শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১১

জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রায় তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধিতে সকল জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন চাই


জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রায় তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধিতে
সকল জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন চাই

তামাক ব্যবহারের প্রত্য ফল হিসেবে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৭,০০০ জন মৃত্যুবরণ করছে এবং প্রতি বছর ১২,০০,০০০ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত প্রধান ৮টি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রোগীর চিকিৎসা, অকালমুত্য, পঙ্গুত্বের কারণে বছরে দেশের অর্থনীতিতে ১১০০০ কোটি টাকার তি হচ্ছে।

তথাপিও বিগত কয়েক বছরের অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেলেও তামাকজাত দ্রব্যের দাম সে অনুসারে বৃদ্ধি পায়নি বরং কমেছে। সস্তায় তামাকজাত দ্রব্য প্রাপ্তির কারণে মানুষের মধ্যে তামাক ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, গড়ে ১০% মূল্য বৃদ্ধিতে উচ্চ আয় ও নিম্ন আয়ের দেশসমূহে ধূমপায়ী এবং ধূমপানজনিত মৃত্যু উল্লেখ্যযোগ্য হারে হ্রাস পায়।

বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ৪৩.৩% (৪১.৩ মিলিয়ন) প্রাপ্ত বয়স্ক লোক তামাক ব্যবহার করে। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে রায় এবং নিরুৎসাহিত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মতো কার্যকর পদপে গ্রহণ করা জরুরি।

অধিক জনসংখ্যার সীমিত ভুখন্ডের এ দেশ। খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। অপরদিকে তামাক কোম্পানিগুলোর প্ররোচনার কারনে তামাক চাষ অগ্রাসীভাবে বিভিন্ন খাদ্য ভান্ডারের জমি দখল করে নিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭৪০০০ হেক্টর জমিতে তামাক হচ্ছে। বিগত ২ বছরে তামাকচাষ প্রায় ৬৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভান্ডার বলে পরিচিত চলনবিল এখন দখল করে নিচ্ছে তামাক চাষ। পাবর্ত্য এলাকায় এ বিষের ছোয়া রন্ধে রন্ধে।

শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বেই তামাক কোম্পানিগুলো শ্রমিকের সংখ্যা ও কর্মসংস্থান এর বিষয়গুলো তুলে কর বৃদ্ধির বিরোধী করে থাকে। বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ হলে ১৮.৭% চাকুরি বৃদ্ধি পাবে। গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিবছরের বিড়ির পিছনে যে পরিমান টাকা (২৯১২ কোটি টাকা) খরচ হয় তা দিয়ে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে। এ গবেষণা অনুযায়ী বিড়ির বার্ষিক খরচ দিয়ে ৪৮৫ কোটি ডিম অথবা ২৯ কোটি ১ কেজি ওজনের মুরগী, অথবা ২৯ ল গরু অথবা ১৪ ল টন চাল অথবা ২৩ ল রিকশা কিনা সম্ভব।


গবেষণায় দেখা যায় সিগারেটের উপর ৭৯% নির্ধারণ করা হলে এবং বিড়ির উপর ২৬% কর বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার ২০১০-২০১১ অর্থ বছরের সিগারেটে হতে ৯০৩ কোটি টাকা আয় করতে পারাত, যা উক্ত সময়ের রাজস্বের অতিরিক্ত ২০ শতাংশ আয় করতে পারে।

তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মাধ্যমে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব সরকার প্রয়োজনে দরিদ্র লোকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় করতে পারে। প্রায়শই কোম্পানিগুলো অনেক টাকা রাজস্ব দেয়া বলে নিজেদের জাহির করতে চায়। আমাদের মনে রাখা দরকার, কোম্পানিগুলো মূলত সংগৃহীত ভ্যাট রাজস্ব খাতে জমা দেয়, ভ্যাট পুরোটা জনগনের টাকা। মাত্র ১৫% ভ্যাটের টাকা রাজস্ব খাতে দিয়ে, সরকারের উপর রোগ ও অসুস্থ্যতার বোঝা চাপিয়ে কি পরিমান অর্থ লাভ হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়।

উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির পদপে গ্রহণ জরুরি। মানুষের জীবন অপো কোন কিছুই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১১ এবং অনুচ্ছেদ ১৮ (১) সমূহের এ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হানিকর মদ ও ভেজষের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের করনের কথা বলা হয়েছে। আন্তজার্তিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-র আর্টিকেল-৬ নং ধারায় তামাক ব্যবহার হ্রাসে কর বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। নীতিনির্ধারনের েেত্র জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতির উপর তামাকের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিবেচনা তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর আরোপ করার অর্থ সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন।

প্রতিবছর তামাক কোম্পানিগুলো ভ্রান্ত প্রচারণা মাধ্যমে সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের বিভ্রান্ত করে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির বিরোধী করে। নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের উপর কর বৃদ্ধি হলে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি হবে না কেন? আমরা সকল জনপ্রতিনিধিদের জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতি রায় সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি বিষয়ে বলিষ্ঠ পদপে গ্রহনের আহবান জানাই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন