পরিশোধের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের ঋণের পরিমান ১ লক্ষ ৪২ হাজার কোটি টাকা এবং দেশের প্রতিটি শিশু ১১ হাজার টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করছে। বাংলাদেশকে ১ ডলার বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে সুদসহ পরিশোধ করতে হচ্ছে দেড় ডলার। আর এ সকল ঋণের একটি বড় অংশ গ্রহণ করা করা হয় বিশ্বব্যাংক, আই এম এফ, এডিবি-র মতো প্রতিষ্ঠানগুলো হতে অহেতুক খাতে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে ঋণ দিয়ে ব্যবসা করছে, অপর দিকে তাদের দোসর কোম্পানির হাতে এ দেশের মানুষের সম্পদ তুলে দিচ্ছে বিরাষ্ট্রীয়করণের মাধ্যমে। ২০০৭ সালের সরকার বৈদেশিক ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ করতে রাজস্ব বাজেটে প্রায় শতকরা ২৫ ভাগ ব্যয় করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এই আজব সুত্রে পিষ্ট হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশের প্রতিটি জনগন।

বেসরকারী খাতে র্দুনীতি নিয়ে ঋণলগ্নিকারী গোষ্টীর মৌনতা:
রাষ্ট্রীয়খাতে ব্যক্তি পর্যায়ের দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিরাষ্ট্রীকরণ করার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। অথচ বেসরকারীখাতে দূনীতির বিষয়ে ঋণপ্রদানকারী সংস'া, উন্নয়ন সহযোগি এবং দূনীতি বিরোধী সংস'াগুলো নিরব ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন বিদেশী মোবাইল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে হাজার কোটি হাজার ভিওআইপির সমস্যা থাকা স্বত্বেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সমপ্রতি অবৈধ ভিওআইপি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদেশী মোবাইল কোম্পানিগুলোকে জরিমানা করা হয়। অথচ বিগত কয়েক বছর ধরে কোম্পানিগুলো নগ্নভাবে এ ধরনের অপতৎপরতার মাধ্যমে দেশের রাজস্ব ক্ষতি করলেও তাদের বিরুদ্ধে এ সকল প্রতিষ্ঠান কোন উচ্চবাচ্য করেনি বরং অনেকে এই সময় গবেষণা করে বের করেছে রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠান বিটিটিবিতে কোন ব্যক্তি কি পরিমাণ দূনীতি করেছে। যদি সরকার কর্মকর্তা ঘুষ করে করে থাকে, তবে সে বেসরকারী কোম্পানি ঘুষ প্রদান করেছে তারাও দুনীতিবাজ। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যক্তি পর্যায়ে দূনীতি করা হলেও, বেসরকারীখাতে দূনীতি করা হয় কোম্পানির মাধ্যমে। কোম্পানির এ ধরনের কার্যক্রম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ। বেসরকারী কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপনে/উপঢৌকনে মগ্ন থাকার কারণে অনেক দূনীতি বিরোধী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নীরব ভূমিকা পালন করছে। কিন' একতরফা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রচারণা রাষ্ট্রীয় সেবা খাতকে দূর্বল করছে এবং বিদেশী কোম্পানী/প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবৈধভাবে জনগণকে শোষণ করতে সহযোগিতা প্রদান করছে।

রাষ্ট্রায়াত খাত শক্তিশালীকরণ উন্নয়নে পূর্বশর্ত

রাষ্ট্রায়াত খাত শক্তিশালীকরণ উন্নয়নে পূর্বশর্ত

উন্নয়ন যে কোন জাতি ও মানুষের পরম একটি কাঙ্গিত বিষয়। কিন' উন্নয়ন কি? আমরা কিসের উন্নয়রেন জন্য কাজ করছি? আমরা কি প্রত্যাশিত উন্নয়নের দিকে যাচ্ছি? এ বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই মত বিরোধ রয়েছে। তবে প্রচলিত অর্থে অনেকেই আমরা উন্নয়ন বলতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বুঝে থাকি। আর এখানেই প্রশ্ন অর্থনৈতিক উন্নয়ন কিসের জন্য?

বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রত্যেক মানুষের স্বপ্ন। আমরা সকলেই চাই এ দেশ এগিয়ে যাক সুখ ও সমৃদ্ধির দিকে। সরকার এ স্বপ্ন বাসবায়নের অন্যতম কান্ডারী। তাই সকলের প্রয়োজন, সরকারের এ কার্যক্রমকে বাস-বায়নের লক্ষ্যে সহযোগিতা করা। রাষ্ট্রীয় সম্পদ তথা রাষ্ট্র যন্ত্রের যথাপোযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। কিন' বিগত ২৫/২৬ বছর যাবত রাষ্ট্রীয় সম্পদগুলো চক্রান- করে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ফলে এ দেশের মানুষের অর্থনীতি, পরিবেশ, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। দেশ জিম্মি হয়ে পড়ছে বিদেশী কোম্পানি ও গুটি কয়েক ব্যক্তির কাছে।

বিশ্বব্যাংক, আইএম এফ তথা অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পরামর্শে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে সেবাখাত বিরাষ্ট্রীয়করণ করা হলেও বিগত কয়েক বছরে এ দেশের দারিদ্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ গুন, ২০০৯-১১ সালের মধ্যে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার লোক বেকার হবে এবং বৈদেশিক ঋণের পরিমান হ্রাস পেলেও, ঋণের অর্থ পরিশোধের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের ঋণের পরিমান ১ লক্ষ ৪২ হাজার কোটি টাকা এবং দেশের প্রতিটি শিশু ১১ হাজার টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করছে। বাংলাদেশকে ১ ডলার বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে সুদসহ পরিশোধ করতে হচ্ছে দেড় ডলার। আর এ সকল ঋণের একটি বড় অংশ গ্রহণ করা হয় বিশ্বব্যাংক, আই এম এফ, এডিবি’র মতো প্রতিষ্ঠানগুলো হতে, যা তাদের পরামর্শ মোতাবেক অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যবহার করতে হয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে ঋণ দিয়ে ব্যবসা করছে, অপর দিকে তাদের দোসর কোম্পানির হাতে এ দেশের মানুষের সম্পদ তুলে দিচ্ছে, বিরাষ্ট্রীয়করণের মাধ্যমে। ২০০৭ সালে সরকার বৈদেশিক ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ করতে রাজস্ব বাজেটে প্রায় শতকরা ২৫ ভাগ ব্যয় করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এই আজব সুত্রে পিষ্ট হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশের প্রতিটি জনগন।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে প্রতিবছর দরিদ্র হ্রাসের হার মাত্র ১%, হতদরিদ্র সংখ্যা বেড়েছে ৪০ লাখের বেশি, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আয় বৈষম্য অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতির হার ক্রমবর্ধমান এবং তা বেড়ে ২ অংকে স্পর্শ করেছে যা দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকদের জীবনধারণকে কঠিন করছে। বেকারত্বের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। বাজেটে বৈদেশিক ঋণ শোধের জন্য বরাদ্ধ রাজস্ব বাজেটের ২০.৫%। স্বাস'্যখাতে বরাদ্ধ বৈদেশিক দেনা পরিশোধের বরাদ্ধের অর্ধেক। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে স্বাস'্য খাতে বরাদ্ধ ৭০০ মিলিয়ন ডলার পক্ষানত্মরে ঋণ পরিশোধ খাতে বরাদ্ধ ১৫৬৩ মিলিয়ন ডলার। দেশে সাামজিক অবস'ার অবনতি হয়েছে, অপরাধ, মাদক ব্যবহার, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক সবকিছুর অবস'াই সনেত্মাষজনক নয়।

রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিরাষ্ট্রীকরণে প্রথমেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের দোহাই দেওয়া হয়। এই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সোনার হরিণের লোভে আমাদের অনেক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিরাষ্ট্রীকরণ এবং পরিবেশ ধ্বংস করে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হলেও দরিদ্রতা কতটুকু হ্রাস পেয়েছে বা দেশের মানুষের সত্যিকার উন্নয়ন কতটুকু হয়েছে তা বিবেচ্য বিষয়। যদি বৈদেশিক বিনিয়োগ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক ধরা হয়, তবে এখন প্রশ্ন করার সময়, বিগত দিনের বিনিয়োগের প্রেক্ষিতে কতজন মানুষের স্বাস'্য সেবা, শিক্ষার মতো মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর সামর্থ রাষ্ট্রের হয়েছে। নতুন নতুন রাসত্মা, দালান বা বাহারী বিজ্ঞাপন অবশ্যই রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের মাপকাটি নয়। দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষদের মৌলিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্র কতটুকু সেবা বা সহযোগিতা প্রদান বৃদ্ধি করতে পেরেছে এটিই রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের মাপকাটি হওয়া প্রয়োজন।

নতুন নতুন রাস-া, দালান বা বাহারী বিজ্ঞাপন অবশ্যই রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের মাপকাঠি নয়। দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষদের মৌলিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্র কতটুকু সেবা বা সহযোগিতা প্রদান বৃদ্ধি করতে পেরেছে এটিই রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের মাপকাঠি হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন' রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে সংকুচিত করে ব্যক্তি তথা কোম্পানির ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে গুটি কয়েক মানুষের উন্নয়ন হলেও, দরিদ্র, ক্ষুদা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ। ধনী ও গরীদের ব্যবধান বৃদ্ধি পাচেছ দিন দিন। ধনীরা দিন দিন ধনী হচ্ছে এবং দরিদ্ররা আরো দরিদ্র হচ্ছে। ধনী ও গরীদের ব্যবধান সৃষ্টি করছে সামাজিক অশানিত্ম ও অরাজগতা। এই ব্যবধান শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, ছড়িয়ে পড়েছে দেশে দেশে। গবেষণা দেশে ব্‌শ্িব জনসংখ্যার ৫ ভাগ যারা ধনী দেশে বাস করে এবং ৫ ভাগ যারা গরীব দেশে বাস করে তাদের মধ্যে আয়ের ব্যবধান ১৯৬০ থেকে ১৯৯০ এর মধ্যে দ্বিগুন হয়ে ৩০:১ তে গিয়ে পৌছায়। ১৯৯৮ সালে এটা হঠাৎ করে আবার বেড়ে যায় এবং ব্যবধান বেড়ে ৭৮:১ হয়ে য়ায়।
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে কি পরিমান শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। ঋণের টাকায় রাষ্ট্রীয় ব্যয় হ্রাস এবং উন্নয়নের নামে এ সকল প্রতিষ্ঠান বিরাষ্ট্রীয়করণ করা হয়। কর্মচূত্য করার হয় লক্ষ লক্ষ শ্রমিকদের। কিন' শিল্প উন্নয়ন কি হয়েছে। কি অবস'ায় আছে সেই সকল বিরাষ্ট্রীয়করণ বা বন্ধকৃত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। বিরাষ্ট্রীয়করনের ফল শিল্প কারখানার সম্পদ ব্যক্তিদের হাতে লুটপাত হয়েছে। তবে দেশের জনগেনর কি লাভ হলো। রাষ্ট্রের জনগনের সম্পদ এইভাবে বিরাষ্ট্রীকরন, বিরাষ্ট্রীয়করনের জন্য ঋণ গ্রহণ বা প্রদান কি দুনীতি নয়? বিশ্বব্যাংক বা এডিবিকে প্রশ্ন করা উচিত তাদের অকার্যকর পরিকল্পনা ও ঋণের উদ্দেশ্যকি রাষ্ট্রীয় সেবাখাতকে ধ্বংশ করা? আমাদের প্রত্যক্ষ উদাহরণ আদমীজুট মিল। আদমজীর বন্ধের প্রেক্ষিতে ১৭০০০ লোকের কর্মসংস'া হারায়। কিভাবে বাচবে এই লোকগুলো। তাদের পরিবারগুলো কিভাবে চলবে। কর্মসংস'ার বন্ধের প্রেক্ষিতে তাদের যে মৌলিক অধিকারগুলো ক্ষুন্ন হচ্ছে, এই দায় কিভাবে সরকার এড়িয়ে যাবে? কর্মসংস'ানহীনতা তাদের অনেকেই অপরাধী করবে না তার কিইবা নিশ্চিয়তা রয়েছে। এসকল লোকের অপরাধী হিসেবে তৈরি করার দায় কার। মানুষের কাধে ঋণের বোঝা চাপিয়ে এগুলো সমস্যা সৃষ্টি করার অর্থ যদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়। তবে তা উম্মাদনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

এ সমস্যা শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়। দেশের বাইরেও বিভিন্ন কোম্পানী ও সম্পত্তির মালিকানা গুটিকতক ব্যাক্তির হতে কুন্ঠিগত রাখার পরিক্লপনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বশ্বের বড় ২০০ টি কোম্পানি সমগ্র পৃথিবীর ৩০ ভাগ অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করলেও শ্রমবাজাররের মাত্র এক শতাংশ তারা কাজে নিযুক্ত রেকেছে। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৯ এর মধ্যে তাদের মুনাফা বেড়ে ৩৬২.৪% ভাগ হলেও শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ১৪.২ ভাগ। এসব কোম্পানি যত বড় হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে, তত তারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের কিনে ফেলছে এবং একই রকম চাকুরী তারা নি:শেষ করে দিচ্ছে। বর্তমানে আমাদের নিজেদের অসিত্মত্ব রক্ষার স্বার্থে কোম্পানী ও সম্পত্তির মালিকানা গুটিকতক ব্যাক্তির হতে কুন্ঠিগত রেখে রাষ্ট্রিয় সম্পত্তি বিরাষ্ট্রিয়করনে প্রবনতা প্রতিহত করতে হবে।

বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার কথা আমাদের সকলের জানা। বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী দেশ হওয়ার পরও আমেরিকা, ইংল্যান্ড এর মতো দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার প্রকোপ হতে রক্ষা পাচ্ছে না। এ সকল রাষ্ট্র ব্যাংক, রেলসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ব করেছে। সমপ্রতি আইসল্যান্ড তাদের সর্ববৃহৎ ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ব করেছে। এ সকল দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার প্রেক্ষিতে সরকার রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে অর্থ প্রদাণ করে এ সকল প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ব করেছে। আর ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশে একের পর এক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কোম্পানি করার নামান-রে বিরাষ্ট্রীয়করণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি সরকার আর কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে বিরাষ্ট্রীয়করন না করার চিন-া করছেন, যা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। খেয়াল রাখতে হবে কোন অবস'াতেই যেন আর কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে বিরাষ্ট্রীয়করন না করা হয়।

রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিরাষ্ট্রীয়করণের ফলে শুধুমাত্র পরিবেশ নয়, ক্ষতিগ্রসত্ম হচ্ছে অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং সর্বোপরি দেশের মানুষ। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বিভিন্ন কোম্পানির অনিয়ন্ত্রিত এবং অনৈতিক ব্যবসায় সর্বশানত্ম হচ্ছে মানুষ। সরকারী মনিটরিং সংস'াগুলোকে সুকৌশলে দূর্বল করার মাধ্যমে চিকিৎসা, ঔষধ এবং খাদ্যের মতো অত্যাবশকীয় জিনিসগুলোকে জিম্মি করে জনসাধারণকে প্রতারিত করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন সেবাখাতগুলোর উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করার ফলে বিদেশী কোম্পানিগুলো যোগাযোগ, শিল্প ও বাণিজ্য খাত হতে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে এবং সেই সাথে ধ্বংস করছে পরিবেশ ও সংস্কৃতি। কোম্পানিগুলোর অনৈতিক ও অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয়। বিরাষ্ট্রীয়করনের ফলে দেশের যোগাযোগ, স্বাস'্য, শিক্ষা, অর্থ, পরিবেশ সকল ক্ষেত্রই আজ জিম্মি অনৈতিক ব্যবসায়ীদের হাতে। খাদ্যে অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি, নিয়ন্ত্রণহীন যাতায়াত ভাড়া, চিকিৎসা খরচ বৃদ্ধি, ঔষধদের অনিয়ন্ত্রিত মূল্য, বীজ সংকট, মোবাইল কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক রেট, ব্যাংকগুলোর অযৌক্তিক চার্জ, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানহীন শিক্ষা ব্যবস'া ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণহীনতার ফসল। প্রশ্ন হচ্ছে, এই অবস'া হতে আমরা কি উত্তরন চাই?

যদি মানুষের উন্নয়ন করতে হয় তবে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। আর মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর ও সক্রিয় করার মাধ্যমেই এই অবস'া নিশ্চিত করা সম্ভব। কোম্পানির হাতে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো তুলে দেওয়া হলে, তা তাদের ব্যবসায় রূপানত্মর হবে। মানুষের সমস্যা হবে তাদের ব্যবসার উপাদান। আর এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। টাকার অংকে হয়তো জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বাড়বে, হয়তো বাহানী বিজ্ঞাপন ও সুউচ্চ অট্টালিকা ও দামি গাড়ি হবে। কিন' তার পিছনে আড়াল হয়ে যাবে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ। আমরা বিশ্বাস করি, অতীতের ভুল হতে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকগণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। রাষ্ট্র দায়িত্ব নেবে মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতের, যা মানুষকে প্রকৃত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতে রাষ্ট্রর দায়িত্বই উন্নয়নের পূর্বশর্ত

মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতে রাষ্ট্রর দায়িত্বই উন্নয়নের পূর্বশর্ত

উন্নয়ন যে কোন জাতি ও মানুষের পরম একটি কাঙ্গিত বিষয়। কিন' উন্নয়ন কি? আমরা কিসের উন্নয়ন জন্য কাজ করছি? আমরা কি প্রত্যাশিত উন্নয়ন দিকে যাচ্ছি? এ বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই মত বিরোধ রয়েছে। তবে প্রচলিত অর্থে অনেকেই আমরা উন্নয়ন বলতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বুঝে থাকি। আর এখানেই প্রশ্ন অর্থনৈতিক উন্নয়ন কিসের জন্য?

বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রত্যেক মানুষের স্বপ্ন। আমরা সকলেই চাই এ দেশ এগিয়ে যাক সুখ ও সমৃদ্ধির দিকে। সরকার এ স্বপ্ন বাস-বায়নের অন্যতম কান্ডারী। তাই সকলের প্রয়োজন, সরকারের এ কার্যক্রমকে বাস-বায়নের লক্ষ্যে সহযোগিতা করা। রাষ্ট্রীয় সম্পদ তথা রাষ্ট্র যন্ত্রের যথাপোযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। কিন' বিগত ২৫/২৬ বছর যাবত রাষ্ট্রীয় সম্পদগুলো চক্রান- করে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ফলে এ দেশের মানুষের অর্থনীতি, পরিবেশ, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। দেশ জিম্মি হয়ে পড়ছে বিদেশী কোম্পানি ও গুটি কয়েক ব্যক্তির কাছে।

বিশ্বব্যাংক, আইএম এফ তথা অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পরামর্শে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে সেবাখাত বিরাষ্ট্রীয়করণ করা হলেও বিগত কয়েক বছরে এ দেশের দারিদ্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ গুন, ২০০৯-১১ সালের মধ্যে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার লোক বেকার হবে এবং বৈদেশিক ঋণের পরিমান হ্রাস পেলেও, ঋণের অর্থ পরিশোধের পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের ঋণের পরিমান ১ লক্ষ ৪২ হাজার কোটি টাকা এবং দেশের প্রতিটি শিশু ১১ হাজার টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করছে। বাংলাদেশকে ১ ডলার বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে সুদসহ পরিশোধ করতে হচ্ছে দেড় ডলার। আর এ সকল ঋণের একটি বড় অংশ গ্রহণ করা করা হয় বিশ্বব্যাংক, আই এম এফ, এডিবি’র মতো প্রতিষ্ঠানগুলো হতে, যা তাদের পরামর্শ মোতাবেক অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যবহার করতে হয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে ঋণ দিয়ে ব্যবসা করছে, অপর দিকে তাদের দোসর কোম্পানির হাতে এ দেশের মানুষের সম্পদ তুলে দিচ্ছে, বিরাষ্ট্রীয়করণের মাধ্যমে। ২০০৭ সালে সরকার বৈদেশিক ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ করতে রাজস্ব বাজেটে প্রায় শতকরা ২৫ ভাগ ব্যয় করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এই আজব সুত্রে পিষ্ট হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশের প্রতিটি জনগন।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে প্রতিবছর দরিদ্র হ্রাসের হার মাত্র ১%, হতদরিদ্র সংখ্যা বেড়েছে ৪০ লাখের বেশি, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আয় বৈষম্য অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতির হার ক্রমবর্ধমান এবং তা বেড়ে ২ অংকে স্পর্শ করেছে যা দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকদের জীবনধারণকে কঠিন করছে। বেকারত্বের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। বাজেটে বৈদেশিক ঋণ শোধের জন্য বরাদ্ধ রাজস্ব বাজেটের ২০.৫%। স্বাস'্যখাতে বরাদ্ধ বৈদেশিক দেনা পরিশোধের বরাদ্ধের অর্ধেক। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে স্বাস'্য খাতে বরাদ্ধ ৭০০ মিলিয়ন ডলার পক্ষানত্মরে ঋণ পরিশোধ খাতে বরাদ্ধ ১৫৬৩ মিলিয়ন ডলার। দেশে সাামজিক অবস'ার অবনতি হয়েছে, অপরাধ, মাদক ব্যবহার, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক সবকিছুর অবস'াই সনেত্মাষজনক নয়।

রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিরাষ্ট্রীকরণে প্রথমেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের দোহাই দেওয়া হয়। এই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সোনার হরিণের লোভে আমাদের অনেক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিরাষ্ট্রীকরণ এবং পরিবেশ ধ্বংস করে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হলেও দরিদ্রতা কতটুকু হ্রাস পেয়েছে বা দেশের মানুষের সত্যিকার উন্নয়ন কতটুকু হয়েছে তা বিবেচ্য বিষয়। যদি বৈদেশিক বিনিয়োগ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক ধরা হয়, তবে এখন প্রশ্ন করার সময়, বিগত দিনের বিনিয়োগের প্রেক্ষিতে কতজন মানুষের স্বাস'্য সেবা, শিক্ষার মতো মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর সামর্থ রাষ্ট্রের হয়েছে। নতুন নতুন রাসত্মা, দালান বা বাহারী বিজ্ঞাপন অবশ্যই রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের মাপকাটি নয়। দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষদের মৌলিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্র কতটুকু সেবা বা সহযোগিতা প্রদান বৃদ্ধি করতে পেরেছে এটিই রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের মাপকাটি হওয়া প্রয়োজন।

নতুন নতুন রাস-া, দালান বা বাহারী বিজ্ঞাপন অবশ্যই রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের মাপকাঠি নয়। দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষদের মৌলিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্র কতটুকু সেবা বা সহযোগিতা প্রদান বৃদ্ধি করতে পেরেছে এটিই রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের মাপকাঠি হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন' রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে সংকুচিত করে ব্যক্তি তথা কোম্পানির ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে গুটি কয়েক মানুষের উন্নয়ন হলেও, দরিদ্র, ক্ষুদা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ। ধনী ও গরীদের ব্যবধান বৃদ্ধি পাচেছ দিন দিন। ধনীরা দিন ধনী হচ্ছে এবং দরিদ্রতা আরো দরিদ্র হচ্ছে। ধনী ও গরীদের ব্যবধান সৃষ্টি করছে সামাজিক অশানিত্ম ও অরাজগতা। এই ব্যবধান শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, ছড়িয়ে পড়েছে দেশে দেশে। গবেষণা দেশে ব্‌শ্িব জনসংখ্যার ৫ ভাগ যারা ধনী দেশে বাস করে এবং ৫ ভাগ যারা গরীব দেশে বাস করে তাদের মধ্যে আয়ের ব্যবধান ১৯৬০ থেকে ১৯৯০ এর মধ্যে দ্বিগুন হয়ে ৩০:১ তে গিয়ে পৌছায়। ১৯৯৮ সালে এটা হফাৎ কেের আবার বেড়ে যায় এবং ব্যবধান বেড়ে ৭৮:১ হয়ে য়ায়।
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে কি পরিমান শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। ঋণের টাকায় রাষ্ট্রীয় ব্যয় হ্রাস এবং উন্নয়নের নামে এ সকল প্রতিষ্ঠান বিরাষ্ট্রীয়করণ করা হয়। কর্মচূত্য করার হয় লক্ষ লক্ষ শ্রমিকদের। কিন' শিল্প উন্নয়ন কি হয়েছে। কি অবস'ায় আছে সেই সকল বিরাষ্ট্রীয়করণ বা বন্ধকৃত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। বিরাষ্ট্রীয়করনের ফল শিল্প কারখানার সম্পদ ব্যক্তিদের হাতে লুটপাত হয়েছে। তবে দেশের জনগেনর কি লাভ হলো। রাষ্ট্রের জনগনের সম্পদ এইভাবে বিরাষ্ট্রীকরন, বিরাষ্ট্রীয়করনের জন্য ঋণ গ্রহণ বা প্রদান কি দুনীতি নয়? বিশ্বব্যাংক বা এডিবিকে প্রশ্ন করা উচিত তাদের অকার্যকর পরিকল্পনা ও ঋণের উদ্দেশ্যকি রাষ্ট্রীয় সেবাখাতকে ধ্বংশ করা। আমাদের প্রত্যক্ষ উদাহরণ আদমীজুট মিল। আদমজীর বন্ধের প্রেক্ষিতে ১৭০০০ লোকের কর্মসংস'া হারায়। কিভাবে বাচবে এই লোকগুলো। তাদের পরিবারগুলো কিভাবে চলবে। কর্মসংস'ার বন্ধের প্রেক্ষিতে তাদের যে মৌলিক অধিকারগুলো ক্ষুন্ন হচ্ছে, তা দায় কিভাবে সরকার এড়িয়ে যাবে? কর্মসংস'ানহীনতা তাদের অনেকেই অপরাধী করবে না তার কিইবা নিশ্চিয়তা রয়েছে। এসকল লোকের অপরাধী হিসেবে তৈরি করার দায় কার। মানুষের কাধে ঋণের বোঝা চাপিয়ে এগুলো সমস্যা সৃষ্টি করার অর্থ যদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়। তবে তা উম্মাদনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

এ সমস্যা শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়। দেশের বাইরেও বিভিন্ন কোম্পানী ও সম্পত্তির মালিকানা গুটিকতক ব্যাক্তির হতে কুন্ঠিগত রাখার পরিক্লপনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বশ্বের বড় ২০০ টি কোম্পানি সমগ্র পৃথিবীর ৩০ ভাগ অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করলেও শ্রমবাজাররের মাত্র এক শতাংশ তারা কাজে নিযুক্ত রেকেছে। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৯ এর মধ্যে তাদের মুনাফা বেড়ে ৩৬২.৪% ভাগ হলেও শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ১৪.২ ভাগ। এসব কোম্পানি যত বড় হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে, তত তারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের কিনে ফেলছে এবং একই রকম চাকুরী তারা নি:শেষ করে দিচ্ছে। বর্তমানে আমাদের নিজেদের অসিত্মত্ব রক্ষার স্বার্থে ম্পানী ও সম্পত্তির মালিকানা গুটিকতক ব্যাক্তির হতে কুন্ঠিগত রেখে রাষ্ট্রিয় সম্পত্তি বিরাষ্ট্রিয়করনে প্রবনতা প্রতিহত করতে হবে।

বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার কথা আমাদের সকলের জানা। বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী দেশ হওয়ার পরও আমেরিকা, ইংল্যান্ড এর মতো দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার প্রকোপ হতে রক্ষা পাচ্ছে না। এ সকল রাষ্ট্র ব্যাংক, রেলসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ব করেছে। সমপ্রতি আইসল্যান্ড তাদের সর্ববৃহৎ ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ব করেছে। এ সকল দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার প্রেক্ষিতে সরকার রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে অর্থ প্রদাণ করে এ সকল প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ব করেছে। আর ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশে একের পর এক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কোম্পানি করার নামান-রে বিরাষ্ট্রীয়করণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি সরকার আর কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে বিরাষ্ট্রীয়করন না করার চিন-া করছেন, যা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। খেয়াল রাখতে হবে কোন অবস'াতেই যেন আর কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে বিরাষ্ট্রীয়করন না করা হয়।

রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিরাষ্ট্রীয়করণের ফলে শুধুমাত্র পরিবেশ নয়, ক্ষতিগ্রসত্ম হচ্ছে অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং সর্বোপরি দেশের মানুষ। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বিভিন্ন কোম্পানির অনিয়ন্ত্রিত এবং অনৈতিক ব্যবসায় সর্বশানত্ম হচ্ছে মানুষ। সরকারী মনিটরিং সংস'াগুলোকে সুকৌশলে দূর্বল করার মাধ্যমে চিকিৎসা, ঔষধ এবং খাদ্যের মতো অত্যাবশকীয় জিনিসগুলোকে জিম্মি করে জনসাধারণকে প্রতারিত করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন সেবাখাতগুলোর উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করার ফলে বিদেশী কোম্পানিগুলো যোগাযোগ, শিল্প ও বাণিজ্য খাত হতে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে এবং সেই সাথে ধ্বংস করছে পরিবেশ ও সংস্কৃতি। কোম্পানিগুলোর অনৈতিক ও অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয়। বিরাষ্ট্রীয়করনের ফলে দেশের যোগাযোগ, স্বাস'্য, শিক্ষা, অর্থ, পরিবেশ সকল ক্ষেত্রই আজ জিম্মি অনৈতিক ব্যবসায়ীদের হাতে। খাদ্যে অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি, নিয়ন্ত্রণহীন যাতায়াত ভাড়া, চিকিৎসা খরচ বৃদ্ধি, ঔষধদের অনিয়ন্ত্রিত মূল্য, বীজ সংকট, মোবাইল কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক রেট, ব্যাংকগুলোর অযৌক্তিক চার্জ, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানহীন শিক্ষা ব্যবস'া ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণহীনতার ফসল। প্রশ্ন হচ্ছে, এই অবস'া হতে আমরা কি উত্তরন চাই?

যদি মানুষের উন্নয়ন করতে হয় তবে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। আর মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর ও সক্রিয় করার মাধ্যমেই এই অবস'া নিশ্চিত করা সম্ভব। কোম্পানির হাতে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো তুলে দেওয়া হলে, তা তাদের ব্যবসায় রূপানত্মর হবে। মানুষের সমস্যা হবে তাদের ব্যবসার উপাদান। আর এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। টাকার অংকে হয়তো জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বাড়বে, হয়তো বাহানী বিজ্ঞাপন ও সুউচ্চ অট্টালিকা ও দামি গাড়ি হবে। কিন' তার পিছনে আড়াল হয়ে যাবে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ। আমরা বিশ্বাস করি, অতীতের ভুল হতে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকগণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। রাষ্ট্র দায়িত্ব নেবে মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতের, যা মানুষকে প্রকৃত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

যানজট, জলাবদ্ধতা: অতঃপর শিক্ষা?

যানজট, জলাবদ্ধতা: অতঃপর শিক্ষা?

ঢাকা শহরের যানজট ও জলাবদ্ধতা প্রাকৃতিক দুযোর্গসহ বিভিন্ন কারণে একটি বহুল আলোচিত সমস্যা। এ সমস্যা আজকের নয়, অনেক দিনেরই। এ দুই সমস্যার জন্য বিশ্বব্যাংক, এডিবি সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণ নিয়ে কি পরিমান গবেষণা আর প্রকল্প বাসত্মবায়ন হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তবে ঋণের টাকা এবং তথাকথিত পরিকল্পনাকারীদের পরামর্শের ফলাফল বর্তমানের অসহনীয় যানজট এবং জলাবদ্ধতা। পরিকল্পনা ও উন্নয়নের নামে অনেক সংস'া ও ব্যক্তির পকেট ভারী হলেও জনগনের কাধে চেপেছে ঋণ, যানজট ও জলাবদ্ধতা। বতর্মান সংকটের অবস'ায় ভয় হচ্ছে, আবার কোন প্রকল্প আসছে কিনা ! কোন একটি সমস্যাকে টিকিয়ে রাখা একটি ভাল ব্যবসা। ঢাকা শহরের যানজটও হয়তো এ ধরনের একটি বিষয়, তাই অব্যাহত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সাথে সাথে আসছে নতুন নতুন প্রকল্প, আর নিয়মিত ব্যবসা। এর পরিণতিই বা কি হবে? যদি বিগত দিনের মতো অনুউর্ব্বর অপরিপক্ক ভুল পরিকল্পনা ও পরামর্শ অনুসারে তাড়াহুড়ো করে লোক দেখানো কাজ করা হয়, তবে এই অবস'া আরো ভয়ংকর হবে, তা বলার অবকাশ রাখেন।

ঢাকা শহরের যানজটের কারণ জিজ্ঞেস করলে বলা হয় রিকশা ও ফুটপাত দখল। যদি বলি ভাই যে সকল রাসত্মায় রিকশা চলে না, সে সকল রাসত্মায় যানজটের কারণ কি? তাহলে বলবে এলোপাথারি বাস রাখা। ফুটপাত দখল করে রাখে হকার, বাস ও রিকশা নিয়ম না মেনে রাসত্মায় চলে, ফলে সৃষ্টি হয় যানজট। তাই বিগত দিনে যানজট নিয়ন্ত্রণে ঢাকা শহরের ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ, বাস নিয়ন্ত্রণ, মানুষকে পর্বত সমান ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে চলার ব্যবস'া, ট্রেনের সময় পরিবর্তন, বিভিন্ন রাসত্মায় রিকশা নিষিদ্ধ, ফুটপাত হতে হকার উচ্ছেদসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কিন' সমাধান আসেনি বরং বেড়েছে।

পাঠকগণ একটু লক্ষ্য করলে দেখুন যে, সকল বিষয়ে সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করা হয়েছে তার সবকিছুই সাধারন মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কিত। শুধু প্রাইভেট কার বিষয়ে কোন সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করা হয়নি। ঢাকার যে সকল রাসত্মায় বর্তমানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, সেই সকল রাসত্মায় শুধু প্রাইভেট গাড়ীর অধিপত্য। প্রাইভেট গাড়ী দখল করছে রাসত্মা আর ফুটপাত। কিন' এ ব্যক্তিগত যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য আজ পর্যনত্ম কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বরং জনগনের টাকায় পাকিং, ফ্লাইওভার মতো প্রকল্প গ্রহণ করে ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে বা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।

প্রাইভেট গাড়ী কেন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না, তা আশা করি সকলের অনুমেয়। তথাপিও একটু ব্যাখা করছি, প্রথমত যারা সিদ্ধানত্ম নেন তারা এই যানবাহনে চলাচল করেন। তারা তাদের সুবিধা নিশ্চিত করে বা করার মানসিকতা নিয়ে সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করেন। দ্বিতীয়ত এ সাথে জড়িত প্রাইভেট গাড়ী, তেল, পাকিং, ফ্লাইওভার সংক্রানত্ম ব্যবসা। ঋণপ্রদানকারী গোষ্ঠীর সহযোগিরা (যেমন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি) তারাও সকল কিছু নিয়ন্ত্রণে কথা বললেও প্রাইভেট গাড়ী নিয়ন্ত্রণে কথা বলে না। কারণ ঋণের ব্যবসার সাথে সাথে প্রাইভেট গাড়ী সংক্রানত্ম ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত করাই যেন তাদের অন্যতম দায়িত্ব। ঢাকা শহরের এই অব্যাহত যানজটের প্রেক্ষিতে তারা আবারো হয়তো ঋণ প্রদান করবে নতুন গবেষণা বা প্রকল্পের জন্য। সমাধান হোক না হোক তাদের ব্যবসা হবেই, কারণ ঋণের অর্থতো পরিশোধ করতে হবে দেশের জনগনকে। যানজট একটি লাভজনক ব্যবসা। তার পরিসমাপ্তি হবে তখন যখন মানুষের সুবিধা নিশ্চিত করে পরিকল্পনা করা হবে।

ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষ বাসে, হেটে, রিকশায় ও সাইকেলে যাতায়াত করে। কিন' স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যনত্ম বাস সার্ভিসের মান নিম্নমূখী হয়েছে। অধিকাংশ বাসে চলাচল এ প্রকার যন্ত্রণাদায়ক এবং অর্থদন্ডের শামিল। বাস কাউন্টারগুলোতে মানুষের দাড়ানো অবস'া কি তা নিজেই প্রতিদিন দেখছেন। আর একটি অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, কাউন্টারগুলোকে অব্যাহতভাবে স'ান ত্যাগ করতে হচ্ছে। যেমন সিটি কলেজে যে কাউন্টারগুলো ছিল তা এসেছে এলিয়েন্স ফ্রান্সিসেসর কাছে, ঝিগাতলা কাউন্টার চলে এসেছে ধানমন্ডি ৪/এ কাছে। তথাকথিত পরিকল্পনাকারী ও সরকারের সংশ্লিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এত টাকার ঋণের প্রকল্পের পর একটি মানসম্মত বাস কাউন্টারও নিশ্চিত করতে পারেনি, এ হচ্ছে জনগনের পরিবহন বাসের অবস'া।

আসুন রিকশার কথা দেখি, ঢাকায় বিভিন্ন রাসত্মায় রিকশা উচ্ছেদের সময়, জনগনকে তুষ্ট করতে ললিপপের মতো কিছু বিআরটিসি বাস নামানো হয়েছিল। এ সকল বাসগুলো কোথায় গিয়েছে? কেন গিয়েছে তা সকলের অনুমেয়। আমরা জনগনও তুষ্ট। ফলাফল নিউমার্কেটের সামনে প্রাইভেট গাড়ীগুলোর পার্কিং ব্যবস'া। আর আমরা সাধারণ জনগনের নিউমার্কেট থেকে কখনো কখনো সিটি কলেজ পুলিশ বক্স পর্যনত্ম সরু লম্বা রিকশার লাইনে অপেক্ষায়। সমপ্রতি দেখছি নিউমার্কেটে পিছনে একটি মার্কেট হয়েছে, ঐ মার্কেটের ১০০০ গাড়ী পার্কিংর ব্যবস'া রয়েছে, রয়েছে হেলিকাপ্টারের যাবার ব্যবস'া। বড়লোক ও প্রাইভেট গাড়ীর মালিকগণ কিভাবে যাবে তা বুঝেছি, কিন' ঐ মার্কেট পুরোপুরি চালু হলে সাধারণ মানুষ এই সরু রাসত্মায় রিকশা বা হেঁটে কিভাবে যাবে তা বোধগম্য নয়। এই সরু রাসত্মায় রাজউক কি বুঝে এতবড় একটি মার্কেটের অনুমোদন দিয়েছে তাও একটি বিস্ময়।

স্বাস'্য অর্থনীতি ও পরিবেশকে প্রধান্য দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যখন হাঁটাকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হচ্ছে। তখন আমাদের দেশে হাঁটার অবস'া কি? আমি আর এ বিষয়ে ব্যাখায় যাই না, কারণ আমরা সাধারণ মানুষকে নিয়মিত এই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই চলতে হয়। শুধু একটি বিষয়ে অদ্ভুত বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আর্কষণ করছি। ঢাকার যাতায়াত পরিকল্পনা নাকি তৈরি হচ্ছে, পথচারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে। তবে কেন একজন মানুষকে পর্বত সমান ফুটওভার ব্রিজ পার হতে হবে? কেন জ্রেবা ক্রসিং থাকবে না? পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে হেটে চলার জন্য মানুষকে এ ধরনের পর্বত অতিক্রম করতে হয়? পরিকল্পনাবিদ, সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কি একবারও ভাবেন না? একজন বৃদ্ধ, শিশু, মহিলা বা গর্ভবতী মানুষ কিভাবে এই পর্বতে উঠবে? নূন্যতম এককিলোমিটার হাটার পর কোন মানুষের পক্ষে কি এই পর্বত সমান ফুটওভার ব্রিজ অতিক্রম সম্ভব? হাতে কোন মালামাল থাকার পর কি এই ব্রিজ স্বাভাবিকভাবে অতিক্রম সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব নয় করো পক্ষে। তথাপিও কেন ঋণে টাকা নিয়ে জেব্রা ক্রসিংগুলো তুলে দিয়ে ফুটওভার ব্রিজ করা হচ্ছে তা বিস্ময়কর।

অদ্ভুত লাগে ভাবতে পথচারীদের অগ্রাধিকার প্রদানের এই অবস'া। সংবিধান অনুসারেও হেটে চলাচলকারী মানুষগুলো প্রধান্য পাওয়া উচিত। কিন' অদ্ভুত হলেও সত্য শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে, কষ্ট করে চলাচলকারী মানুষকে পর্বত সমান ব্রিজ অতিক্রম করতে হয়। আরো অদ্ভুত হচ্ছে অনেক স'ানে আইন প্রয়োগকারী লোকদের নিয়োগ করা মানুষকে ফুটওভার ব্রিজে উঠতে বাধ্য করা হচ্ছে । আমি নিজেও একটু হাটার পর এই পর্বতে উঠতে পারি না, হাপিয়ে উঠি, বেশ কয়েকবার বাকবিতন্ডা হয়েছে। গুটি কয়েক মানুষের বাহন গাড়ী অপেক্ষা একটি বড় অংশের মানুষ হেঁটে যায়, তাদের জন্য কেন জ্রেবা ক্রসিং থাকবে না? এই অধিকাংশ সাধারণ মানুষ কেন রাসত্মায় হাটতে অগ্রাধিকার পাবে না? অধিকাংশ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটিয়ে যানজট নিরসন আর বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠান, এগুলো মানুষের সাথে উপহাস বৈ অন্য কি? যারা ফুটওভার ব্রিজের জন্য পরিকল্পনা বা সুপারিশ করেন, তাদের পরীক্ষামূলক একমাস এই ব্যবস'া যাতায়াতের জন্য বাধ্য করা উচিত। যদি তারা নিজেরা এই ব্যবস'ায় চলতে পারেন, তবেই তা মানুষের জন্য উম্মুত্ত করা উচিত।

জলাবদ্ধতা ঢাকার একটি ভয়ংকর অবস'া। একটু বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। প্রশ্ন্‌ হচ্ছে এই জলাবদ্ধতা কেন সৃষ্টি হয়েছে? সহজ ও সরল উত্তর ভূল পরিকল্পনার কারণ। কিন' কারা, কেন, কিভাবে এই ভুল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তা কি তলিয়ে দেখা হবে? এই ভুল পরিকল্পনার জন্য কত অর্থ খরচ করা হয়েছে? কারা দিয়েছে? পরবর্তীতে সিদ্ধানত্ম গ্রহনের পূর্বে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা কি বাঞ্চনীয় নয়? কারণ এই জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বিশ্বব্যাংক এবং এডিবি-র মতো ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ঋণ প্রদানকারী এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের অর্থে বক্সকালভার্ট নির্মাণ করে ঢাকা খালগুলো ধ্বংস করছে সরকারী সংস'ার কতিপয় ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের দোসর কতিপয় পরিকল্পনাকারী। তখন বলা হয়েছিল এই বক্সকালভার্ট হলে নানা সুবিধা হবে, তাদেরই প্রতিষ্ঠান হয়তো পরিবেশ ইমপ্যাক্ট স্ট্যাডি ও এসেমেন্ট রিপোর্ট প্রণয়ন করছে। মন ভুলানো পরিকল্পনায় আমরা অনেকেই মুগ্ধ ছিলাম। পরিবেশকর্মীদের দাবিতে তখন অহেতুক চিৎকার মনে হয়েছে। আর ফলাফল এখন বর্তমান ঢাকার ৪৩টি খাল গিলে খেয়েছে তথাকথিত পরিকল্পনাকারী, অসাধু কর্মকর্তা এবং বিশ্বব্যাংক ও এডিবি-র মতো প্রতিষ্ঠানের চক্র। তাতে তাদের লাভ বৈ ক্ষতি হয়নি। প্রতিবছর আবার পরিস্কার ও উন্নয়নের নামে ঋণ দিয়েছে, লুটপাটও হয়েছে। এখন আবার ঋণ দেবে খালগুলো উদ্ধারে বা অন্যকোন উপায়ে এই জলাবদ্ধতা হ্রাস, ঋণের ব্যবসা অব্যাহত হয়তো থাকবে। কিন' আমাদের শিক্ষা কি? আমরা কি আবারো এভাবেই পরিকল্পনা ও সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করবো বা সায় দেবো?

সরকারী সংস'া ও ঋণপ্রদানকারী সংস'াগুলো আমাদেরই প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে মানুষের সমস্যাকে পুজি করে, ব্যবসা করছে একটি চক্র। আমাদের সমস্যাকে চক্র করে অব্যাহত ব্যবসা হতে মুক্তির পথ খুজতে হবে। তবে পরবর্তীতে যে কোন পরিকল্পনা পূর্বে একটি সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিগত দিনের প্রকল্পগুলো কেন ব্যর্থ হয়েছে? কারা লাভবান হয়েছে? যদি আমরা সুনিপুনভাবে বিগত কাজগুলো হতে শিক্ষা নিতে পারি তবে যানজট ও জলাবদ্ধতা হতে মুক্তি। নয়তো আবারো কোন প্রকল্প ব্যবসায়ীর পন্য হবে জনগন... চলতেই থাকবে যানজট ও জলাবদ্ধতার সমস্যা ও ব্যবসা।

প্রাইভেট গাড়ীর সেবাদাস

প্রাইভেট গাড়ীর সেবাদাস

সেবাদাস হচ্ছে এমন একটি শ্রেণী যার মূল কাজ হচ্ছে যে কোন মূল্যে মনিবের সার্বিক সুবিধা নিশ্চিত করা। সেবাদাসগন তার শ্রেণী অপেক্ষাও মনিবের সুবিধাকে অগ্রাধিকার প্রদান করে থাকে। আমাদের সমাজ ব্যবস'া ও মনমানসিকতাও কি সেদিকেই যাচ্ছে?
নগর পরিকল্পনায় কিছু মানুষের বাহনের সুবিধা নিশ্চিত করাই কি আমাদের মূল লক্ষ্য?

গত ২৪ আগষ্ট ২০০৯ তারিখে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদের দেখছি সিলেট রেজিষ্ট্রি মাঠ হকারমুক্ত করা হয়েছে। কিন' ব্যক্তির সহযোগিতায় এই মাঠটি হকারা ব্যবহার করে আসছিল। ফলে মাঠের পার্শ্বে থাকা পূর্ত ভবনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের গাড়ী পার্কিং করতে হতো রাসত্মার উপর। উচ্ছেদের পর মাঠটি এখন ব্যবহার করা হচ্ছে গাড়ী পাকিং করার জন্য। কারো মতে হয়তো বিষয়টি যৌক্তিক, আর এ প্রেক্ষিতে আমার মনে কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এইটি মাঠটিতে ৫০টির বেশি হকারের দোকান ছিল। যদি ধরে নেওয়া যায় প্রতিটি দোকানের কর্মচারী ও পরিবারের লোকেজন মিলে দোকান প্রতি ৪ জন করে লোক এই দোকানের উপর নির্ভর ছিল, তবে প্রায় ২০০ লোক এই দোকান হতে তাদের জীবিকা নির্ভাহ করত। কিন' হকার উচ্ছেদের পর, গাড়ী পাকিং করার কত লোকের জীবিকার সংস'া হয়েছে, কতলোক সুবিধা পাচ্ছে? রাষ্ট্র, সরকার এবং সমাজের কাছে প্রশ্ন, গাড়ীর পাকিং ও মানুষের জীবকার মাঝে কোনটির সুবিধাকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন?

ঢাকা শহরের বিভিন্ন স'ানে গাড়ীর পার্কিংএর ব্যবস'া রয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন জনগনের টাকায় মাত্র ১০-২০ টাকায় ঘন্টাখানেক এখানে গাড়ী রাখতে পারেন। এই জায়গাগুলো পাবলিক প্রার্পাটি। যদি প্রসত্মাব করা এই জায়গায় একই মূল্যে হকারদের বসার জন্য সুযোগ দেওয়া হবে কি না? এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই না আসবে। ঢাকা শহরের গাড়ী পাকিংকে যেমন একটি সমস্যা মনে করা হয়, তেমটি হকারদের বসার ব্যবস'া একটি তার চেয়ে দীর্ঘ ও পুরাতন সমস্যা। গাড়ীর জন্য ঢাকা শহরের বিভিন্ন স'ানে পাকিং সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে, কিন' হকারদের সুবিধার জন্য স'ায়ী ও স্বল্পমূল্যে এ ধরনের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফুটপাত দখল করে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত হকার উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কিন' ফুটপাত দখল করে রাখার জন্য গাড়ীর উচ্ছেদ কার্যক্রম হয় না। ঢাকা শহরের রাসত্মার একটি বড় অংশ দখল করে রাখে প্রাইভেট গাড়ী। যা একটি ব্যক্তিগত পরিবহন এবং একক মানুষের সুবিধাকে নিশ্চিত করে।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাসত্মায় রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়, বর্তমানে এ সকল রাসত্মার একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে প্রাইভেট গাড়ীর পাকিং। ঢাকা শহরের নিউমার্কেট এর ভিতরে দিয়ে রিকশা চলাচলের ব্যবস'া করা হয়েছে। একটি সাথে নোটিশ প্রদান করা রয়েছে রিকশা পাকিং নিষিদ্ধ, কিন' গাড়ী পার্কিং রয়েছে। গাড়ীর পাকিং করার জন্য এখানে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। কয়েক বছরে ধরে এখানে একটি মার্কেট গড়ে উঠছে। এই মার্কেট এ প্রায় ১০০০ টি দোকান রয়েছে। যেখানে শহরের ২ শতাংশ গাড়ী ব্যবহারকারীদের জন্য ..... গাড়ীর পাকিং রয়েছে। যখন এই মার্কেট চালু হবে তখন কি অবস'া হবে তা কল্পনা করা যায় না। তখন নতুন কোন সমস্যা দেখিয়ে এ রাসত্মায় শুধু রিকশা নিষিদ্ধ করা হবে। নিশ্চিত করা হবে প্রাইভেট গাড়ীর চলাচল।

ঢাকা শহরের প্রায় ... শতাংশ মানুষের প্রাইভেট গাড়ী রয়েছে। অবাক বিষয় হচ্ছে প্রতিটি মার্কেট ও বাড়ীতে প্রাইভেট গাড়ীর জন্য ... পরিমান জায়গা রাখা বাধ্যতামূলক। এটি হচ্ছে রাজউকের ইমারত বিধিমালার নিয়ম। অথচ শহরের.... শতাংশ পথচারী ... শতাংশ বাস ব্যবহারকারী ... শতাংশ রিকশা ব্যবহারকারীদের জন্য কোন ব্যবস'া নেই মার্কেট ও রাসত্মায়। প্রাইভেট গাড়ী ব্যবহার আজ সমাজের অভিজাত্যের প্রতীকী। আমাদের চিনত্মায় কে কোন ব্রান্ডের গাড়ী ব্যবহার করে তার উপর নির্ভর করে মানুষের কত উচু মানের। যার যত দামী ও আধুনিক গাড়ীর তার দাম তত বেশী। গাড়ীর হচ্ছে মানুষের অবস'ান নির্ণয়ের সুচক।

ঢাকা শহরের শিশুদের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে তাদের বিনোদনের অবস'া। খেলা জায়গার অভাবে তারা বেড়ে উঠছে টিভি, কম্পিউটার, শপিংমল সংস্কৃতিতে। যা তাদের মানসিক ও শারিরীক বিকাশকে ধ্বংশ করেছে। পরিবেশবাদীরা নিয়মিতই মাঠ পার্কের দাবি করে আসছে। কিন' ফলফল শূন্য। বরং মাঠগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে মেলা ও গাড়ীর পার্কিং এর নামে। সরকারের কর্তৃপক্ষের কাছে মাঠের আবেদন করা হলে বলে জায়গার সংকট। সমপ্রতি পত্রিকায় দেখলাম কাউরান বাজার উচ্ছেদ করে গাড়ীর পাকিং করা হবে। গাড়ীর পাকিং উচ্ছেদ করে শিশুদের খেলার জায়গা করা যায় না? সরকারে সংস'াগুলোর মধ্যে নূন্যতম শতাংশের মানুষের জন্য রাজউকের আরো বলিষ্ট উদ্যোগ রয়েছে। বাড়ীতের গাড়ী থাক আর নাই থাকা গাড়ীর জন্য জায়গা রাখতে হবে। ঢাকা শহরের এমন অনেক স'ান রয়েছে, যেখানের রাসত্মা সরু থাকার কারণে গাড়ী প্রবেশ করতে পারবে না। কিন' রাজউকের নিয়ম অনুসারে এ সকল স'ানে গাড়ীর জন্য জায়গা রাখতে হবে। রাজউকের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সুপষ্টভাবেই এই নির্দেশনা প্রদান করে। ঢাকা অনুকরণে দেশের অন্যান্য শহরেরও এধরনের নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন' প্রতিটি বাড়ীতে শিশু থাকা স্বত্বেও বাড়ীতে শিশুর খেলাধূলা বা বিকাশের জন্য কি ব্যবস'া থাকতে হবে, তার কোন নির্দেশনা নেই। তবে কি গাড়ী আমাদের শিশু অপেক্ষা জরুরি? একটি মানুষের জীবনে গাড়ী না থাকলেও চলে, কিন' একটি মানুষের শিশু না থাকলে কি সে শানিত্ম পায়? যদি গাড়ী শিশু অপেক্ষা আমাদের এত প্রিয় হয়ে থাকে, তবে সেই সকল ব্যক্তিদের জন্য উপদেশ শিশু গ্রহণ না করে একটি আধুনিক গাড়ীকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করুন। শিশুদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশের সুবিধার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে, প্রাইভেট গাড়ীর জন্য সুবিধা নিশ্চিত করা কোন সভ্য সমাজের চিনত্মা ও মানসিকতা হতে পারে না। যদি শিশুরা আগামী দিনের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি, তবে প্রাইভেট গাড়ীর সুবিধা নিশ্চিত না করে, শিশুদের পরিবেশ কিভাব নিশ্চিত করা যায় তা চিনত্মা করা উচিত।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪ এবং ১৫ অনুচ্ছেদর অনুসারে শ্রমিক ও অগ্রসর জনগোষ্ঠীকের শোষণ হতে মুক্তি প্রদান এবং মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস'া নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব্‌। অনুচ্ছেদ ২০ (১) অনুসারে কর্ম হচ্ছে কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য এবং সম্মানের বিষয়। আর যদি সংবিধান আমাদের রাষ্ট্রনীতিতে প্রাধন্য পায়, তবে অধিকাংশ জনগনের চলাচলের ব্যবস'া, শিশুদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশ এবং হকারদের কর্ম করার ব্যবস'া অগ্রাধিকার পাবে। বাংলাদেশ সরকার শিশু অধিকার সনদ, মানবাধিকার সনদসহ বিভিন্ন সনদের স্বাক্ষর করেছে। এ সকল সনদের মানুষকে রাষ্ট্র কর্তৃক বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সংবিধান ও এ সকল আনত্মর্জাতিক সনদের কোথাও প্রাইভেট গাড়ীকে সুবিধা প্রদানের কাজ উল্লেখ্য নেই। কিন' অবাক হলেও জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে অর্থ নিয়ে, ঋণ গ্রহণ করে, বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রাইভেট গাড়ীর জন্য পার্কিং, ফ্লাইওভার, বিশাল রাসত্মার করার পরিকল্পনা মসত্ম সরকারী সংস'াগুলো। কিন' অধিকাংশ মানুষের চলাচল, শিশুদের বিনোদন, দরিদ্র হকারদের কর্মসংস'ান, রিকাশ চলকদের ক্ষেত্রে সংস'াগুলোর চিনত্মা ও কর্মের সীমাবদ্ধতা বিস্ময়ের।

যানবাহন ও নগর পরিকল্পনার যে কোন সিদ্ধানেত্ম প্রথমেই চিন'া করা হয় জড় মনিব প্রাইভেট গাড়ী কিভাবে যাবে। প্রাইভেট গাড়ীর কিভাবে নিভিগ্নে চলাচল করবে? প্রাইভেট গাড়ীকে কোথায় থাকবে। কিন' প্রশ্ন মাত্র --- শতাংশ মানুষের বাহনের জন্য অধিকাংশ মানুষের অর্থ খরচ করে এত পরিকল্পনা কেন? রাষ্ট্রীয় ও আনত্মর্জাতিক নীতি অনুসারে অধিকাংশ মানুষের কেন অগ্রাধিকার পাবে না। তাই মনে হয় অভিজাত্য আর অহংকারে প্রতীকী দেখাতে গিয়ে আমরা হয়ে পড়েছি গাড়ীর সেবাদাস। সত্যিই ভাবতে আবাক লাগে একটি জড়বস' কিভাবে সভ্য ও জ্ঞানী সমাজের প্রতিনিধি মানুষকে সেবাদাসে পরিণত করতে পারে। হয়তো এ লেখা পড়ে কেহ কেহ প্রতিবাদ করবে এবং প্রাইভেট গাড়ীর পক্ষে যুক্তি দিতে চেষ্টা করবেন। এ কাজের পূর্বে বিনীত একটি অনুরোধ একবার ভাবুন আপনি কি অধিকাংশ মানুষের যাতায়াত সুবিধা, শিশুদের বিনোদন, হকারদের ব্যবসার সুবিধা, রিকাশ চলাচলের নিশ্চিত জন্য এভাবে যুক্তি উপস'াপন করবেন।

দেশের নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে রেলওয়ের বিরাষ্ট্রীয়করণ বন্ধ করতে হবে

দেশের নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস'া উন্নয়নে
রেলওয়ের বিরাষ্ট্রীয়করণ বন্ধ করতে হবে

পরিবেশ, অর্থনীতি, জনসেবা, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব, নিরাপত্তা, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস'ান এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকার রেলের মাধ্যমে পরিবহণ সুবিধা প্রদান করে দেশের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের পরিবহণ ব্যবস'া ও সার্বিক উন্নয়নে রেল যোগাযোগ আরো বিস-ৃত করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে পূর্ব-পশ্চিমাঞ্চাল রেল যোগাযোগ ব্যবস'া জোরদার সহ রাষ্ট্রীয় ব্যবস'াপনায় রেল উন্ন্‌য়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা জরুরী। সেক্ষেত্রে রেল পরিচালনার জন্য জাতীয় বাজেটে রেলের বরাদ্দ আরো বেশি দেওয়া প্রয়োজন।

ঋণ প্রদানকারী সংস'াগুলো পরিবহণ ব্যবস'ার উন্নয়নের নামে সড়কপথেই বেশিরভাগ ঋণ প্রদান করায় রেলওয়ের উন্নয়ন বরাবরই উপেক্ষিত থেকেছে। কিন' গবেষক ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতো সড়ক পথে অপরিকল্পিত বিনিয়োগ বর্তমানে পরিবেশ দূষণ, দুঘর্টনা, অর্থনৈতিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করেছে। বিগত দিনে ঋণ প্রদানকারী সংস'া কর্র্তৃক রেলওয়ের উন্নয়নে ঋণ প্রদান করেছে। কিন' এ সকল ঋণ সহায়তায় রেল উন্নয়নে স্টেশন রি মডেলিংয়ের নামে শত শত কোটি টাকা এরকম অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হয়েছে। স্টেশন আধুনিক করা অপেক্ষা রেল লাইন উন্নয়ন ও রেলে বগি, ইঞ্জিন বাড়ানো জরুরি ছিল। কিন' সে দিকে নজর দেওয়া হয়নি। একদিকে বলা হচ্ছে ঋণ ছাড়া চলা সম্ভব নয়, অপর দিকে এমন খাতে ঋণ দেওয়া বা নেওয়া হচ্ছে যা অপ্রয়োজনীয়। কথিত ঋণ সহযোগীদের পরামর্শ ও দিক নির্দেশায় এ ধরনের উন্নয়ন গৃহীত এবং হয়েছে এবং হচ্ছে।

দুঃখজনক হলেও সত্য যেসব খাতে বিনিয়োগ করলে রেলওয়ে সেবাকে জনগণের কাছে সহজলভ্য ও রেলের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সরাসরি সহায়ক হতো সেসব খাতে যথেষ্ট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে রেলের অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয়িত ঋণের টাকা সুদে আসলে পরিশোধ করতে হচ্ছে। বস'তপক্ষে ঋণপ্রদানকারী সংস'ার কারণে রেলের সত্যিকার উন্নয়ন বাধাগ্রসত্ম হচ্ছে। ঋণ গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই বিবেচনা করা প্রয়োজন এ অর্থ কিভাবে পরিশোধ করা হবে? এ ঋণ হতে কি পরিমান লাভ হবে? ঋণপ্রদানকারী সংস'াগুলোর সম্পর্কে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ এবং অনুযোগ সর্তকতার সাথে বিবেচনা করা দরকার। কারণ ইতিপূর্বে যে সকল প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে এডিবি এবং বিশ্বব্যাংক পরামর্শ দিয়েছে সেগুলো আশানুরূপ ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে। উদ্ভুত পরিসি'তিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের বৃহত্তর স্বার্থে ঋণ প্রদানকারী সংস'ার পরামর্শ ও শর্ত বর্জন করা প্রয়োজন। রেলের উন্নয়নে দেশের নীতিমালার আলোকে ঋণ নিতে হবে এবং এর প্রেক্ষিতে রেলের মাধ্যমে পরিবহণ ব্যবস'ার যথাযথ উন্নয়ন সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে প্রথমেই রেলের কোন কোন খাতে সংস্কার করতে হবে তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। কোন ঋণ প্রদানকারীর সংস'ার পরামর্শে বা শর্ত পূরণের জন্য ঋণ গ্রহণ করা হলে কাঙ্খিত সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়।

বিগত দিনে এডিবি, বিশ্ব ব্যাংক, আই এম এফ ঋণপ্রদানকারী স্‌ংস'ার পরমার্শে রেলওয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন বিনিয়োগ করা হয়েছে। এখন এ সব সংস'ার পরার্মশে ও চাপে রেলকে প্রাইভেটাইজ করার পায়তারা করছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে শুধু একটি রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠানই নয়। এ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য, সাংবিধানিক অধিকার, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, পরিবেশ, জ্বালানি, দারিদ্র বিমোচন, জনগণের অধিকারের বিষয়সমূহ। রেলের মতো একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ বেসরকারীকরণ করা হলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এবং অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসায় জনগণ একটি চক্রের কাছে জিম্মি হবে। রেলওয়েকে বেসরকারীকরণের ফলে বিশাল জনগোষ্ঠী এবং সম্পদের ক্ষতি করা হয়।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠার বেসরকারীকরণ সমাধান নয় বরং দেশীয় বিশেষ্ণগদের রেল উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারকে সঠিক ও যুগোপযোগী পরামর্শ দিয়ে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানকে সতিকার জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে রূপানত্মরের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। ঋণপ্রদানকারী সংস'াগুলোর চাপে রেলের বিরাষ্ট্রীয়করণ বন্ধে সরকারকে সঠিক পরামর্শ ও সমর্থন দিয়ে সহযোগিতা করা আমাদের সকলের কর্তব্য।

সুস্থ্য বাঁচাতে চাই হাঁটা, সংকুচিত হচ্চে পথ !

সুস'্য বাঁচাতে চাই হাঁটা, সংকুচিত হচ্চে পথ !

সকাল বেলা ঢাকা শহরের কিছু রাসত্মায় দাড়ালে দেখা যায়, হেঁটে চলা মানুষের জনস্রোত। এ সকল রাসত্মায় দাড়ালে হাটতে হবে না এমনিতেই মানুষের স্রোতে এক স'ান হতে অন্য স'ানে চলে যেতে হয়। এ অবস'া অধিকাংশ স্বল্প আয়ের মানুষের যাতায়াতের। অপর দিকে সকাল-বিকাল শহরের বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষ হৃদরোগ, অতিরিক্ত মোটা হওয়া, স্ট্রোকসহ নানা সমস্যা হতে মুক্তি পেতে মাঠ পার্কগুলোতে হেঁটে থাকেন। তার বাইরে কিছু মানুষ অনেক যাদের হাঁটা প্রয়োজন হলেও হাটতে পারেন না প্রতিবন্ধকতার কারণে। এ সকল শ্রেণীর মধ্যে প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধি, মহিলা শিশু অন্যতম। এ অবস'া থেকেই অনুমান করা যায় হাঁটার অবস'া ভাল নয়। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রাইভেট গাড়ী, ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে যানজট, পরিবেশ দুষণ, জ্বালানি সংকটসহ নানা সমস্যাগুলো। অধিকাংশ মানুষ হেঁটে চলাচল করলেও অগ্রাধিকার পাচ্ছে না হাঁটার ব্যবস'া।

এক সময় ঢাকা শহরের প্রতিটি রাসত্মায় হেটে পারাপারের জন্য জ্রেবা ক্রসিং ছিল। কিন' পথচারী অগ্রাধিকার দেওয়ার নামে মাত্র কযেক বছরের এ সকল জেব্রা ক্রসিংগুলো তুলে দিয়ে স'াপন করা হয়েছে ফুটওভার ব্রিজ। তিনতলা এই ফুটওভার ব্রিজগুলো কিভাবে পথচারী সহায়ক কার্যক্রম হয় তা বোধগম্য নয়। কারণ এ সকল ব্রিজ দিয়ে বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী, মহিলা, শিশু এবং মালামাল বহনকারী ব্যক্তিদের চলাচল কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাছাড়া একটি সুস'্য সবল মানুষ যদি কিছু দূর হাটেন তার শরীর ও মনের পক্ষেও এ পর্বত সমান ফুটওভার ব্রিজ অতিক্রম করা সম্ভব নয়।

এ শহরে যেখানে অধিকাংশ মানুষ হেটে চলাচল করে তাদের জন্য জ্রেব্রা ক্রসিং বৃদ্ধি না করে কেনই বা পর্বত সমান ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করা হচ্ছে না সত্যিই বিস্ময়ের বিষয়। সবচেয়ে অবাক বিষয় হচ্ছে বিগত কয়েক বছরের এ ধরনের অনেকগুলো ব্রিজ তৈরি করার পর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে মানুষ ব্যবহার না করার জন্য। তথাপিও নতুন নতুন তৈরি হচ্ছে ফুটওভার ব্রিজ। কিছু স'ানে আইনপ্রয়োগকারী সংস'ার লোকদের দিয়ে বাধ্য করানো হচ্ছে ব্রিজে উঠতে। ফুটওভার ব্রিজের স'ানে ব্যারিকেট তৈরি করা হচ্ছে যাতে মানুষ যত্রতত্র দিয়ে পারাপার না হতে পারে। যদি প্রশ্ন করার হয় একজন বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী, মহিলা, শিশু এবং মালামাল বহনকারী ব্যক্তি কিভাবে এ পর্বত অতিক্রম করবে। তার উত্তর কেনই দিতে পারবে না। বিগত দিনে ফুটওভার ব্রিজগুলো ভাঙ্গা এবং বল প্রয়োগ করেও ব্রিজ ব্যবহারে জনগনকে উৎসাহীত না করার ফলাফল হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া জনগনের জন্য আরাম দায়াক ও সুবিধাজনক নয়। অর্থাৎ পরিকল্পনাবিদগন মানুষের সুবিধা ও মতামত বিবেচনা না করে এ সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। যা হাঁটার মানুষের প্রতি উপহাস বা অবহেলা হিসেবে প্রতীয়মান হয়। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থে সরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অধিকাংশ মানুষের সুবিধার প্রতি অবহেলা অসংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক।

এবার আসা যাক হেটে চলাচল কেন আমাদের জন্য জরুরি। কেনই বা এ বিষয় এত বক্তব্য ও তর্কের অবতারণা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যাতায়াত একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুস'্য-স্বাভাবিকভাবে যাতায়াত করার জন্য সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস'া থাকা প্রয়োজন। ক্ষেত্রবিশেষে পাবলিক পরিবহন, অটোরিকশা, রিকশা, সাইকেল, হাঁটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তুলনামূলক বেশী দূরত্বের যাতায়াতের ক্ষেত্রে যেমন পাবলিক পরিবহন ব্যবহার করতে হবে, তেমনি স্বল্প দুরত্বের যাতায়াতের ক্ষেত্রে হাঁটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। শুধুমাত্র স্বল্প দুরত্বের যাতায়াতের ক্ষেত্রেই নয় হাঁটার সাথে আমাদের শারীরীর সুস'্যতার সম্পর্ক রয়েছে।

আমাদের শারীরীক সুস'তা নিশ্চিত করার জন্য শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাবারই নয় তার সাথে দরকার আমাদের নিয়মিত হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করা। আমাদের শারীরীক সুস'্যতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত ব্যায়াম করা। কিন' আমাদের কর্মব্যসত্ম জীবনে ব্যসত্মতার কারনে নিয়মিত ব্যয়াম করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া ব্যয়ামের জন্য যে সমসত্ম জিম রয়েছে তাও ব্যায় সাপেক্ষ। অথচ আমরা যদি একটু সচেতন হয়ে স্বল্প দুরত্বের যাতায়াতের ক্ষেত্রে হেঁটে চলাচল করি তাহলে ব্যয়ামের জন্য আলাদা করে সময় এবং অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন হবে না। তাছাড়া রোগ প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত হাঁটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিশ্বস্বাস'্য সংস'ার মতে সুস'্য থাকার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষ্যে ৩০ মি হাঁটা ও ওজন বৃদ্ধি হ্রাসের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ১ ঘন্টা হাঁটা উচিত।

নিয়মিত হাঁটার ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, মোটজনিত সমস্যাসহ নানা জটিল রোগসহ অনেক অসংক্রমক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত তিনটা গবেষনায় দেখা গেছে নিয়মিত ৩০ মিনিট হাঁটলে হৃদরোগে আক্রানত্ম হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৯% থেকে ৪৮% ভাগ পর্যনত্ম কমায়। এবং ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৮ তারিখে "ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ ঃযব অসবৎরপধহ গবফরপধষ অংংড়পরধঃরড়হ," একটা গবেষনা প্রকাশ করে যা ৯০৬ জন মহিলাকে নিয়ে করা হয়। গবেষনায় দেখা যায় নিয়মিত হাঁটাচলা না করা বা কায়িক শ্রমের অভাবে ৭৬% মহিলা ওজন জনিত সমস্যায় ভুগছে এবং ৪১% মহিলা অতিরিক্ত ওজন জনিত সমস্যায় ভুগছে, যা ভবিষতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাছাড়া এমন অনেক অসংক্রমিক অনেক রোগ আছে যা হেঁটে চলাচলের মাধ্যমে প্রতিরোধ সম্ভব। তাছাড়া নিয়মিত হাঁটার ফলে শারীরীক সুস'্যতার সাথে সাথে মানসিক স্বাস'্য ঠিক রাখা সম্ভব।

সুস'্যভাবে বেঁচে থাকাই নয়, হাঁটার মাঝে রয়েছে এক ধরনের আনন্দ। কারণ হাঁটতে গিয়েই পরিচিতজন এবং নতুন মানুষের সাথে খুব সহজে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব। এর মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়ন সম্ভব। নিয়মিত হেঁটে চলাচল করলে আশপাশের সকলের সাথে সখ্যতা সৃষ্টি হয়, যাতে সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্পৃতি বৃদ্ধি পায়। ফলে আনন্দের সাথে অবসর সময় কাটানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়। এতে শারীরীক সুস'্যতার সাথে সাথে মানসিক স্বাস'্য ভাল থাকে। তাছাড়া ধনি গরিব নির্বিশেষে হেঁটে চলাচল করলে সামাজে সমতা সৃষ্টি হয়।

শুধুমাত্র বড়দের জন্যই নয় শিশুদেরও সুস'্যভাবে বেড়ে ওঠার জন্য হাঁটা গুরুত্বপূর্ণ। এখনকার শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাদের ওপর নির্ভর করে আগামী দিনের দেশের ভবিষ্যত। অতএব তাদের সুস'্যভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অথচ বর্তমানে আমাদের শিশুরা বড় হচ্ছে ইট-কাঠের তৈরী আবদ্ধ ঘরে। তাদের সময় কাটানো মাধ্যম হচ্ছে টিভি, কম্পিউটার, ভিডিও গেমস ইত্যাদি। উপযুক্ত খেলাধুলা ও হাঁটার পরিবেশ না থাকার কারনে আশে পাশে কারো সাথে মেলামেশার সুযোগ পাচ্ছে না। যা তাদের সুষ্ঠু বিকাশের ক্ষেত্রে অনত্মরায়। এমনকি স্কুলে বা অন্য কোথাও যাতায়াতের জন্য বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে প্রাইভেট গাড়ী। স্কুলগুলোতেও পর্যাপ্ত খেলা ধুলার পরিবেশ নাই। ফলে শিশুদের প্রয়োজনীয় শারীরীক ব্যায়াম হচ্ছে না। অথচ শিশুদের যদি হেঁটে স্কুলে যাতায়াতের ব্যবস'া করি একদিকে যেমন শারীরীক ব্যয়াম হবে তেমনি আশে পাশে মানুষের সাথে মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি হবে। যা তাদের সুষ্ঠু ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয়।

হাঁটার অনেক সুফল থাকলেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকার কারনে মানুষ অনেক ক্ষেত্রে হাঁটতে নিরুৎসাহীত হচেছ। ঢাকায় যেখানে যাতায়াতের ৮৪% যাতায়াত হচ্ছে হেঁটে ও জ্বালানীমুক্ত যান দ্বারা সেখানে দেশের পরিবহন পরিকল্পনা করা হচ্ছে যান্ত্রিক যানবাহনকে গুরুত্ব প্রদান করে। যান্ত্রিক যানবাহনকে সার্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে জনসাধারনের উপর বাড়তি ভাড়া বাবদ অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষা, স্বাস'্য, প্রভৃতি সেবার উপর। অথচ আমাদের শারীরীক সুস'তা, পরিবেশ বান্ধব, আর্থিক সাশ্রয়ী হওয়া স্বত্বেও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে হাঁটাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। তৈরী করা হচ্ছে না হাঁটার উপযুগী পরিবেশ এবং ফুটপাত। তাছাড়া যেসমসত্ম ফুটপাত রয়েছে তাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাঙ্গা, অসমান, পথচারী বান্ধব নয়, এবং ফুটপাতগুলোতে গাড়ী পার্কিং করে রাখা হয়। ফুটপাত ও রাসত্মায় গাড়ী পার্কিং করায় অনেক ক্ষেত্রে ঝুকিপূর্ণভাবে মানুষ ফুটপাত ছেড়ে রাসত্মার মধ্য দিয়ে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে। ফুটপাতের পাশে ডাস্টবিন, ফেলে রাখা কনস্ট্রাকশনের জিনিসপত্র-ময়লা-আবর্জনা পরিবেশকে অস্বাস'্যকর করছে। এসমসত্ম কারনে পথচারীরা নির্বিঘ্নে হেঁটে চলাচলের ক্ষেত্রে বাধাগ্রস' হচ্ছে এবং হেঁটে চলাচলে নিরুৎসাহীত হচ্ছে।

দেশের বাইরে যে সমসত্ম দেশ সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস'া গড়ে তুলেছে সে সব দেশে হাঁটাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং হেঁটে চলাচলের জন্য সেখানে প্রশসত্ম ফুটপাত রয়েছে। শুধু তাই নয় প্রতিবন্ধি, শিশু ও বয়স্কদের হেঁটে চলাচলের আলাদা নীতিমালা আছে। তাছাড়া দেশের বাইরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে পথচারীদের অগ্রাধীকার দেওয়া হয়। পথচারী হেঁটে যাচ্ছে দেখলে গাড়ির গতি থামিয়ে তাকে আগে যেতে দেয়া হয়। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ পথচারীদের আকৃষ্ট করে তাই পথচারীদের চলাচলের সুবিধার্তে প্রচুর পরিমানে গাছ লাগানো হয়। নদীর পাশদিয়ে, সেতুতে রেল লাইনের পাশাপাশি হাঁটার জন্য আলাদা লেন বরাদ্দ আছে। হাঁটার পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের বেশ কিছু শহরে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে যান্ত্রিক যানবাহন নিষিদ্ধ থাকে।

অবকাঠামোগত পরিবেশ মানুষের মনের উপর প্রভাব ফেলে তাই হাঁটার জন্য সুন্দর, মনোমুগ্ধকর আর প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরী করতে হবে। আর এর জন্য রাসত্মার দুইপাশে হাঁটার জন্য প্রশসত্ম ফুটপাত তৈরী করতে হবে। যে সমসত্ম রাসত্মায় ফুটপাত রয়েছে তার বেশীরভাগই ভাঙ্গা এবং অসমান, পথচারী বান্ধব নয়। তাই নির্বিঘ্নে হাঁটার সুবিধার্থে ফুটপাত পথচারী বান্ধব করতে হবে। তাছাড়া বেশীর ভাগ রাসত্মায় ফুটপাতগুলোতে গাড়ী পার্কিং করে রাখা হয়। ফলে নির্বিঘ্নে হেঁটে চলাচলের ক্ষেত্রে পথচারীরা বাধাগ্রস' হয়। তাই ফুটপাতে গাড়ী পার্কিং নিষিদ্ধ করতে হবে। ফুটপাতে ছায়ার জন্য পর্যাাপ্ত গাছ লাগানো এবং রাতে হেঁটে চলাচলের সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যাবস'া থাকতে হবে। ফুটপাতের পাশে ডাস্টবিন সরিয়ে ফুটপাত ময়লা আবর্জনামুক্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে।

জনগনের হাসপাতালে ইউজার ফি,রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য সেবার দায়িত্ব বিঘ্নিত

জনগনের হাসপাতালে ইউজার ফি
রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য সেবার দায়িত্ব বিঘ্নিত

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রায়াত জনগণের হাসপাতালগুলোতে ইউজার ফি বৃদ্ধি এবং এ সকল অর্থ চিকিৎসক, নার্স, টেকিনিশিয়ান এবং হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা ও দারিদ্রতা ক্রমাগত বৃদ্ধি এবং জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো সরকারের অব্যাহত উদ্যোগের প্রেক্ষিতে জনগণের অর্থে পরিচালিত রাষ্ট্রীয় হাসপাতালগুলোতে ইউজার ফি বৃদ্ধি অযৌক্তিক এবং অসাংবিধানিক। দেশের স্বাস্থ্য অধিকার রক্ষায় কার্যরত প্রতিটি ব্যক্তি, সংগঠন আমরা অনতিনবিলম্বে এ কার্যক্রম বন্ধে সরকারকে আহবান জানাই। জনগনের হাসপাতালে ইউজার ফি গ্রহণের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিকার লংঙ্ঘনসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হবে। ইউজার ফি বন্ধের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরছি।

ইউজার ফি ও বন্টন ব্যবস্থা
সিটি কর্পোরেশনে অবস্থিত বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে ইউজার ফির সমুদয় টাকার শতকরা ৪০ ভাগ পরিচালক, অধ্যাপক বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তারা, উপপরিচালক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী পরিচালক, সহকারী অধ্যাপক বা সমমানের কর্মকর্তারা, মেডিক্যাল অফিসার বা সমমানের কর্মকর্তারা, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর মধ্যে সমভাবে বন্টন করা হবে। সরকারী কোষাগারে জমা হবে শতকরা ৩০ ভাগ। আর অবশিষ্ট ৩০ ভাগ রক্ষণাবেক্ষণে খরচ করা হবে। মেডিক্যাল হাসপাতালগুলোতে শতকরা ৫০ ভাগ টাকা উপরিল্লেখিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে সমভাবে খরচ করা হবে। আর সরকারী কোষাগারে শতকরা ২৫ ভাগ এবং অবশিষ্ট ২৫ ভাগ রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ খরচ করা হবে।

জেলা সদর হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে শতকরা ৫০ ভাগ টাকার মধ্যে উপপরিচালক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী পরিচালক, সহকারী অধ্যাপক বা সমমানের কর্মকর্তারা সমভাবে ভাগ পাবেন। আর সিভিল সার্জন/তত্ত্বা‌বধায়ক, সিনিয়র কনসালটেন্ট, জুনিয়র কনসালটেন্ট, আরএস/আরপি, আরএমএ বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তারা সমভাবে শতকরা ১৫ ভাগ, মেডিক্যাল অফিসার বা সমমানের কর্মকর্তারা ১০ ভাগ, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীরা সমভাবে শতকরা ১৫ ভাগ ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা সমভাবে শতকরা ১০ভাগ পাবে। অবশিষ্ট ২৫ ভাগ সরকারী কোষাগারে এবং শতকরা ২৫ ভাগ রক্ষণাবেক্ষনে সমভাবে ব্যায় করা হবে। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা/জুনিয়র কনসালটেন্ট বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তারা শতকরা ১৫ ভাগ, মেডিক্যাল অফিসার ও সমমানের কর্মকর্তরা সমভাবে শতকরা ১০ ভাগ ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা সমভাবে ১০ ভাগ পাবে। উপজেলা হাসপাতালে শতকরা ২০ ভাগ টাকা সরকারী কোষাগারে এবং শতকরা ২০ ভাগ রক্ষণাবেক্ষণে ব্যায় করা হবে।

জনগনের স্বাস্থ্য উন্নয়ন একটি দেশের সার্বিক উন্নতির অন্যতম প্রধান শর্ত। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, পুষ্টিস্তর উন্নয়ন এবং চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নের অন্যতম কার্যক্রম। রোগপ্রতিরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দেশে কার্যক্রম খুবই নূন্যতম হলেও, চিকিৎসা বিষয়ক সরকারী ও বেসরকারী কার্যক্রম ব্যাপক। তবে প্রশ্ন হচ্ছে কতটুকু সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য ব্যয় হচ্ছে। সরকারের চিকিৎসা বাজেটের একটি বড় অংশ ব্যয় বেতনভাতা ও অবকাঠামো খাতে। সীমিত সম্পদ ও লোকবল এবং অধিক রোগীর চাপে রাষ্ট্রয়াত্ব হাসপাতাগুলোতে চিকিৎসা সেবা খুবই নাজুক।


অপর দিকে অধিকাংশ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা একটি রমরমা বাণিজ্য হিসেবে দেখা হয়। চিকিৎসার মাধ্যমে জনগণকে সেবা প্রদান অপেক্ষা, চিকিৎসা কেন্দ্রে আসা জনগণ হতে নানা উপায়ে অর্থ বের করে নিয়ে আসাই হচ্ছে বেসরকারী চিকিৎসা সেবার বর্তমান অবস্থা। আর এ অবস্থার প্রেক্ষিতে যদি রাষ্ট্রায়াত্ত্ব তথা জনগণের হাসপাতালেও চিকিৎসা বাণিজ্য শুরু হয় তবে এ দেশের মানুষের বাঁচার পথ থাকবে না।

রাষ্ট্রায়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠানের অর্থ ইউজার ফি-র নামে বন্টন ব্যবস্থা কতটুকু সাংবিধানিক?
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এ রাষ্ট্রের প্রতিটি সম্পদের মালিক জনগণ। প্রচলিত অর্থে সরকারী হাসপাতালগুলোর মালিকও জনগণ। জনগণ তাঁর সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী বা সেবক নিয়োগ করেন। যাদের জনগণের প্রদত্ত্ব কর হতে রাষ্ট্রীয় আইন ও নিয়মানুসারে বেতনভাতা ও অন্যান্য সুবিধ প্রদান করা হয়। তারপরও যদি রাষ্ট্রয়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠানে আয়কৃত অর্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে বিতরণ করা হয় তবে বিষয়টি জনগনের সেবক না, মুনাফাভোগী এ দুইয়ের মাঝে সাংঘষির্ক হয়ে দাড়ায়। রাষ্ট্র জনসেবকদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা দিচ্ছে জনগনের সেবা প্রদানের জন্য। তাদের কেন আবার রাষ্ট্রায়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠানের আয়ের ভাগ প্রদান করা হবে। যদি আয়ের এ ধরনের ভাগ আইন, বিচার, শিক্ষা, পরিবেশ, অর্থ, প্রশাসন, পুলিশ সকল বিভাগে চালু হয় তবে দেশের অবস্থা কি হব? আমরা অবশ্যই চাই একজন চিকিৎসক মানসম্মত বেতন পান। তার মানসম্মত বেতনের জন্য আইনের মাধ্যমে বেতনের কাঠামোর পরিবর্তন ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা যেতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রয়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করে জনগণের কর হতে অর্থ গ্রহণ করে, রাষ্ট্রায়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠানের আয় ভাগ করা কোনভাবেই উচিত নয়।

প্রজাতন্ত্রের কমর্চারীর পদকে একটি লাভজনক মুনাফালোভী পদে রূপান্তরের প্রেক্ষিতে জনগণের সেবা ও সাংবিধানিক অধিকার লংঙ্ঘিত হবে। জনগণের জন্য নির্মিত স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালগুলো রূপান্তর হবে জনগণের নির্যাতনের হাতিয়ার রূপে। কেননা হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য কর্মচারীরা তাদের লাভ বৃদ্ধির জন্য সরকারকে সেবামূল্য বৃদ্ধির জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারে। যত সেবামূল্য বাড়বে, ততই বাড়বে তাদের লাভ। এখানে সেবা প্রদানের মান বাড়ানোর চেয়ে সেবাপ্রদানকারীর লাভ বৃদ্বিই মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে।

ইউজার ফি প্রচলনের অন্তরালের ঋণপ্রদানকারী সংস্থার অভিপ্রায়
সেবাখাত বিরাষ্ট্রীয়করণের লক্ষ্যে দাতাসংস্থা নামক এডিবি, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের মতো ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলো নানাভাবে সরকারকে চাপ প্রদান করে আসছে। বিশ্বব্যাংকের একটি ঋণের প্রকল্পের আওতায় ইউজার ফি প্রচলনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জনগণের হাসপাতালগুলোতে ইউজার ফি প্রচলনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু প্রচন্ড বিরোধীতার কারণে এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়। পরবর্তীতে আবার এ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।

ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলো ডিভাইড এন্ড রুল নীতি প্রয়োগ করে সরকারকে অকার্যকর বা অদক্ষ প্রমাণের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব খাতগুলো বিরাষ্ট্রীয় করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। যদি আমরা বিগত দিনে তাকালে দেখবো টেলিযোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য বা পাটশিল্পের মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারা প্রথমে ঋণের টাকায় পরামর্শ প্রদান করেছে। পরবর্তীতে তাদের পরামর্শে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব খাতের ব্যবস্থাপনাগুলো ধ্বংশ এবং অনিয়মের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুনীতি ও ক্ষতি ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে ক্ষতি ও অদক্ষতা দেখিয়ে এ সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারীখাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। তাদের পরামর্শের কারণে দুনীতি ও অব্যবস্থাপনা বৃদ্ধি পেলেও তারা দোষ চাপায় সরকারের উপর। সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে। আমরা এগুলো জানার পরও একই ভুল করছি।

স্বাস্থ্যখাতকে পুরোপুরি বাণিজ্যিকীকরণ করার অভিপ্রায়ের উদ্দেশ্যে ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলো ইউজার ফি চালুর প্রস্তাব করেছে। চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও কর্মচারীদের ইউজার ফি-র একটি অংশ দেয়ার কথা বলে প্রথমেই একটি স্বার্থন্বেষী গ্রুপ তৈরি করা হচ্ছে, যারা নিজেদের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে। এটি তাদের ডিভাইড এন্ড রুল নীতির একটি অংশ।

পরবর্তীতে সংগত কারণেই বিগত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই এ অর্থের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার জন্ম নেবে। ফলে ঋনপ্রদানকারী সংস্থাগুলো একসময় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে এবং ব্যবস্থাপনা বেসরকারীখাতে ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করবে। বতর্মানে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব হাসপাতালগুলোতে নুন্যতম অর্থ থাকার পর যে পরিমান দুনীতি বা অব্যবস্থাপনা রয়েছ, ইউজার ফি বন্টনের ব্যবস্থার পর তা আরো বৃদ্ধি পাবে। প্রশাসনের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।

জনগনের স্বাস্থ্য খরচ বাড়বে ও স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি করবে
দেশের জনগণকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকসহ নানা ধরণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সরকার স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোরায় পৌছে দেয়ার সিদ্বান্ত নিয়েছে। আর এ অবস্থায় ইউজার ফি বৃদ্ধির মতো কার্যক্রম সরকারের ইচ্ছাকে বাধাগ্রস্ত করবে।

সাধারণত যে মাপকাঠিতে দরিদ্রতা নিরূপন করা হয়, দরিদ্রতা তার চেয়ে আরো ভয়ংকর। তথাকথিত অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে মধ্যবিত্ত বা উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী বলে যাদের চিহ্নিত করা হয় বতর্মান চিকিৎসা বণিজ্যের নিকট তারাও দরিদ্র। দেশের অনেক পরিবার আছে যারা চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। পত্র-পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে চিকিৎসার সহযোগিতা পাবার আকুতি। অনেক মানুষ আছে লজ্জায় তাদের সমস্যা বলতে পারে না। হাসপাতালগুলোর সামনে গেলেই দেখা যায় মানুষগুলোর ভোগান্তি। ঘরের মুরগি, গরু, চাল বা অন্য পণ্য অথবা উপকরণ বিক্রি করে কিংবা ধার করে চিকিৎসা করাতে এসেছে মানুষ। তাদের উপর ইউজার ফি বোঝা চাপিয়ে সেই টাকা আবার বন্টনের ব্যবস্থা। সাধারণ মানুষের অর্থ শোষণ করে এ ধরনের অর্থের ভাগ ও ব্যবস্থাপনা সত্যিই লজ্জার এবং অপমানের।

দেশের অনেক সাধারণ মানুষ চিকিৎসকদের নিকট চিকিৎসা না করিয়ে ঝাড়-ফুক বা অন্য কোন ভ্রান্ত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করছে। যদি ইউজার ফি এভাবে বৃদ্ধি হয় তবে সরকারের স্বাস্থ্য কার্যক্রম বাস্তবায়ন কোনভাবেই সম্ভব হবে না। কারণ সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রায়াত্ত্ব হাসপাতালগুলো হয়ে অর্থশোষনের যন্ত্রে পরিণত হবে। মানুষ উপায় দেখে ভ্রান্ত চিকিৎসার দ্বারস্ত হবে।

স্বাস্থ্য বাজেট, সেবাখাত ও জনগন
বাংলাদেশর জনগণ তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ভ্যাট ও ট্যাক্সের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করে থাকে। এ অর্থ প্রদান করে সে আশা করে কিছু সুবিধা পাবে। কিন্তু দিন দিন অর্থনৈতিক উন্নয়নের উম্মাদানায় বেসরকারী বা ব্যক্তি মালিকানা খাত বৃদ্ধি পেলেও হ্রাস পাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সেবাখাত। অর্থনৈতিক উন্নয়নের দোহাই দিয়ে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পরিণত হয়েছে জনগণের শোষণের যন্ত্রে। সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রায়াত্ত্ব খাতগুলো দিনদিন ধ্বংশ করা হচ্ছে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে। স্বাস্থ্য এমনি একটি খাত। অনেকেই বলে থাকেন আমাদের অর্থ কম। অর্থ না থাকার কারণে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রশ্ন করা উচিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের উম্মাদনায় আমরা যে পরিবেশ ধ্বংশ করছি এবং রাষ্ট্রয়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করছি তাতে জনগণের কি লাভ হয়েছে?



অর্থনৈতিক উন্নয়নের দোহাই দিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করলেও জনগণের সুবিধা মূলত সংকোচন করা হয়েছে। ২০০২-০৩ অর্থ বছরের স্বাস্থ্যখাতে বাজেট ছিল ৬.৪৭%, ২০০৯-১০ সালে ছিল ৬.১৫% এবং ২০১০-২০১১ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬.০। অর্থাৎ বরাদ্ধ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। অথচ বৈদেশিক ঋণ, পেনশনভাতা, প্রজাতন্ত্রের কর্মীদের বেতন, বেসরকারী কোম্পানীগুলোর সুবিধার জন্য বাজেটে অর্থ বা প্রণোদনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্নখাতে জনগণের সেবার জন্য অর্থ প্রদানকে ভর্তুকী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অনেকেই বলেন থাকেন ভতুর্কী প্রদান করা উচিত নয়। জনগণের অর্থ জনগণের সেবায় না প্রদানের নানা টালবাহান করা হয়। অনেকেই সেবাখাতে অর্থপ্রদানকে অহেতুক মনে করেন। বিনামূল্যে কোন কিছুই দেয়া উচিত নয় সে সকল কর্মকর্তা বা ব্যক্তি বিশ্বাস করেন তাদের নিকট প্রশ্ন এ রাষ্ট্র কেন প্রজাতন্ত্রের সেই সকল কর্মীদের পেনশন প্রদান করবে যারা কাজ হতে অবসর নিয়েছেন। প্রজাতন্ত্রের অবসর প্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন যেমন যৌক্তিক, তেমনি জনগনের সেবাখাতে সরকারের আর্থিক যোগান সৃষ্টি যৌক্তিক ও দায়বদ্ধতা।

আমাদের সুপারিশ
এডিবি, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের মতো ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলো তাদের ঋণের ব্যবস্থার জন্য অনেক পরামর্শই দেবে। কিন্তু অনেক কিছু মানা না মানা আমাদের নিজস্ব বিষয়। যেমন দুনীতি দমন আইন এবং টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে তাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। আমরা আশা করি জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে সরকার, জনসেবক ও প্রজাতন্ত্রের কর্মীগণ রাষ্ট্রায়াত্ত্ব স্বাস্থ্য সেবা বৃদ্ধিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। বর্তমান ইউজার ফি ব্যবস্থা দেশের সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রয়াত্ত্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংশ, দুনীতি, অব্যবস্থাপনা বৃদ্ধি এবং জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে।

আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই, যে দেশ হবে পৃথিবীর অন্যতম দেশ হিশেবে পরিচিত হবে যেখানে রাষ্ট্র জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে। স্বাস্থ্য যেখানে মানবাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। স্বাস্থ্য বাণিজ্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, রোগপ্রতিরোধ এ দেশের স্বাস্থ্যনীতির মূলভিত্তি। পৃথিবী আমাদের নিকট হতে শিখবে স্বাস্থ্যসেবা কিভাবে নিশ্চিত করা যায়।

সুপারিশ
• ইউজার ফি গ্রহণ ও বন্টন পদ্ধতি অবিলম্বে বাতিল করা।
• স্বাস্থ্যখাতের হতে আয়ের অর্থ আলাদা তহবিলে সংরক্ষন করা হবে ।
• পরিবেশ দুষণকারী প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যক্ষতিকারী পণ্য যেমন কোমল পানীয়, তামাকজাত পন্য, ফাস্টফুড বা জান্কফুড হতে অতিরিক্ত কর আদায় করে তা স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করা।
• স্বাস্থ্যখাতে এডিবি, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের মতো ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলোর পরামর্শের প্রভাব ও ফলাফল মূল্যায়ণ করা।
• জনগণের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে একটি গনমুখী জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি প্রণীত হবে।

নিরাপত্তাহীনতা ও স্বাস্থ্য ঝুকিতে পথচারী

নিরাপত্তাহীনতা ও স্বাস্থ্য ঝুকিতে পথচারী
জেব্রা ক্রসিংগুলো নিশ্চিত: ফুটওভারব্রিজ পথচারীবান্ধব নয়

সিটিকর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজউক এবং ট্রাফিক পুলিশের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে নিরাপত্তাহীনতা ও স্বাস্থ্য ঝুকিতে পথচারী। আর্দশ নগর যোগাযোগ ব্যবস্থায় পথচারী পারাপারের চলাচলের জন্য ভাল ফুটপাত ও জেব্রা ক্রসিং থাকার প্রয়োজন হলেও, ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকায় জেব্রা ক্রসিং নেই। অপর দিকে ফুটপাতগুলো পরিবেশ সম্মত নয় এবং ফুটপাত দখলের জন্য হকারদের দোষী করা হলেও, ঢাকা অধিকাংশ ফুটপাত এখন দখল করে রাখবে প্রাইভেট গাড়ী। পথচারী পারাপারের জন্য ঢালাওভাবে ফুটওভার ব্রিজ তৈরির কথা বললেও, ফুটওভারব্রিজ মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ, মালামালবহনকারী বা প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যব্যহারের অনুনোপযোগী। অপর দিকে প্রচন্ড শব্দদূষণ ও বায়ুদুষণের কারণে পথচারীরা শারিরীক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ফুটপাত, জ্রেবা ক্রসিং, বায়ু ও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সিটিকর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজউক এবং ট্রাফিক পুলিশ বিভাগগুলোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকলেও এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে পথচারীদের অধিকার রক্ষায় নেই কোন সমন্বয় ও পরিকল্পনা। দিনের পর দিন পরিকল্পনা আর প্রকল্পের সুপারিশে বন্দী পথচারীদের অধিকার। প্রকল্প, লোকদেখানো কার্যক্রম আর গতানুগতিক কার্যক্রমের কাছে আসহায় প্রায় অধিকাংশ মানুষের চলাচল ব্যবস্থা।

ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রণীত এসটিপি পরিকল্পনায় পথচারীদের অগ্রাধিকার প্রদানের কথা বলা হলেও, বাজেটে তার কোন বরাদ্ধ নেই। ফুটপাত ভাঙ্গাগড়া এবং হকার উচ্ছেদের মাঝেই ফুটপাত উন্নয়নের কাজ সীমাবদ্ধ। পরিবেশবিদ ও নগর যাতায়াত গবেষকদের মতে ফুটপাতগুলোকে পথচারীবান্ধব করতে গাছের ছায়া, বসার ব্যবস্থা, নির্দিষ্ট দুরুত্বে টয়লেটের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পথচারীদের জন্য ফুটপাত নিরাপদ এবং আকৃষ্টময় করতে ফুটপাতের পাশে হকারদের লাইসেন্স-র এর মাধ্যমে বসার ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেন। গবেষকদের মতো পথচারীদের হাটাঁর অভ্যাস বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার যানজট নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার বিষয়কগুলো নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালণ করতে পারে।

এসটিপি পরিকল্পনায় পথচারীদের অগ্রাধিকার থাকলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যানবাহনের সুবিধা এবং বানিজ্য নির্ভর প্রকল্প ফ্লাইওভার, পার্কিং, ওভারপাস ইত্যাদি ব্যবসা নির্ভর প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত। রাজউক মার্কেট বা আবাসন প্রকল্পে গাড়ীর পার্কিং সুবিধা নিশ্চিত করলেও, পথচারীদের যাতায়াতের জন্য কোন নির্দেশনা প্রদানের করছে না। সিটিকর্পোরেশন, ট্রাফিক পুলিশ এবং রাজউকের উদাসীনতা বা অবহেলার ঢাকার মতো মেগাসিটি পথচারীদের নিরাপত্তা বিঘ্ন হচ্ছে। রাস্তা পরাপার করতে গিয়ে মানুষ আহত হচ্ছে। শিশু, বৃদ্ধ, মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য এ শহরের হাটার পরিবেশ নেই।

শব্দদুষণ ও বায়দুষণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম বিভিন্ন প্রকল্পেই সীমাবদ্ধতা। বাস্তবায়নে অধিদপ্তর কখনো কখনো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। শব্দদুষণ ও বায়দুষনের জন্য জরিমানার ক্ষমতা পরিবেশ অধিদপ্তরের নিকট থাকায় ট্রাফিক পুলিশ শব্দদুষণ ও বায়দুষনের ক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না।