শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১১

ধূমপানমুক্তকরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন



বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ৩১ মে ২০১০ উপলে
ধূমপানমুক্তকরণ কর্মসূচীর উদ্বোধন, রমনা মডেল থানা
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট

তামাকজাত দ্রব্য বিশ্বে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। তামাকের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫৭ হাজার মানুষ মারা যায়, ৩ ল ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। তামাকের ভয়াবহ তিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করতে প্রতিবছর পালন করা হয় বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। ১৯৮৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উদযাপন হতে যাচ্ছে। এ বছরের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে "এবহফবৎ ধহফ ঃড়নধপপড় রিঃয ধহ বসঢ়যধংরং ড়হ সধৎশবঃরহম ঃড় ড়িসবহ". বাংলায় ’’তামাকের আগ্রাসী বিজ্ঞাপন মহিলা ও শিশু জন্য হুমকি’’। ’’প্রতিদিনই হোক তামাকমুক্ত দিন’’। তামাকজাত দ্রব্যের তিকর দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করেছে। এ আইনে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিড়ি-সিগােেটর ধোঁয়া অধূমপায়ীদের জন্য তিকর। পরো তি হতে জনসাধারণকে রায় এ আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি।

আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেন। আইনের প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ এ ধরনের বিভ্রান্তির কারণেও অনেকে আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে থাকেন। আইনের কোথাও প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়নি, বরং সুনির্দিষ্ট পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির ল্েয পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

এষড়নধষ অফঁষঃ ঞড়নধপপড় ঝঁৎাবু (এঅঞঝ) এবং ওঞঈ ইধহমষধফবংয ঘধঃরড়হধষ জবঢ়ড়ৎঃ ড়হ ঊাধষঁধঃরড়হ ড়ভ ঞড়নধপপড় ঈড়হঃৎড়ষ চড়ষরপরবং রহ ইধহমষধফবংয ২০০৯ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে অগগতি হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সম্পর্কে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান হ্রাস পেয়েছে, দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপন হচ্ছে। প্রিণ্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়েছে, সিগারেটের প্যাকেটে লিখিত বানী প্রচার হচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে আইন প্রণয়নের ফলাফল। এ অর্জন সরকার, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন ও গণমাধ্যমের সম্মিল্লিত প্রয়াস।

দেশের থানাগুলো প্রতিটি এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্লেস। প্রতিদিন এখানে প্রচুর জনসাধারণ বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য এসে থাকে। এছাড়া পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণকে সাধারন মানুষ আইন বাস্তবায়নের প্রতীক হিসেবে মনে করে থাকেন। পাবলিক প্লেস হিসেবে থানা ধূমপানমুক্তকরণ উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদপে। দেশের থানাগুলো ধূমপানমুক্ত করার মাধ্যমে আইন বাস্তবায়ন এবং ধূমপানমুক্ত স্থান বিষয়ে জনমনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। থানা ধূমপানমুক্ত করার মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের যে উদ্যোগ গ্রহণ করলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, তা বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিহাস হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এ ইতিহাস এর গর্বিত অংশীদার।

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী দেশের আইন শৃঙ্খলা রার্থে অকান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এর মাঝেও পুলিশ বাহিনীর অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পুলিশ ইতোপূর্বে অনেক ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। গত ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ উপলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জনস্বার্থে নববর্ষের জনসমাগমস্থলকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগ দেশের জন্য একটি ইতিবাচক পদপে। এ পদেেপর পর দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলাও নববর্ষের মেলা/ অনুষ্ঠান ধূমপানমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আজকে রমনা মডেল থানা ধূমপানমুক্ত করনের মাধ্যমে যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা আশা করি তা দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় ও দৃষ্টান্ত হবে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে পুলিশের মতা প্রদান করার কথা বলা হলেও আইনটি বাস্তবায়নের ল্েয পুলিশের মতা খুবই সীমিত। আইনের ধারা ১৪ (ক) অনুসারে যেহেতু একটি আমলযোগ্য অপরাধ যে জন্য পুলিশ কর্মকর্তা কোন ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আটক বা ধূমপানমুক্ত স্থান হতে বহিষ্কার করতে পারে। কিন্তু জরিমানা আদায় বা আরোপের মতা পুলিশের নেই। শুধুমাত্র মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেই এ আইন বাস্তবায়নে জরিমানা আদায় করা হয়। অপরদিকে বিদ্যমান মেট্রোপলিটন পুলিশ আইনগুলোতে ধূমপানমুক্ত এলাকা সাইন থাকা স্বত্বেও, এ সংক্রান্ত ধারাভঙ্গের প্রেেিত ১০০-৩০০ টাকা জরিমানা বিধান রয়েছে। কিন্তু এই ধারা অনুসারেও সরাসরি পুলিশ কর্মকর্তা জরিমানা আদায় করতে পারেন না।

পাবলিক প্লেস বা পরিবহনে ধূমপানের কারণে কোন ব্যক্তিকে আটক করে ম্যাজিট্রেট এর নিকট প্রেরণ এবং জরিমানা করা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমাদের একটি বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন ধূমপায়ীরা অপরাধী নয়, বরং তারা আসক্তির শিকার। আমাদের ল্য তাদের এ আসক্তি হতে মুক্ত করা। সামাজিক ও মানবিক কারণে পাবলিক প্লেস বা পরিবহনের ধূমপানের কারণে এ দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় একজনকে আটক করে বিচারের সম্মুখীন করার অনেকের নিকটই গ্রহণ যোগ্য নয় এবং সাী উপস্থাপনসহ নানাবিধ কারণে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া।

পাবলিক প্লেস এ ধূমপান যখনই সংঘটিত হয়, ঠিক তৎনাৎ আইনটি প্রয়োগ তথা জরিমানা করা প্রয়োজন। আর এ েেত্র আইন প্রয়োগ বা জরিমানা আদায়ের মতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পরিধি সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পুলিশ সদস্যগণ নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ দায়িত্ব পালনের বিভিন্ন কারণে দেশের প্রায় সকল পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের অবস্থান অপোকৃত বেশি। এেেত্র পুলিশ কর্মকর্তাদের পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের ধূমপানের প্রেেিত জরিমানা আদায়ের মতা আইন মতা প্রদান করা হলে আইনের বাস্তবায়ন অনেক সহজতর হবে। ভারতে বাস চালক, স্কুল শিককে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানমুক্ত সংক্রান্ত ধারাভঙ্গের প্রেেিত জরিমানা আদায়ের মতা প্রদান করা হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই পুলিশকে এধরনের আইন বাস্তবায়নে সরাসরি মতা প্রদান করা হয়েছে।

সিগারেটের ধোঁয়া অধূমপায়ীদের জন্যও তিকর। অধূমপায়ী বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের ধূমপানের ধোঁয়া হতে রায় পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের ধূমপান নিষিদ্ধ সংক্রান্ত ধারা কার্যকর বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এ ধারাটি বাস্তবায়নের করার সম্ভব হলে দেশে ধুমপায়ীর মাত্রাও কাঙ্খিত মাত্রা হ্রাস করা সম্ভব।

আমাদের সুপারিশ
১. রমনা মডেল থানার মতো দেশের সকল থানা ও পুলিশের অন্যান্য অফিসগুলোতে ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপন।

২. পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রশিন কারিকুলামে সম্পৃক্তকরণ ।

৩. পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানমুক্ত সংক্রান্ত ধারাটি বাস্তবায়নের ল্েয মেট্রোপলিটন আইন ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জরিমানা আরোপোর মতা প্রদান করা।

৪. জরিমানা আরোপের জন্য স্ট্যাম্প ব্যবস্থা প্রর্বতন করা, যাতে সহজেই পুলিশ কর্মকর্তারা জরিমানা আরোপ করতে পারে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে জবাবদিহিতা ও আইনের বাস্তবায়ন সহজ হবে।

৫. পুলিশ সদস্যগণ জনগনের নিকট আইন প্রয়োগের প্রতীক। তাই পোষাক পরিহিত ও কর্তব্যরত অবস্থায় পাবলিক প্লেসগুলোতে পুলিশ সদস্যদের ধূমপান হতে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ করা দরকার।

পরিশেষে আমি আজকের মহতী এ অনুষ্ঠানের সম্মানিত প্রধান অতিথি, মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আসাদ্জ্জুামান খান, মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আসমা জেরীন ঝুমু, সম্মানিত আইজিপি জনাব নূর মোহাম্মদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর কমিশনার জনাব এ কে এম শহীদুল হক, উপ-পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় এবং বাংলাদেশ পুলিশ, গণমাধ্যম কর্মী ও সুধীবৃন্দÑআপনাদের সকলকে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের প থেকে শুভেচ্ছা জানাই।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী-
সৈয়দ মাহবুবুল আলম, এল এল বি
সম্পাদক, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ৩১ মে ২০১০ “প্রতিদিনই হোক তামাকমুক্ত দিন’’

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ৩১ মে ২০১০
“প্রতিদিনই হোক তামাকমুক্ত দিন’’

প্রতিবছরের মতো এ বছরও উদযাপিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এ বছর বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য "এবহফবৎ ধহফ ঃড়নধপপড় রিঃয ধহ বসঢ়যধংরং ড়হ সধৎশবঃরহম ঃড় ড়িসবহ". বাংলায় “তামাকের আগ্রাসী বিপনন মহিলা ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি’’। ’’প্রতিদিনই হোক তামাকমুক্ত দিন’’।

বাংলাদেশে ৪৩.৩ % প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ কোন না কোনভাবে তামাক ব্যবহার করে। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার নারীদের মাঝে বেশি। নারীদের মাঝে ২৮% এবং পুরুষদের মাঝে ২৬% ধোয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। এছাড়া ৪৫% পুরুষ এবং ১.৫% নারী সিগারেটের মাধ্যমে এবং ২১% পুরুষ ও ১.১% নারী বিড়ির মাধ্যমে ধূমপান করেন। বাংলাদেশে ৪৯০০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫৭,০০০ লোক মারা যায় এবং ৩৮২০০০ লোক পঙ্গুত্ব বরণ করছে। তামাকের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তির পরিমান ৫০০০ কোটি টাকা।

উপরের তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করলে সহজেই অনুমান করা যায় তামাক ব্যবহার আমাদের মানুষের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য তিকর। জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের ল্েয তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ সরকার কতিপয় পদপে গ্রহণ করেছে। এ সকল কার্যক্রমের মধ্যে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ প্রণয়ন অন্যতম।

তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাস একটি জটিল প্রক্রিয়া। তামাক কোম্পানির মতো স্বার্থনেষী ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি, ধূমপায়ীদের অভ্যাসের পরিবর্তন এবং অধূমপায়ীদের রা করার একটি কঠিন ও সময় সাপে কাজ। এ কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপো করার পাশাপাশি ক্রমাগতভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

কিছু নীতি বিষয়ক কাজ আছে, যার মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম গতিশীল করা হয়। যেমন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধূমপানমুক্ত স্থানের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরো ধূমপানের তি হতে অধূমপায়ীকে রা এবং ধূমপায়ীকে যতবেশী সময় ধূমপান হতে বিরত রাখা । বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত ধারার উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন তরুনদের ধূমপানে উদ্বুদ্ধ হতে বিরত রাখা এবং বিদ্যমান ধূমপায়ীদের সাথে কোম্পানির উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমে যোগাযোগ বিঘিœত করা। মোড়কে ছবিসহ সতর্কবানীর উদ্দেশ্য হচ্ছে ধূমপায়ীদের তামাকের তিকর দিক সম্পর্কে সরাসরি সচেতন করা। সর্বোপরি তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির উদ্দেশ্য হচ্ছে দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে ধূমপায়ীদের ধূমপান ত্যাগে সহযোগিতা করা।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন:
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ বিষয়ে আলোচনার শুরুতে এ আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে কেহ কেহ অভিমত ব্যক্ত করেন। কিন্তু এষড়নধষ অফঁষঃ ঞড়নধপপড় ঝঁৎাবু এবং ওঞঈ ইধহমষধফবংয ঘধঃরড়হধষ জবঢ়ড়ৎঃ ড়হ ঊাধষঁধঃরড়হ ড়ভ ঞড়নধপপড় ঈড়হঃৎড়ষ চড়ষরপরবং রহ ইধহমষধফবংয ২০০৯ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে অগ্রগতি হয়েছে। মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান হ্রাস পেয়েছে, দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপনসহ ধূমপানমুক্ত স্থান সংরতি হচ্ছে। প্রিণ্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়েছে, সিগারেটের প্যাকেটে লিখিত সর্তক বানী প্রচার হচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে আইন প্রণয়নের ফলাফল। এ অর্জন সরকার, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন ও গণমাধ্যমের সম্মিল্লিত প্রয়াস।

তবু বলা যেতে পারে আইনের অগ্রগতি প্রত্যাশিত মাত্রায় নয়। এখনো আইন অনুসারে সকল পাবলিক প্লেস ও পরিবহন ধূমপানমুক্ত নয়। এসকল স্থানে ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপনও সম্ভব হয়নি। তামাক কোম্পানিগুলো আইন লঙ্ঘন করে পরো বিজ্ঞাপন প্রচার করছে, কিছু কোম্পানি প্যাকেটের গায়ে আইন অনুসারে সতর্কবাণী প্রচার করছে না, তামাক চাষের বিকল্প ফসলের সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি এবং তামাক ব্যবহার ও শিল্প স্থাপনে নিরুৎসাহিত করতে নীতিমালা বা কোন ধরনের পদপে গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।



তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন :
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এখন সময়ের দাবি। আইনের সীমাবদ্ধতার কারণেও অনেক েেত্র আইনটি সুফল জনগনের নিকট তুলে দেওয়া যাচ্ছে না। আশার কথা হচ্ছে সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি উন্নয়নের ল্েয একটি কমিটি গঠন করেছে। উক্ত কমিটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতামতের উপর ভিত্তি করে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে একটি খসড়া প্রস্তাবনা পেশ করেছে। উক্ত খসড়া প্রস্তাবনার বিষয়ে পুনরায় সকলের নিকট মতামত আহবান করা হয়েছে। আমরা আশা করি সরকার এফসিটিসি-র আলোকে আগামী ঈড়হভবৎবহপব ড়ভ ঃযব চধৎঃু (ঈঙচ) -র সভার পূর্বে আইনটি সংশোধন করবে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়ন বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনার প্রেেিত তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানের স্থান সংক্রান্ত বিধান বাতিল করা; সকল তামাকজাত দ্রব্যকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা; প্রত্য ও পরো তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে তিকর দিক তুলে ধরে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান; সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে তামাক কোম্পানির লগো ব্যবহার করে প্রমোশনাল কার্যক্রম নিষিদ্ধ; তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক বা কৌটার অনুরূপ বা সাদৃশ্যে অন্য কোন প্রকার দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যে কোন নাগরিককে মামলা করার অধিকার প্রদান; আইনভঙ্গের প্রেেিত তামাক কোম্পানিগুলোর জরিমানা ও শাস্তির পরিমান বৃদ্ধি; তামাকের বিকল্প চাষ ও কর বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, তামাক কোম্পানিগুলো হতে স্বাস্থ্যকর (ঐবধষঃয ঞধী) নামে কর আদায়, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিধি বৃদ্ধি এবং ধূমপানমুক্ত স্থান তৈরির করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়গুলো আইনে যুক্ত করার সুপারিশ করেন।

তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি:
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা যায় তামাক ব্যবহার হ্রাসে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি একটি কার্যকর উপায়। তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এফসিটিসি অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের উপর বৃদ্ধির ল্েয সরকারী পর্যায়ে পদপে গ্রহণ করা প্রয়োজন। অথচ বিগত কয়েক বছরে তামাকজাত দ্রব্যের উপর মুদ্রাস্ফীতি অনুসারে কর বৃদ্ধির কোন পদপে গ্রহণ করা হয়নি। বরং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সস্তায় তামাকজাত দ্রব্য প্রাপ্তির প্রেেিত তামাকের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত বছরে সরকার তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির পদপে গ্রহণ করলেও কোম্পানিগুলোর ভ্রান্ত প্রচারণার কারণে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি।

তামাক কোম্পানিগুলো কর বৃদ্ধি হলে রাজস্ব এবং কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে বলে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, কর বৃদ্ধি হলে তামাক ব্যবহার হ্রাস পেলেও দাম বৃদ্ধির প্রেেিত সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ হলে ১৮.৭% চাকুরি বৃদ্ধি পাবে।

তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মাধ্যমে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব সরকার প্রয়োজনে দরিদ্র লোকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় করতে পারে। তামাককের উপর কর বৃদ্ধির ফলে সরকার তিনভাবে লাভবান হবে, প্রথমত রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে, দ্বিতীয়ত জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন হবে, তৃতীয় তামাক হতে আদায়কৃত রাজস্ব তামাক শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানে ব্যয় করা সম্ভব হবে।

প্রায়ইশ কোম্পানিগুলো অনেক টাকা রাজস্ব দেয় বলে নিজেদের জাহির করতে চায়। আমাদের একটি কথা স্মরণ রাখা প্রয়োজন কোম্পানিগুলো মূলত জনগণের কাছ থেকে সংগৃহীত ভ্যাট রাজস্ব খাতে জমা দেয়, ভ্যাট পুরোটাই জনগনের টাকা। মাত্র ১৫% ভ্যাটের টাকা রাজস্ব খাতে দিয়ে, জনগন ও সরকারের উপর রোগ ও অসুস্থ্যতার বোঝা চাপিয়ে কি পরিমান অর্থ লাভ হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। আমরা আশা করি জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্মত কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে এ বাজেটে সরকার সকল ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ করবে।

খাদ্যের জমিতে, তামাক চাষ- আমাদের শংকা:
এ বছর বাংলাদেশে তামাক চাষ আংশকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় তামাক চাষ ও তামাক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোন প্রকার আর্থিক সাহায্য না করার জন্য দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক-কে নির্দেশনা জারি করে । তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এর এই নির্দেশনা দেশের জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভনের মাধ্যমে চাষীদের তামাক চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।

অধিক জনসংখ্যার সীমিত ভুখন্ডের এ দেশ। খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। পাশাপাশি তামাক চাষ দরিদ্রতা ও পুষ্টি ঘাটতি বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তামাক পাতা শুকানোর জন্য প্রতিবছর দেশের বনাঞ্চল ধবংস হয়ে যাচ্ছে, বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। গবেষনায় দেখা যায় তামাক চাষের সময়ে স্কুলে বাচ্চাদের উপস্থিতির হার কমে যায়।

তামাক চাষে অনেক শ্রমের প্রয়োজন এবং প্রক্রিয়াটি অনেক কঠিন। তামাক চাষের সঙ্গে সম্পৃক্তদের হাঁপানিসহ শ্বাস ও চর্মজনিত রোগের বিস্তার ল্য করা যায়। এছাড়া মারত্মক বার্জাজ ডিজিজ এর মত ভয়াবহ রোগও ল্য করা যাচ্ছে। তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায় এবং ১০ বছর পর সে জমি সম্পূর্ণভাবে চাষ অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে আরো কঠোর কার্যক্রম দরকার।

জাতীয়, জেলা ও উপজেলা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) টাস্কফোর্স
তামাক আইন বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার জাতীয়, জেলা ও উপজেলা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) টাস্কফোর্স গঠণ করেছে। প্রশাসন, মিডিয়া ও তামাক বিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এ কমিটি তামাক নিয়ন্ত্রণে একটি শক্তি কেন্দ্র। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) টাস্কফোর্স-র সভায় নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না এবং কার্যক্রমও গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

তথাপিও দেশের অনেক স্থানের টাস্কফোর্স তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে অনেক অনুকরণীয় সিদ্ধান্ত ও পদপে গ্রহণ করেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সকে প্রশিন, উপকরণসহ নানা সুবিধা প্রদাণ এবং এর মাধ্যমে মনিটরিং-র কার্যক্রম নিশ্চিত করা সম্ভব হলে স্থানীয় পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে।

অভিজ্ঞতায় দেখা যায় টাস্কফোর্স সদস্যদের কার্যালয় ও অধিনস্ত্য প্রতিষ্ঠান ধূমপানমুক্তকরণ, সদস্যদের উদ্যোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, তামাক বিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম, টাস্কফোর্সের সভা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন কার্যক্রমকে গতিশীল করার পাশাপাশি টাস্কফোর্সের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৬. তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক দতা বৃদ্ধি ও সচেতনতা
তামাক নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের দতা বৃদ্ধির ল্েয বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগ দতা বৃদ্ধির পদপে গ্রহণ করা হচ্ছে। তামাক বিরোধী সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও, সিবিও, সিভিল সোসাইটি ও গনমাধ্যমের কর্মীদের তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে দতা বৃদ্ধির ল্েয বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে। বিগত বছরে সরকারীভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দি ইউনিয়নের সহযোগিতায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের সাথে জড়িত সরকারী কর্মকর্তাদের দতা বৃদ্ধির ল্েয কর্মশালা আয়োজন করা হয়। তবে এ ধরনের কর্মশালা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনারে অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পালণ ও তামাকজাত দ্রব্যের তিকর দিক বিষয়ে সরকারীভাবেও সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। সরকারের সহযোগি স্বেচ্ছাসেবী তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠনগুলো এেেত্র সক্রিয়ভাবে তামাক বিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এর মধ্যে বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, পোষ্টার, স্টিকার, লিফলেট, ভ্রাম্যমান গানের দল, পথ নাটক, বিভিন্ন ক্যাম্পেইন অন্যতম। তবে জনসংখ্যার অনুপাতে এ সকল কার্যক্রম খুবই অপ্রতুল। সরকাররের এেেত্র সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক দতা ও সচেতনতা বৃদ্ধির েেত্র সরকারী ও স্বেচ্ছাসেবী তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠনগুলো মাঝে আরো বেশি সমন্বয় সাধন জরুরি।

পরিশিষ্ট: তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অর্জন অনেকখানি। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত দেশের এই অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করতে অব্যাহত প্রয়াশ চালাচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ ও তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা তাদের এ সকল কার্যক্রমের অন্যতম হাতিয়ার। কোম্পানিগুলো ব্যবসার স্বার্থে নানাভাবেই দেশের তামাক বিরোধী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে।

তামাক কোম্পানি তাদের মুনাফার উদ্দেশ্যে মানুষকে রোগ ও মৃত্যুর দিকে ঢেলে দিচ্ছে, অপর দিকে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীদের উদ্দেশ্য মানুষের স্বাস্থ্যকে রা করা। মানুষের স্বাস্থ্য অপো অর্থ কখনোই মুখ্য হতে পারে না। সরকার, প্রশাসন, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন, গণমাধ্যমকর্মীদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্মিলিত পদপে কোম্পানির অশুভ উদ্দেশ্য প্রতিহত করে জনগনের স্বাস্থ্যকে রা করবে এ আমাদের বিশ্বাস।

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম গতিশীল করতে সুপারিশ:
১. তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের মনিটরিং জোরদার, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপন;
২. টাস্কফোর্স সদস্যদের কার্যালয় ও অধিনস্ত্য প্রতিষ্ঠান ধূমপানমুক্তকরণ,
৩. এফসিটিসি-র আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দ্রুত পদপে গ্রহণ, স্থানীয় পর্যায়ে জনমত সৃষ্টি করা;
৪. বিড়ি-সিগারেটসহ সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর বৃদ্ধি করা। কর বৃদ্ধির অর্থে দরিদ্র বিড়ি শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের এবং তামাকজনিতর রোগের চিকিৎসায় ব্যয় করা;
৫. পরিবেশ, অর্থ, স্বাস্থ্য রায় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদপে গ্রহণ;
৬. আইন বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দতা বৃদ্ধির ল্েয পদপে গ্রহণ;
৭. তামাক বিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধির ল্েয সরকারীভাবে উদ্যোগ গ্রহণ;
৮. সরকারীভাবে নিয়মিত গণমাধ্যমকে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কার্যক্রম বিষয় তথ্য প্রদানের প্রক্রিয়া তৈরি;
৯. জেলা ও উপজেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স-র প্রশিন, উপকরণসহ নানা সুবিধা ও মনিটরিং নিশ্চিত করা;
১০. সরকার, স্থানীয় সরকার, দেশীয় দাতা গোষ্ঠীগুলোর সহযোগিতায় স্থানীয় পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ;

পরিবেশের উপর তামাকের তিকর প্রভাব

পরিবেশের উপর তামাকের তিকর প্রভাব

তামাকের তিকর প্রভাবের কথা আসলেই আমারা স্বাস্থ, অর্থনৈতিক তি নিয়ে বলি কিন্তু এর কৃষি, পরিবেশগত দিক তেমন গুরুত্ব পায় না। তামাক শুধুমাত্র স্বাস্থ, অর্থনৈতিক তিই করছে না এর পরিবেশগত তিও মারাত্বক। যা মানবজাতি, জীব বৈচিত্র্যের অস্তিত্বকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই পরিবেশগত তি বিবেচনা করে তা সমাধানে তামাক নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসতে হবে।

মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম প্রয়োজন খাদ্য। অথচ তামাক চাষের জন্য বেছে নেয়া হচ্ছে খাদ্য উৎপাদনের জমি এবং উৎপাদিত তামাক শুকানোর জন্য বন ধবংস করে গাছ কেটে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এক সমীায় দেখা যায়, প্রতিবছর তামাক উৎপাদনের কারনে ২ ল হেক্টর বন ধবংস হচ্ছে। তামাক শুকানোর জন্য গাছ কাটার ফলে চট্টগ্রামের পাহড়ী এলাকায় বনাঞ্চল ধবংশ হচ্ছে। এক একর জমিতে যে পরিমান তামাক উৎপন্ন হয় এটি শুকানোর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৬ টন কাঠ। এভাবে তামাক শুকানোর কাজে বন ধবংশ করার কারইে এবং এর থেকে উৎপন্ন ধোয়ার ফলে বিলীন হয়ে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। বন কেটে উজাড় করার কারনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মাটি ধারন মতা ফলে আমাদের ভূমি ধসের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে প্রকৃতি তথা জলবায়ু এবং আমরা সম্মুখীন হচ্ছি প্রাকৃতিক দূর্যোগের।

তামাক চাষে শুধু গাছ কেটেই পরিবেশ ধ্বংশ করা হচ্ছে না। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে পানির উপরও। তামাক চাষে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তাই পার্বত্য এলাকায় তামাক কোম্পানীগুলো চাষের ল্েয নদীর ঢালকে বেছে নেয়। পাহাড়ী এলাকায় নদীগুলো ঐ এলাকার মানুষের অন্যতম পানির উৎস। তামাক চাষে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক এবং রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে তা স্থানীয় পানির প্রবাহকে দূষিত করে। গৃহস্থালীর কাজে দূষিত পানি ব্যবহার করার ফলে তারা বিভিন্ন জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির অভাব। দূষিত পানির ফলে শুধুমাত্র মানব জাতিই নয় পানির নিচে বসবাসরত জীব বৈচিত্রও হুমকীর সম্মুখীন হচ্ছে।

তাছাড়া উর্বরতা বৃদ্ধির এবং পোকামাকড়ের আক্রমন থেকে রা করার ল্েয ব্যবহূত প্রচুর পরিমাণ সার ও কীটনাশক জমি থেকে গড়িয়ে নদীর পানিতে গিয়ে মেশে। আবার তামাক শুকানোর পর গাছ, খড় বা কুড়া পোড়ানোর ছাই নদী, পুকুরে ফেলে দেয়। ফলে পুকুরের জলজ প্রাণী বিশেষ করে মাছ তিগ্রস্থ হচ্ছে। তিগ্রস্থ হচেছ এদের প্রজনন মতার। বর্তমানে আমাদের অনেক প্রজাতীর দেশীয় মাছ, জলজ প্রাণী বিপন্ন হয়ে গেছে এবং আরো কিছু মাছ এবং জলজ প্রাণী বিপন্ন হওয়ার পথে।

তামাক গাছ মাটির পুষ্টি দ্রুত শেষ করে ফেলে। ফলে েেত প্রতিবার চাষের জমিতে দামী রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয়। এক হিসাবে দেখা গেছে প্রতি একর জমিতে তামাক চাষের জন্য ৩০০ কিঃ গ্রাঃ সার ব্যবহার করা হয়। এতে সাময়ীকভাবে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পেলেও ধীরে ধীরে মাটির উর্বরতার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন পটাসিয়াম, ফসফরাস, নাইট্রোজেন ইত্যাদির পরিমাণ কমে যায় এবং মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া যেসব দেশে পাহাড়ী অঞ্চলে তামাক চাষ করা হয়, সেসব এলাকাতে মাটির রাসায়নিক পদর্থগুলো কমে যাবার কারণে ভূমি ধবংস দেখা দেয়। তাছাড়া সিগারেটের পিছনের অংশ, প্যাকেট এবং কার্টুন নষ্ট করতে গিয়ে বিভিন্ন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। শুধু তাই নয় তামাক ব্যবহারের কারনে প্রচুর অগ্লিকান্ড সংগঠিত হয়। যা আমাদের অর্থনৈতিক তি ছাড়াও প্রাণ হানীর কারণ যা অপূরনীয়।

আমাদের অস্তিত্ব রার স্বার্থে এখনই তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খাদ্য উৎপাদনের যে জমি তামাক চাষের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে তা বন্ধ করতে তামাক চাষের তিকর প্রভাব সম্পর্কে কৃষকদের সচেতনতার পাশাপাশি বিকল্প ফসল উৎপাদনে সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। পরিবেশ রার সার্থে তামাক শুকানোর জন্য বন ও গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। কোন একক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পে এত বড় কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ।

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম : সরকারের কাজে প্রত্যাশা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম : সরকারের কাজে প্রত্যাশা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক
৩০ মে ২০০৯, সিরডাপ মিলনায়তন
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট

সম্মানিত সুধী, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-এর আমন্ত্রণে এই গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা ও পরামর্শ বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে গতিশীল করতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসকে সামনে রেখে জোটের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের তথ্যাদি তুলে ধরছি। প্রতিবছরের মতো এবছরও ৩১ মে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে যাচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ঞড়নধপপড় ঐবধষঃয ডধৎহরহম-তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও জোটভুক্ত সংগঠনগুলো এই দিবসকে সামনে রেখে মাস ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গত ৩ মে ২০০৯ জাতীয় চিত্রশালায় আয়োজত হয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বিষয়ক প্রদর্শনী। এ প্রর্দশনীতে ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে বিগত দশ বছরের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। প্রদর্শনীর অনুষ্ঠানের অন্যতম বিষয় ছিল তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান এবং তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান। সারা দেশের প্রায় ৩০০ সংগঠন এই মেলায় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া জোটভুক্ত সংগঠনগুলো তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির ল্েয অর্থমন্ত্রী ও রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের বরাবরে লেটার ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে।

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসকে সামনে রেখে সারাদেশের সদস্য সংগঠনগুলো আইন মনিটরিং, আইন সম্পর্কে সচেতনতা, র‌্যালী, সেমিনার, ধূমপানমুক্ত পাবলিক প্লেস ও পরিবহন তৈরি, লিফলেট ক্যাম্পেইন, তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স সক্রিয় করতে এডভোকেসি সভাসহ নানা ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এ কার্যক্রমে সরকারী-বেসরকারী সংগঠন, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যমকর্মী, শিক-ছাত্র, ধর্মীয় নেতা, কমিউনিটি সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এ বছর সারা দেশের ৫০ টি জেলায় ১৬০ টির বেশি উপজেলায় প্রায় ২০০ টি বেশি সংগঠন এই দিবস পালণ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট জাতীয় পর্যায়ে গোলটেবিল বৈঠক, র‌্যালী, ভ্রাম্যমান গানে দলের মাধ্যমে প্রচারণার আয়োজন করেছে।

সম্মানিত সুধী আপনারা জানেন, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার ও আইন বাস্তবায়নের ল্েয চতুর্থ বার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নসহ জাতীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে আইন বাস্তবায়ন টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। তামাক কোম্পানীর অবৈধ বিজ্ঞাপন অপসারন, পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা যুগান্তকারী পদপে হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বিগত বছরে বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্যের কর ও ট্যারিফ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের এ ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। যা জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জল করেছে।

তামাক নিয়ন্ত্রণে নীতিগত পদপে গ্রহণে অনেকখানি অগ্রগতি সাধিত হলেও, কাঙ্গিত মাত্রায় তামাক ব্যবহারে হ্রাসের ল্েয আরো অনেকটা সময় অপো করতে হবে। পাশাপাশি আরো কিছু নীতিগত পদপে গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ধারাবাহিক উদ্যোগ আমাদের আশান্বিত করে। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠনগুলো বিগত বছরগুলোতে কর্মশালা, আলোচনা সভা, সেমিনারসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয বিভিন্ন সুপারিশ ও জনগনের প্রত্যাশা তুলে নিয়ে এসেছে। এ সকল সুপারিশ ও প্রত্যাশা সমূহ আপনাদের অবগতির জন্য সংপ্তি আকারে তুলে ধরছি।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন উন্নয়ন:
তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রণয়নের ফলে অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এ কথা সত্যও আইনটিতে নানা সীমাবদ্ধতা থাকায় আইনটি বাস্তবায়ন আশানুরূপ হচ্ছে না। কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয আইনটি উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়নের ল্েয যে সকল সুপারিশগুলো উঠে এসেছে তা হল ঃ তামাকজাত দ্রব্যের সংঙ্ঘায় বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, গুল, জর্দ্দা, খৈনী, সাদাপাতা, সিগার এবং পাইপে ব্যবহার্য মিশ্রন (মিস্কার)সহ সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যকে সংযুক্ত করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্রত্য ও পরো বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০% শতাংশ জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান; বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, রেষ্টুরেন্টসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও জনসমাগমস্থলকে ধূমপানমুক্ত স্থান ঘোষণা করা; সিনেমা, নাটক, প্রামান্যচিত্রসহ অন্য মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রচার বা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; সামাজিক দায়বদ্ধতা নামে তামাক কোম্পানির নাম, লগো ব্যবহার করে প্রমোশনাল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক বা কৌটার অনুরূপ বা সাদৃশ্যে অন্য কোন প্রকার দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যে কোন নাগরিককে মামলা করার অধিকার প্রদান; আইনভঙ্গের প্রেেিত তামাক কোম্পানিগুলোর জরিমানা ও শাস্তির পরিমান বৃদ্ধি করা; তামাকের বিকল্প চাষ ও কর বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা প্রণয়নের বিধান সংযুক্ত করা; তামাক কোম্পানিগুলো হতে স্বাস্থ্যকর নামে কর আদায় এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিধি বৃদ্ধি করা। আমরা আশা করি সরকার আইন উন্নয়নের ল্েয এ বিষয়গুলো গুরুত্বে সাথে বিবেচনা করবে।

তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি:
তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয কর বৃদ্ধি একটি কার্যকর উপায়। বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণায় দেখা যায়, তামাকের দাম যদি ১০ ভাগ বৃদ্ধি পায় তাহলে উন্নত দেশে এর ব্যবহার ৪% এবং উন্নয়নশীল দেশে ৮% কমে আসবে। তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি ্িবষয়ে পরিচালিত ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, মানবিক ও হেলথ ব্রিজের গবেষণায় দেখা যায়, জরিপে ৭৩.২% লোক তামাকের উপর কর বৃদ্ধি করা উচিত বলে মতামত প্রদাণ করেন। তামাকের উপর উচ্চহারে দাম বৃদ্ধির প্রেেিত ৬০.১ % তামাক ব্যবহার কমিয়ে দেবেন, ২৮.২% একেবারে ধূমপান ত্যাগ করবেন, ৫.২% সস্তা দামের তামাক ক্রয় করবেন, মাত্র ১.৯% অন্যান্য দ্রব্য অপো তামাকের পিছনে আরো বেশি ব্যয় করবেন বলে জানান। এ গবেষণার মাধ্যমে দেখা যায় অধিকাংশ মানুষ তামাকের উপর কর ও মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি সমর্থন করেন। উন্নয়ন সমন্বয়ের এক গবেষনায় দেখা যায়, বিড়ি সিগারেটে উপর ১৫% সম্পুরক শুল্ক বৃৃদ্ধি এবং বিড়ি প্রতি প্যাকেটের উপর ২ টাকা ধার্য করা হলে, ধূমপায়ীর সংখ্যা ২০% হ্রাস পাবে এবং সরকার এই খাতে রাজস্ব আরো ৯৫০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে।

দুঃখজনক হলেও সত্য তামাক কোম্পানিগুলোর কুট কৌশলের ফলে বিগত কয়েক বছরে তামাকজাত দ্রব্যের কর মুদ্রাস্ফীতির সাথে সামঞ্চস্য রেখে করা সম্ভব হয়নি। বিড়ির উপর কর অনেক কম, তার উপর বিড়ি কোম্পানিগুলো অহরহ কর ফাকি দিচ্ছে, অনেক কোম্পানিকে নানা কারণে করের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। গুল, জর্দ্দা, সাদাপাতা অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য এখনো করের আওতায় নিয়ে আসা হয়নি। আমরা আশা করি সরকার তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির ল্েয একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করবে, যাতে সকল তামাকজাত দ্রব্যকে করের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তামাকজাত পন্য উৎপাদনকারী হতে স্বাস্থ্যকর নামে একটি কর সংগ্রহ করা হবে, যা তামাক নিয়ন্ত্রণ কাজের জন্য ব্যয় করা হবে।

তামাক-এর বিকল্প ফসল উৎপাদনে সহযোগিতাঃ
স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিবেশসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় তামাক একটি তিকর ফসল। আমাদের সীমিত জমিতে তামাক চাষ বৃদ্ধি একধরনের হুমকি স্বরূপ। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলের তামাকের চাষবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে আশংকাজনকভাবে। প্রত্য ও পরো নানা ধরনের কৃষি সুবিধা ও তামাক কোম্পানিগুলোর প্রলুব্ধতার কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে তামাকের চাষাবাদ। পার্বত্য এলাকায় তামাক চাষের জন্য ধ্বংস হচ্ছে বন, পানি উৎস ও কৃষি জমি। তামাক চাষের এই ভয়াবহ আগ্রাসী থাবা হতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে রায় বিকল্প ফসল উৎপাদনের তড়িৎ পদপে গ্রহণ করা প্রয়োজন। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকএর বিকল্প ফসল উৎপাদনের ৫ বছর পর্যন্ত ঋণ প্রদানের কথা বলা হলেও, এ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন ধরনের পদপে গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণের ল্েয সরকারের বিকল্প ফসল উৎপাদনে সহযোগিতার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি।

তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচারণা ঃ
বাংলাদেশে তামাক বিরোধী প্রচারণা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারী-বেসরকারী সংগঠনগুলো বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, স্টিকার, পোষ্টার, লিফলেটসহ বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তামাক বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, দি ইউনিয়ন, টিএফকে, এফসিএ সহযোগিতায় তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে আসছে। মানস, প্রত্যাশা, মানবিক, উন্নয়ন সমন্বয়, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট সামর্থ্য অনুসারে অন্যান্য সংগঠনের সহযোগিতায় মাসমিডিয়া ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ইপসা, হাঙ্গার প্রজেক্ট, স্কোপ, র‌্যাক, ওআরডিসহ বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-র অনেক সদস্য সংগঠন জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে। বাংলাদেশ হেলথ ফাউন্ডেশন বুল্মবার্গ কার্যক্রমের আওতায় ধর্মীয় নেতাদের মাঝে তামাক বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো স্বপ্রনোদিতভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার ল্েয গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তথাপিও জনসংখ্যার অনুপাতে এ প্রচারণা কার্যক্রম যথেষ্ট নয়। তামাক বিরোধী প্রচারণা জন্য সরকারীভাবে আরো সহযোগিতা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।



তামাক ব্যবহার ত্যাগে সহায়ক কর্মসূচী :
যারা তামাক বা ধূমপান করেন তাদের প্রতিপ ভাবার কোন অবকাশ নেই, বরং তারা হচ্ছেন ভিকটিম। তাদের তামাক ব্যবহার হতে মুক্ত করার ল্েযও চিন্তা করা প্রয়োজন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তামাক ব্যবহার ত্যাগে বিভিন্ন সহায়ক কর্মসূচী পরিচালিত হলেও বাংলাদেশে এ কার্যক্রম খুবই নগন্য। মানবিক ও বিআইসিডি নিজস্ব পরিসরে ধূমপান ত্যাগে সহায়ক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এধরনের কার্যক্রম পরিচালনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সীমিত পরিসরে সহযোগিতা প্রদান করে। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, মানস, আধূনিক, জাতীয় অধূমপায়ী ফোরামসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ধূমপান ত্যাগে সহায়ক প্রকাশনা রয়েছে। তামাক ব্যবহারে ত্যাগে সহায়ক ঔষধও এদেশে সহজ লভ্য নয়। দেশের বিশাল জনগোষ্টীকে তামাক ও ধূমপান হতে বিরত রাখতে ’’তামাক বর্জন কার্যক্রম’’ জোরালোভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। সরকারী পৃষ্টপোষকতা ছাড়া এ কার্যক্রমকে জোরদারভাবে পরিচালনা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

তামাকজাত সামগ্রীর মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান ঃ
তামাকজাত সামগ্রীর মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদানের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে আমাদের দেশে লিখিত স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদানের বিধান রয়েছে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ নিরর বিধায় এই বিষয়টি খুব একটা কাজে আসছে না। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট পরিচালিত দেশের ৩০ টি জেলার ৩০৫০ জন ধূমপায়ীর মাঝে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্যসতর্কবানী : জনগনের প্রত্যাশা শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা যায়, ৭৪.৪% ধূমপায়ী বলেছে বর্তমান সতর্কবানী কোন প্রভাব ফেলছে না। “ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য তিকর” তা হতে ধূমপানে কি কি তি হয় তা বোঝা যায় কি না এ প্রশ্নের উত্তরে ৬৪.৪% ধূমপায়ী বলেছেন তারা বোঝেন না আর মাত্র ৩৫.৬% অংশ ধূমপায়ী বলেছেন তারা কিছুটা বোঝে। ৯৫.৫% ভাগ ধূমপায়ী বলেছে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবানী তা প্রভাব রাখতে সম্পূর্ণ রূপে সম হবে। তাই অধিকাংশ মানুষকে তামাকজাত দ্রব্যের তিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করতে আইন উন্নয়নের েেত্র ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। উল্লেখ বাংলাদেশ কনসোটিয়াম অন্য টোব্যাকো কন্ট্রোল (ক্যাব, মানবিক, প্রত্যাশা, ফুলকুড়ি, ওয়াক এই সংগঠনগুলোর একটি সমন্বিত প্রকল্প) তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদানের বিষয়ে জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালণ করে আসছে।

জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স শক্তিশালী করা:
দেশব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার ল্েয সরকার জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স গঠন করে। যা একটি প্রশংসনীয় এবং কার্যকরী সিদ্ধান্ত। সরকারী সংস্থা, তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠন, জেলা আইনজীবী সমিতি, গন্যমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে এই টাস্কফোর্স। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন এবং তামাক বিরোধী প্রচারণার েেত্র এই সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালণ করতে পারে। কিন্তু কার্যক্রম পরিচালনার েেত্র উপকরণ, অর্থ ও অন্যান্য কারিগরি সহযোগিতার অভাবে এ টাস্কফোর্স অনেক েেত্রই নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। টাস্কফোর্সগুলো সক্রিয় করার ল্েয নিয়মিত মনিটরিং, উপকরণ ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থ এবং কারিগরি সহযোগিতা সরকারের নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল:
তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার ল্েয সরকারের অপর একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হচ্ছে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতা এই সেলে কার্যক্রম বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণের সেলের প্রয়োজনীয় লোকজন, অর্থ ও কারিগরি অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে, এই সেল দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে।

তামাক কোম্পানির বেআইনী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ঃ
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনের পরবর্তীতে সময়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তামাক বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যায়, যা বড় ধরনের সফলতা। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো নিত্য নতুন কার্যক্রমের মাধ্যমে নিয়মিত তামাকের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। তামাক কোম্পানিগুলো আইনভঙ্গের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মাত্র ২ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোম্পানিগুলোর আইনভঙ্গের প্রেেিত কোন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কোম্পানিগুলো এই সুযোগে আইন সম্পর্কে বিভ্রান্তকর তথ্য পরিবেশ করছে। অনেক েেত্র তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীদের বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তকর তথ্যের মাধ্যমে হেয় প্রতিপন্ন করছে। তামাক কোম্পানিগুলো এ ধরনের আইনভঙ্গ কার্যক্রম ও বিভ্রান্তকর তথ্যে পরিবেশনের প্রেেিত কঠোর আইনি পদপে গ্রহণ করা জরুরি। আমরা আশা করি সরকার তামাক কোম্পানিগুলোর এ ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অচিরেই কঠোর পদপে গ্রহণ করবে।
তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করতে সরকারের নিকট সুপারিশ
১. তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন বা উন্নয়নের েেত্র নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ সংযুক্ত করা।
ক্স তামাকজাত দ্রব্যের সংঙ্ঘায় বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, গুল, জর্দ্দা, খৈনী, সাদাপাতা, সিগার এবং পাইপে ব্যবহার্য মিশ্রন (মিস্কার)সহ সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যকে সংযুক্ত করা;
ক্স তামাকজাত দ্রব্যের প্রত্য ও পরো বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা;
ক্স তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০% শতাংশ জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান;
ক্স বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, রেষ্টুরেন্টসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও জনসমাগমস্থলকে ধূমপানমুক্ত স্থান ঘোষণা করা;
ক্স সিনেমা, নাটক, প্রামান্যচিত্রসহ অন্য মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রচার বা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা;
ক্স সামাজিক দায়বদ্ধতা নামে তামাক কোম্পানির নাম, লগো ব্যবহার করে প্রমোশনার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা;
ক্স তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক বা কৌটার অনুরূপ বা সাদৃশ্যে অন্য কোন প্রকার দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা;
ক্স তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যে কোন নাগরিককে মামলা করার অধিকার প্রদান;
ক্স আইনভঙ্গের প্রেেিত তামাক কোম্পানিগুলোর জরিমানা ও শাস্তির পরিমান বৃদ্ধি করা;
ক্স তামাকের বিকল্প চাষ ও কর বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা প্রণয়নের বিধান সংযুক্ত করা;
ক্স তামাক কোম্পানিগুলো হতে স্বাস্থ্যকর নামে কর আদায় এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার;
ক্স কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিধি বৃদ্ধি করা;

২. তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির ল্েয একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং সকল তামাকজাত দ্রব্যেকে করের আওতায় নিয়ে আসা।
৩. তামাক-এর বিকল্প সফল উৎপাদনের কৃষকদের সহযোগিতার ল্েয নীতিমালা প্রণয়ন এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ।
৪. তামাক বিরোধী প্রচারণার ল্েয সরকারীভাবে পৃষ্টপোষকতা প্রদান।
৫. তামাক ব্যবহার ত্যাগে সহায়ক ব্যাপক কর্মসুচী গ্রহণ।
৬. তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০% জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান।
৭. জাতীয় ও স্থানীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স সক্রিয় করতে উপকরণ, কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।
৮. জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের লোকবল ও অন্যান্য কারিগরি সুবিধা নিশ্চিত করা।
৯. তামাক কোম্পানিগুলো আইন ভঙ্গের প্রেেিত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।


------------------

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করণীয়

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করণীয়
সৈয়দ মাহবুবুল আলম


তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবস্থান ও কার্যক্রম নিয়ে অনেকেরই মতামত রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আংশিকভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে মূল্যায়ন বা পর্যবেক্ষণের কারণে দেশের সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিত সম্পর্কে কেউ কেউ নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। দেশের সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মূল্যায়ণ করলে তামাক নিয়ন্ত্রণে দেশের ব্যাপক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হবে। একটি বিষয় আমাদের পরিষ্কার হওয়ার প্রয়োজন। তামাক নিয়ন্ত্রণ একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। একদিনে বা কয়েক বছরের তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রন করার সম্ভব নয়।

একদিকে সরকার ও তামাক নিয়ন্ত্রণকর্মীরা অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তামাক ব্যবহার হ্রাস করতে, অপরদিকে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যবসার প্রসারের জন্য তামাক সেবনে উদ্বুদ্ধ করেেছ। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মধ্যে কার্যক্রর পদপেগুলোকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে। নানা বিভ্রান্তকর প্রচারণার মাধ্যমে জনগনকে বিভ্রান্ত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে।

তামাক কোম্পানিগুলোর বিভ্রান্তকর প্রচারণার কারণে অনেক েেত্র তামাক নিয়ন্ত্রণে তড়িৎ ও কঠোর পদপে গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে সম্প্রতি যখন তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তখন তামাক কোম্পানিগুলো কর্মসংস্থান হ্রাস পারে, রাজস্ব তি হবে এ ধরনের বিভ্রান্ত তথ্য তুলে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে। যদিও একটি বিষয় খুবই পরিষ্কার তামাকের কারণে লাভবান হয় কোম্পানির মালিক আর তিগ্রস্ত হয় চাষী, উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিক এবং ব্যবহারকারী। তবে আমরা আশা করি ৫৭,০০০ মানুষের মৃত্যু এবং ৩৮২,০০০ হাজার মানুষের পঙ্গুত্বের কারণ এই মরণঘাতী পণ্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ধীরে ধীরে আরো কঠোর পদপে গ্রহণ করবে। নানা সীমাবদ্ধতার পরও বাংলাদেশ সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ বেশ কিছু ইতিবাচক পদপে রয়েছে।

এ পর্যায়ে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণের বর্তমান অবস্থার কিছু বিষয় তুলে ধরছি:

১. তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন:
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ বিষয়ে আলোচনার শুরুতে এ আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে কেহ কেহ অভিমত ব্যক্ত করেন। কিন্তু এষড়নধষ অফঁষঃ ঞড়নধপপড় ঝঁৎাবু এবং ওঞঈ ইধহমষধফবংয ঘধঃরড়হধষ জবঢ়ড়ৎঃ ড়হ ঊাধষঁধঃরড়হ ড়ভ ঞড়নধপপড় ঈড়হঃৎড়ষ চড়ষরপরবং রহ ইধহমষধফবংয ২০০৯ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে অগগতি হয়েছে। মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান হ্রাস পেয়েছে, দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে ধূমপানমুক্ত সাইনসহ স্থান সংরতি হচ্ছে। প্রিণ্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়েছে, সিগারেটের প্যাকেটে লিখিত বানী প্রচার হচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে আইন প্রণয়নের ফলাফল। এ অর্জন সরকার, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন ও গণমাধ্যমের সম্মিল্লিত প্রয়াস।

তবু বলা যেতে পারে আইনের অগ্রগতি প্রত্যাশিত মাত্রায় নয়। এখনো আইন অনুসারে সকল পাবলিক প্লেস ও পরিবহন ধূমপানমুক্ত নয়। এসকল স্থানে ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপনও সম্ভব হয়নি। তামাক কোম্পানিগুলো আইন লঙ্গন করে পরো বিজ্ঞাপন প্রচার করছে, কিছু কোম্পানি প্যাকেটের গায়ে আইন অনুসারে সতর্কবাণী প্রচার করছে না, তামাক চাষের বিকল্প ফসলের সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি, তামাক ব্যবহার ও শিল্প স্থাপনে নিরুৎসাহিত করতে নীতিমালা বা কোন ধরনের পদপে গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

২. তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন :
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এখন সময়ের দাবি। আইনের সীমাবদ্ধতার কারণেও অনেক েেত্র আইনটি সুফল জনগনের নিকট তুলে দেওয়া যাচ্ছে না। আশার কথা হচ্ছে সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি উন্নয়নের ল্েয একটি কমিটি গঠন করেছে। উক্ত কমিটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতামতের উপর ভিত্তি করে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নিকট একটি খসড়া প্রস্তাবনা পেশ করেছে। উক্ত খসড়া প্রস্তাবনার বিষয়ে পুনরায় সকলের নিকট মতামত আহবান করা হয়েছে। আমরা আশা করি সরকার এফসিটিসি-র আলোকে আগামী ঈড়হভবৎবহপব ড়ভ ঃযব চধৎঃু (ঈঙচ) -র সভার পূর্বে আইনটি সংশোধন করবে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়ন বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা প্রেেিত তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা পাবলিক পেস ও পরিবহনে ধূমপানের স্থান সংক্রান্ত বিধান বাতিল করা; সকল তামাকজাত দ্রব্যকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা; প্রত্য, পরো তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০% শতাংশ জুড়ে তিকর দিক তুলে ধরে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান; সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে তামাক কোম্পানির নামে লগো ব্যবহার করে প্রমোশনার কার্যক্রম নিষিদ্ধ; তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক বা কৌটার অনুরূপ বা সাদৃশ্যে অন্য কোন প্রকার দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যে কোন নাগরিককে মামলা করার অধিকার প্রদান; আইনভঙ্গের প্রেেিত তামাক কোম্পানিগুলোর জরিমানা ও শাস্তির পরিমান বৃদ্ধি; তামাকের বিকল্প চাষ ও কর বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, তামাক কোম্পানিগুলো হতে স্বাস্থ্যকর (ঐবধষঃয ঞধী) নামে কর আদায়, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিধি বৃদ্ধি এবং ধূমপানমুক্ত স্থান তৈরির করতে ব্যর্থ হলে সংশিষ্ট কর্তৃপরে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়গুলো আইনেরযুক্ত করার সুপারিশ করেন।

৩. তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি:
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা যায় তামাক ব্যবহার হ্রাসে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি একটি কার্যকর উপায়। তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এফসিটিসি অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের উপর বৃদ্ধির ল্েয সরকার পদপে গ্রহণ করা প্রয়োজন। অথচ বিগত কয়েক বছরে তামাকজাত দ্রব্যের উপর মুদ্রাস্ফীতি অনুসারে কর বৃদ্ধির কোন পদপে গ্রহণ করা হয়নি। বরং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সস্তায় তামাকজাত দ্রব্য প্রাপ্তির প্রেেিত তামাক ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত বছরে সরকার তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি পদপে গ্রহণ করলেও কোম্পানিগুলোর ভ্রান্ত প্রচারণার কারণে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি।

তামাক কোম্পানিগুলো কর বৃদ্ধি হলে রাজস্ব এবং কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে বলে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, কর বৃদ্ধি হলে তামাক ব্যবহার হ্রাস পেলেও দাম বৃদ্ধির প্রেেিত সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ হলে ১৮.৭% চাকুরি বৃদ্ধি পাবে।

তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মাধ্যমে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব সরকার প্রয়োজনে দরিদ্র লোকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় করতে পারে। প্রায়শই কোম্পানিগুলো অনেক টাকা রাজস্ব দেয়া বলে নিজেদের জাহির করতে চায়। আমাদের একটি কথা স্মরণ রাখা প্রয়োজন কোম্পানিগুলো মূলত সংগৃহীত ভ্যাট রাজস্ব খাতে জমা দেয়, ভ্যাট পুরোটা জনগনের টাকা। মাত্র ১৫% ভ্যাটের টাকা রাজস্ব খাতে দিয়ে, সরকারের উপর রোগ ও অসুস্থ্যতার বোঝা চাপিয়ে কি পরিমান অর্থ লাভ হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। আমরা আশা করি জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্মত কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে এ বাজেটে সরকার সকল ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির পদপে গ্রহণ করবে।

৪.খাদ্যের জমিতে, তামাক চাষ- আমাদের শংকা:
এ বছর বাংলাদেশে তামাক চাষ আংশকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় তামাক চাষ ও তামাক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোন প্রকার আর্থিক সাহায্য না করার জন্য দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক-কে নির্দেশনা জারি করে । তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এর এই নির্দেশনা দেশের জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভনের মাধ্যমে চাষীদের তামাক চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।

অধিক জনসংখ্যার সীমিত ভুখন্ডের এ দেশ। খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। পাশাপাশি তামাক চাষ দরিদ্রতা ও অপুষ্টি ঘাটতি বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তামাক পাতা শুকানোর জন্য প্রতিবছর দেশের বনাঞ্চল ধবংস হয়ে যাচ্ছে, বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। তামাক চাষের সময়ে স্কুলে বাচ্চাদের উপস্থিতির হার কমে যায়। তামাক চাষ অনেক শ্রমের প্রয়োজন ও কঠিন কাজ। তামাক চাষের সঙ্গে সম্পৃক্তদের হাঁপানিসহ শ্বাস ও চর্মজনিত রোগের বিস্তার ল্য করা যায়। এছাড়া মারত্মক বার্জাজ ডিজিজ এর মত ভয়াবহ রোগও ল করা যাচ্ছে। তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায় এবং ১০ বছর পর সে জমি সম্পূর্ণভাবে চাষ অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে আরো কঠোর কার্যক্রম দরকার।

৫. তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক দতা বৃদ্ধি ও সচেতনতা
তামাক নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের দতা বৃদ্ধির ল্য বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগ দতা বৃদ্ধির পদপে গ্রহণ করা হচ্ছে। তামাক বিরোধী সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও, সিবিও, সিভিল সোসাইটি ও গনমাধ্যমের কর্মীদের তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে দতা বৃদ্ধির ল্েয বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে। বিগত বছরে সরকারীভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও দি ইউনিয়নের সহযোগিতায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের সাথে জড়িত সরকারী কর্মকর্তাদের দতা বৃদ্ধির ল্েয কর্মশালা আয়োজন করা হয়। তবে এ ধরনের কর্মশালা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনারে অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পালণ ও তামাকজাত দ্রব্যের তিকর দিক বিষয়ে এখনো সরকারীভাবে সীমিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। তবে সরকারের সহযোগি স্বেচ্ছাসেবী তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠনগুলো এেেত্র সক্রিয়ভাবে তামাক বিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এর মধ্যে বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, পোষ্টার, স্টিকার, লিফলেট, ভ্রাম্যমান গানের দল, পথ নাটক, বিভিন্ন ক্যাম্পেইন অন্যতম। তবে জনসংখ্যার অনুপাতে এ সকল কার্যক্রম খুবই অপ্রতুল। সরকারকে এেেত্র সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক দতা বৃদ্ধি ও সচেতনতা েেত্র সরকারী ও স্বেচ্ছাসেবী তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠনগুলো মাঝে আরো বেশি সমন্বয় সাধন জরুরি।

৬. তামাক নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমের ভূমিকা
তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সক্রিয় ও অগ্রণী ভূমিকা পালণ করে আসছে। ভয়েজ অব ডিসকভারী প্রতিহত, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস, এফসিটিসি র‌্যাটিফাই, স্বাস্থ্য সচেনতা, তামাক চাষের ভয়াবহতা ও তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে জনমত সৃষ্টিতে গণমাধ্যম সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ বেশ কয়েকবার পত্রপত্রিকায় আইন বিষয়ে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। ধারাবাহিকভাবে তামাক বিরোধী সচেতনতার ল্েয সরকারী পৃষ্টপোষকতায় গণমাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম জরুরি।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদপে থাকলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তা গণমাধ্যমে কর্মীদের নিকট পৌছে না। সরকারীভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকার ও দেশের ইতিবাচক উদ্যোগগুলো গণমাধ্যমের নিকট পৌছে দেয়া প্রয়োজন। এ ধরনের পদপে গণমাধ্যমকে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সঠিক ও সময়পোযোগী তথ্য খুজে বের করতে সহযোগিতা করবে।

৭. ধূমপান ত্যাগে সহযোগিতা
তামাক ব্যবহার হ্রাসে ধূমপান ত্যাগে সহযোগিতা একটি অন্যতম উপায়। কিন্তু বাংলাদেশ এ প্রক্রিয়া এখনো জোরালোভাবে শুরু করা সম্ভব হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় সীমিত পর্যায়ে বিআইডিসি রাজশাহী এবং এখলাসপুর সেন্টার অব হেলথ নামক তামাক বিরোধী সংস্থা কুইট কার্যক্রম সফলতার সাথে পরিচালনা করে। মানবিক নামক অপর একটি সংস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতা ডক্টর ফর হেলথ এবং কুইট লাইনের মাধ্যমে কিছু সময় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। দেশের ক্রমবর্ধমান তামাক ব্যবহারকারীর কথা বিবেচনা করে সরকারী পৃষ্টপোষকতায় এ ধরনের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

৮. ঘধঃরড়হধষ ঝঃৎধঃবমরপ চষধহ ড়ভ অপঃরড়হ ভড়ৎ ঞড়নধপপড় ঈড়হঃৎড়ষ
তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে গতিশীল করার ল্েয বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘধঃরড়হধষ ঝঃৎধঃবমরপ চষধহ ড়ভ অপঃরড়হ ভড়ৎ ঞড়নধপপড় ঈড়হঃৎড়ষ ২০০৭-২০১০ প্রণয়ন করে। দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে দিক নির্দেশনা প্রদানের এ পরিকল্পনা পত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এ বছর এ দলিলের সময় সীমা শেষের প্রেেিত এ দলিল মূল্যায়ন ও পুণপ্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

৯. জাতীয়, জেলা ও উপজেলা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) টাস্কফোর্স
তামাক আইন বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার জাতীয়, জেলা ও উপজেলা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) টাস্কফোর্স গঠণ করেছে। প্রশাসন, মিডিয়া ও তামাক বিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এ কমিটি তামাক নিয়ন্ত্রণে একটি শক্তি কেন্দ্র। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) টাস্কফোর্স-র সভায় নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে না এবং কার্যক্রমও গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

কার্যক্রম পরিচালনার েেত্র মনিটরিং-র অভাব, আর্থিক সীমাবদ্ধতা, প্রয়োজনীয় উপকরনের অভাবসহ নানা বিধি কারণ জেলা ও উপজেলা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) টাস্কফোর্স কমিটির কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। তথাপিও দেশের অনেক স্থানের টাস্কফোর্স তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে অনেক অনুকরণীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ সকল কমিটিরগুলোকে প্রশিন, উপকরণসহ নানা সুবিধা মনিটরিং-র মাধ্যমে নিশ্চিত করার সম্ভব হলে স্থানীয় পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে।
১০. আন্তজার্তিক অঙ্গনে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ
তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রেেিত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভাবমূর্তি উজ্বল করেছে। মোবাইল কোর্ট, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) টাস্কফোর্স, সরকারী ও তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠনগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন অপসারণ, ভয়েজ অব ডিভকভারীর কার্যক্রম বন্ধ, নিত্য নতুন তামাক বিরোধী আন্দোলন, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে কার্যরত ব্যাপক সংখ্যাক তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন সম্পৃক্তকরণ ইত্যাদি বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠানগুলোই বাংলাদেশ থেকে শিখছে। সরকারী, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন এবং গণমাধ্যমের যৌথ কার্যক্রমের ফসল এই আন্তর্জাতিক অর্জন ও সম্মান। বাংলাদেশের অনেক তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মী আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদেেপ স্বেচ্ছাসেবী বা পেশাগতভাবে দায়িত্ব পালণ করে যাচ্ছে।

তবে, অনেক েেত্রই আমাদের নিজেদেরও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিভিন্ন দেশ হতে এ সকল বিষয়গুলো শেখার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভারের কারণে অনেকের পইে এ জ্ঞান লাভ করা সম্ভব হয় না, এমনকি নিজেদের অভিজ্ঞতা ও অর্জনগুলো তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। এ েেত্র সুযোগ ও সুবিধা সৃষ্টিতে সরকারকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন, যাতে যোগ্য লোকজন তাদের অভিজ্ঞতাগুলো বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দিতে পারে এবং বিশ্ব হতেও নিজের দেশের জন্য শিখতে পারে।

১১. তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষণা:
তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আলোচনার েেত্র এক সময় আমাদের বিদেশী ডাটা বা তথ্য ব্যবহার করতে হতো। আমাদের জন্য আনন্দের ও আশার কথা হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সিডিসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার জাতীয়ভাবে এষড়নধষ অফঁষঃ ঞড়নধপপড় ঝঁৎাবু (এঅঞঝ) সার্ভে সম্পন্ন করেছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়াটার লু বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঞঈ ইধহমষধফবংয ঘধঃরড়হধষ জবঢ়ড়ৎঃ ড়হ ঊাধষঁধঃরড়হ ড়ভ ঞড়নধপপড় ঈড়হঃৎড়ষ চড়ষরপরবং রহ ইধহমষধফবংয ২০০৯ নামক অপর একটি জাতীয় পর্যায়ের গবেষণা সম্পন্ন করেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ ইতিপূর্বে বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষণা হচ্ছে ২০০৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওসঢ়ধপঃ ড়হ ঞড়নধপপড় ৎবষধঃবফ রষষহবংং রহ ইধহমষধফবংয এবং ২০০০ ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র এবং পাথ কানাডার ঐঁহমৎু ভড়ৎ ঞড়নধপপড় শীর্ষক গবেষণা। এই গবেষণাটি তামাক ও দারিদ্রতা বিষযে বিশ্বের প্রথম গবেষণা। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৪ সালে তামাকের সাথে দরিদ্রতার সম্পর্ক তুলে ধরতে বিশ্ব তামাকম্ক্তু দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে। ব্র্যাক ২০০২ সালে ঞড় ঢ়ৎড়ফঁপব ড়ৎ হড়ঃ ঃড় ঢ়ৎড়ফঁপব: ঞধপশষরহম ঃযব ঃড়নধপপড় উরষবসসধ শীর্ষক গবেষণা করে।

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, এইচআরডিসি ট্রাস্ট, উন্নয়ন সমন্বয়, উবেনীগ, ক্যাব, মানবিক, আরটিএম ইত্যাদি সংগঠনগুলো বিড়ি ব্যবহার, তামাক নিয়ন্ত্রণ, তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি, তামাক চাষ, প্যাকেট ওয়ানিং ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেছে। এ সকল গবেষনাগুলো জাতীয় সম্পন, যা দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে গতিশীল করবে। তথ্যাপিও দেশে তামাক ব্যবহার ত্যাগে সমস্যা, আইন বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা, আইন পালণে করণীয় ইত্যাদি বিষয়েও গবেষণার প্রয়োজনীতা রয়েছে।

১২. তামাক নিয়ন্ত্রণে কারিগরি সহযোগিতা
তামাক নিয়ন্ত্রণে বরাবরই আর্থিক সহযোগিতা সীমিত ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, হেলথ ব্রিজ, এফসিএ, ইউআইসিসি, আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি সীমিতভাবে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছে। ২০০৭ সাল হতে ইষড়ড়সনবৎম, ঢ়যরষধহঃযৎড়ঢ়রংঃ দি ইউনিয়ন এবং টোব্যাকো ফ্রি কিডস এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সংগঠন ও সরকারকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠনগুলোকে সহযোগিতা প্রদান করেছে।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দেশে যেখানে স্থানীয় পর্যায়েও অনেক সংগঠন তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। অনেক সংগঠনের পে নানাবিধ কারণে বাইরের প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এ সকল স্থানীয় সংগঠনগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকারীভাবে আর্থিক ও কারিগরি যোগান সৃষ্টি করা প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার, দেশীয় দাতা গোষ্ঠীগুলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সহযোগিতার ল্েয উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। যা দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে গতিশীল করবে।




১৩. বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট :
বাংলাাদেশ তামাক বিরোধী জোট তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠনগুলোর একটি সম্মিল্লিত মঞ্চ। তামাক নিয়ন্ত্রণের নীতি প্রণয়নে এডভোকেসি, নীতি বাস্তবায়নে সহযোগিতা, সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন, দতা বৃদ্ধি, সরকারী ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন, সদস্য সংগঠনের স্বার্থরা জোটের অন্যতম কার্যক্রম।

সাংগঠনিক, সহযোগি ও নেটওয়ার্ক এই তিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারা দেশের সংগঠনগুলো এ নেটওয়ার্কর সাথে যুক্ত রয়েছে। ৩০ এপ্রিল ২০১০ অনুসারে বর্তমানে এর সাথে যুক্ত সংগঠনের সংখ্যা ৬৮৫ টি। এ সংগঠনগুলো অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন, কর বৃদ্ধি, ইত্যাদি ইস্যূভিত্তিক কমিটি, ৬টি বিভাগীয় ফোকাল পয়েন্ট এবং বিভিন্ন সংগঠনের একদল তরুন স্বেচ্ছাসেবীর কমিটি জোটের সচিবালয় পরিচালিনা করছে। জোট একটি স্বেচ্ছাসেবী তামাক বিরোধী আন্দোলনের মঞ্চ।

বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-র সদস্য সংগঠনগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মনিটরিং, আইন বাস্তবায়নে প্রশাসনকে সহযোগিতা, ধূমপানমুক্ত স্থান সৃিষ্ট, আইন উন্নয়ন জনমত, কর বৃদ্ধির বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিসহ নানাবিধ কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালিত করছে।

১৪. পরিশিষ্ট
তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অর্জন অনেকখানি। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত দেশের এই অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করতে অব্যাহত প্রয়াশ চালাচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ ও তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো বিষয়ে নৈতিবাচক প্রচারণা তাদের এ সকল কার্যক্রমের অন্যতম হাতিয়ার। কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসার স্বার্থে নানাভাবেই দেশের তামাক বিরোধী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে।

তামাক কোম্পানির তাদের মুনাফার উদ্দেশ্যে মানুষকে রোগ ও মৃত্যুর দিকে ঢেলে দিচ্ছে, অপর দিকে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীদের উদ্দেশ্য মানুষের স্বাস্থ্যকে রা করা। মানুষের স্বাস্থ্য অপো অর্থ কখনোই মুখ্য হতে পারে না। সরকার, প্রশাসন, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন, গণমাধ্যমকর্মীদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও পদপে কোম্পানির অশুভ উদ্দেশ্য প্রতিহত করে জনগনের স্বাস্থ্যকে রা করবে এ আমাদের বিশ্বাস।

সুপারিশ:
ক্স তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের মনিটরিং জোরদার, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপন;
ক্স এফসিটিসি-র আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দ্রুত পদপে গ্রহণ;
ক্স বিড়ি-সিগারেটসহ সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর বৃদ্ধি করা। কর বৃদ্ধির অর্থ দরিদ্র বিড়ি শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় করা;
ক্স পরিবেশ, অর্থ, স্বাস্থ্য রায় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদপে গ্রহণ;
ক্স আইন বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দতা বৃদ্ধির ল্েয পদপে গ্রহণ;
ক্স তামাক বিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধির ল্েয সরকারীভাবে উদ্যোগ গ্রহণ;
ক্স সরকারীভাবে নিয়মিত গণমাধ্যমকে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কার্যক্রম বিষয় তথ্য প্রদানের প্রক্রিয়া তৈরি;
ক্স ধূমপানত্যাগে সহায়ক কর্মসূচী তৈরি করা;
ক্স ঘধঃরড়হধষ ঝঃৎধঃবমরপ চষধহ ড়ভ অপঃরড়হ ভড়ৎ ঞড়নধপপড় ঈড়হঃৎড়ষ ২০০৭-২০১০ মূল্যায়ণ এবং পুণপ্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ;
ক্স আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টির ল্েয পদপে গ্রহণ;
ক্স জেলা ও উপজেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স-র প্রশিন, উপকরণসহ নানা সুবিধা ও মনিটরিং নিশ্চিত করা;
ক্স স্থানীয় সরকার, দেশীয় দাতা গোষ্ঠীগুলোর সহযোগিতায় স্থানীয় পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ;
তামাক নিয়ন্ত্রণে সাম্প্রতিক কার্যক্রম এবং
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়নে প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক সেমিনার
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১০, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা

তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সরকার, গণমাধ্যম ও তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর সম্মিল্লিত কার্যক্রমের ফসল এ অর্জন। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ এর প্রেেিত তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান হ্রাস, প্যাকেটের গায়ে জোরালো স্বাস্থ্যসতর্কবানী এ সকল বিষয়গুলো অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

তামাক ব্যবহার হ্রাসে এ অর্জনগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদপে হলেও, আরো অনেক বিষয় রয়েছে যা নানাবিধ কারণে যথেষ্ট অগ্রগতির সম্ভাবনা থাকলেও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি। এ সকল কার্যক্রমগুলোর মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধি, ধূমপান ত্যাগে সহযোগিতামূলক কার্যক্রম, তামাক চাষের পরিবর্তে বিকল্প খাদ্যশষ্য উৎপাদনে সহযোগিতা প্রদান, প্রত্য পরো বিজ্ঞাপন সম্পূর্ন নিষিদ্ধ, প্যাকেটের গায়ে সচিত্র সতর্কবাণী প্রদান, শতভাগ ধূমপানমুক্ত স্থান সৃষ্টি সংক্রান্ত বিষয়গুলো এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

গত বছরের দেশের বিভিন্ন স্থানে তামাক চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। অপর দিকে তামাক কোম্পানিগুলোও আইনকে পাশ কাটিয়ে নানাভাবে প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তামাক চাষ বৃদ্ধির এহেন পরিস্থিতিতে গত মাসে বান্দরবন জেলা জজ আদালতে তামাক চাষের প্রেেিত বিভিন্ন তি বন্ধে প্রতিকার চেয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়, যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। অপর দিকে মহামাহ্য হাইকোর্ট আগষ্ট ২০১০ অধিকার ভিত্তিক সংগঠন অপরাজয় বাংলাদেশ ও আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আবেদনের প্রেেিত বিড়ি শিল্পে শিশু শ্রম বন্ধের নির্দেশনা প্রদান করেন। যা তামাক শিল্পে শিশু শ্রমিক নিয়োগ বন্ধে একটি যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিগণিত হবে। ইতিমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় তামাক চাষের সকল ধরনের ভর্তুকী বন্ধের ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তামাক চাষের জন্য ঋণ সহযোগিতা বন্ধে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে এ সকল নির্দেশনা বা সিদ্ধান্তসমূহকে একটি আইনী কাঠামোতে নিয়ে আসা প্রয়োজন। যা তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সুসংবদ্ধ ও গতিশীল করবে।

আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) বাংলাদেশ সরকার ২০০৪ সালে র‌্যাটিফাই করে। এ চুক্তি অনুসার র‌্যাটিফাইয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের সকল ধরনের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। পুর্বেই বলা হয়েছে কোম্পানিগুলো আইনের ফাকফোকর দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করে আসছে। অপর দিকে তামাক ব্যবহারকারীদের সচেতন করতে সম্প্রতি সময়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র সতর্কবানী প্রদানের বিষয়ে অনেক দুর অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশে অগ্রগতি যথেষ্ট নয়।

আশার কথা হচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আইনটি সংশোধনের ল্েয উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জনস্বাস্থ্য রায় আইনটি সংশোধনের প্রক্রিয়া দ্রুত করা প্রয়োজন। তামাক চাষের বৃদ্ধি, তামাক কোম্পানিগুলোর আইন লঙ্গন করে বিভিন্ন কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ঋঈঞঈএর বাধ্যবাধকতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় আইনটি সংশোধন করার কার্যক্রম জোরদার করার ল্েয এটি একটি উৎকৃষ্ট সময়। আইন প্রয়োগে সরকারের অভিজ্ঞতা, এফসিটিসি গাইড লাইন, তামাক বিরোধী সংগঠন এবং গণমাধ্যমের সুপারিশগুলো সংকলণ করে আইনটি সংশোধন করা হলে, বাংলাদেশের আইনটি জনস্বাস্থ্য রায় শক্তিশালী আইনে পরিণত হবে।

আগামী নভেম্বর ২০১০ উরুগুয়ে অনুষ্টিত হতে যাচ্ছে ঋঈঞঈএর ঈড়হভবৎবহপব ড়ভ ঃযব চধৎঃরবং (ঈঙচ)- এর সভা। যাতে বাংলাদেশ ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবে। উক্ত সভার পূর্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধনের প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করা হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমুর্তি আরো উন্নত হবে।

বিদ্যমান আইনের উল্লেখ্যযোগ্য প্রতিবন্ধকতা
ক্স ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনটিতে শুধু ধূমপানের উপাদানগুলো (বিড়ি, সিগারেট, সিগার, চুরুট ইত্যাদি) অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য যেমন: সাদাপাতা, জর্দ্দা, গুল ইত্যাদি চর্বনযোগ্য তামাকজাত দ্রব্যকে এর সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অর্থাৎ শুধুমাত্র ধোয়াঁযুক্ত তামাকই আইনের অন্তর্ভুক্ত। ধোঁয়াবিহীন (ঝসড়শবষবংং) তামাক এর অর্ন্তভুক্ত নয়।

ক্স এক কামরায় অধিক পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানের স্থানের বিধান রয়েছে। পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য জরিমানা অত্যন্ত কম।

ক্স বিগত দিনে যান্ত্রিক পাবলিক পরিবহন ধূমপানমুক্ত কার্যক্রম অনেকাংশে সফল হয়েছে। তবে বিদ্যমান আইনে অযান্ত্রিক পাবলিক পরিবহনগুলো ধূমপানমুক্ত নয় এবং কর্মস্থল, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, রেষ্টুরেন্ট এবং সেলুনকে ধূমপানমুক্ত স্থানের আওতায় আনা হয়নি। আইনে এফসিটিসি অনুসারে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।

ক্স ধূমপানমুক্ত স্থান রাখতে ব্যর্থ হলে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের মালিক ব্যবস্থাপক বা তত্ত্বাবধায়কদের জরিমানা বা শাস্তির বিধান রাখা হয়নি অর্থাৎ ধূমপানমুক্ত স্থান তৈরিতে বাধ্যবাধকতার বিধান নেই।

ক্স তামাক কোম্পানির আন্তরাষ্ট্রীয় ও পরো বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়।

ক্স তামাক কোম্পানিগুলো কোম্পানির নাম লোগো ব্যবহার করে সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচীর নামে তামাকজাত দ্রব্যের প্রসারের ল্েয পরো বিজ্ঞাপন এবং বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ।

ক্স বাংলাদেশে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিরর। বিদ্যমান লিখিত স্বাস্থ্য সতর্কবানী এসকল নিরর লোকদের জন্য বোধগম্য নয়।

ক্স বিদ্যমান আইনে যে সকল েেত্র তামাক কোম্পানির জরিমানার বিধান রয়েছে তার পরিমান অত্যন্ত কম এবং কয়েকটি েেত্র তামাক কোম্পানিকে জরিমানার কোন বিধান নেই।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধনের েেত্র সুপারিশসমূহ

সংজ্ঞা সংক্রান্ত
১. ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের শিরোনামের সাথে মিল রেখে আইনটিতে শুধু ধূমপানের বিষয়টি নয় অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য যেমন: গুল, জর্দ্দা, খৈনী, সাদাপাতা, সিগার এবং পাইপে ব্যবহার্য মিশ্রন (মিস্কার) সহ সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

২. “কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কমকর্তা” এর সংজ্ঞায় কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পরিধি বৃদ্ধি এবং সহজে জরিমানা আদায় ও আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা;
৩. দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ অযান্ত্রিক পরিবহনে যাতায়াত করে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ধূমপানমুক্ত পরিবহনের পরিধি বৃদ্ধির ল্েয অযান্ত্রিক পাবলিক পরিবহনগুলোকেও ধূমপানমুক্ত পাবলিক পরিবহনের সংজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসা এবং জনবহুল স্থানগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের সংজ্ঞা বিস্তৃত ও সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন।

ধূমপানমুক্ত স্থান :
১. পাবলিক প্লেস ও যান্ত্রিক, অযান্ত্রিক সকল পরিবহনে ধূমপানের স্থান সংক্রান্ত বিধান বাতিল করে ১০০% ধূমপানমুক্ত করা ;
২. এফসিটিসি অনুসারে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের সংজ্ঞায়িত করা;
৩. বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল রেষ্টুরেন্টসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও জনসমাগমস্থলকে পাবলিক প্লেসের আওতায় নিয়ে আসা;
৪. ধূমপানমুক্ত স্থান তৈরি করতে এবং রাখতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে শাস্তির বিধান করা;
৫. পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জরিমানা কমপে ৫০০ টাকা করা;
৬. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ধূমপানমুক্ত সাইন বাধ্যতামূলক করা;




সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী
১. তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে তিকর দিক তুলে ধরে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান;
২. তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়স্থলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ও নির্দেশিত সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রর্দশন ।
৩. তামাকজাত পণ্যের মোড়কে কোন প্রকার ব্র্যান্ড এলিমেন্ট বা অন্য কোন উপায়ে লাইট, মাইল্ড, লো-টার, স্মুথ বা এ জাতীয় শব্দ, চিহ্ন বা ডিজাইন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা;
৪. প্যাকেট ব্যতীত এবং দশ শলাকার নিচে তামাকজাত দ্রব্য ক্রয় বা বিক্রয় নিষিদ্ধ করা;
৫. সচিত্র সতর্কবাণী ছয় মাস পরপর পরিবর্তন বাধ্যতামূলক করা এবং এর প্রতিবেদন সরকারের নিকট দাখিল বাধ্যবাধকতা করা;

তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ
১. তামাকজাত দ্রব্যের সকল ধরনের প্রত্য ও পরো বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা;
২. নাটক সিনেমায় তামাক ব্যবহারের দৃশ্য মানুষকে তামাক সেবনে উদ্বুদ্ধ করে। এ ধরনের দৃশ্য দেশের জনগন বিশেষ করে তরুণ সমাজকে ধূমপানে উদ্বুদ্ধ করছে সিনেমা, নাটক, প্রামান্যচিত্রসহ অন্য মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রচার বা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা;
৩. আন্তঃরাষ্ট্রীয় তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা।
৪. তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক বা কৌটার অনুরূপ বা সাদৃশ্যে অন্য কোন প্রকার দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা;
৫. সামাজিক দায়বদ্ধতার(ঈড়ৎঢ়ড়ৎধঃব ঝড়পরধষ জবংঢ়ড়ংরনষরঃু) নামে তামাক কোম্পানির নাম, লোগো ব্যবহার করে প্রচারনা নিষিদ্ধ করা;

তামাক কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ
১. স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী হতে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি ও আইন সুরায় এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩-র বিষয় আইনের সংযুক্ত করা;
২. তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যে কোন নাগরিককে মামলা করার অধিকার প্রদান এবং জরিমানা ও শাস্তির পরিমান বৃদ্ধি;
৩. তামাক কোম্পানী কর্তৃক আইনভঙ্গের প্রেেিত কোম্পানিগুলোকে অভিযুক্ত, দোষী সাব্যস্ত করে জরিমানা ও শাস্তির বিধান করা এবং বর্তমান আইনে যে সকল েেত্র শাস্তির বিধান রয়েছে তার পরিমান বৃদ্ধি করা;
৪. তামাক কোম্পানির বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত ধারা, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী সংক্রান্ত ধারাসহ আইনের কোন ধারা লঙ্ঘন করলে কমপে কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান/ব্যবস্থাপনা পরিচালক/পরিচালক এর যে কেউ বা সবার কমপে ছযমাস জেল বা দশ ল টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান সংযুক্ত করা;
৫. কোম্পানি আইনগত ব্যক্তিসত্ত্বা বিশিষ্ট সংস্থা (ঈড়ৎঢ়ড়ৎধঃব ইড়ফু) হইলে, আইনে উল্লিখিত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত ও দোষী করা ছাড়াও উক্ত কোম্পানিকে আলাদাভাবে একই কার্যধারায় অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা যাবে, তবে ফৌজদারী মামলায় উহার উপর সংশ্লিষ্ট বিধান অনুসারে শুধু অর্থদন্ড আরোপ করা যাবে;

তামাক জাতীয় ফসল চাষ, উৎপাদন এবং তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণ
১. তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়নের বিধান সংযুক্ত করা;
২. সরকারী ও বেসরকারীভাবে তামাক কোম্পানিকে ঋণ প্রদান, সার বরাদ্ধ, কর মওকুফ বা অন্যান্য সুবিধাদি বন্ধের বিধান করা। তামাক জাতীয় ফসল বা তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনের জন্য কোন ধরনের ভুর্তকী বা ঋণ বা অন্য কোনরূপ সহযোগিতা প্রদান করা যাবে না;
৩. তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি এবং শুল্কমুক্ত তামাক বিক্রয় বন্ধে ঋঈঞঈ অনুসারে নীতিমালা প্রণয়ন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণের বিধান যুক্ত করা;

আইন মনিটরিং, বাস্তবায়ন ও অর্থায়ন
১. তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে আইনটি মনিটরিং ও মূল্যায়নের বিষয় সংযুক্ত করা;
২. সরকারীভাবে তামাক বিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির ল্েয প্রয়োজনীয় নীতিমালার বিধান সুস্পষ্টভাবে যুক্ত করা;
৩. তামাক কোম্পানিগুলো হতে আলাদা স্বাস্থ্য কর (ঐবধষঃয ঞধী) আদায়ের বিধান যুক্ত করা।

তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। বাংলাদেশের এ সকল পদপে আন্তজার্তিকভাবেও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তামাক নিয়ন্ত্রণে ল্েয বিদ্যমান সীমাবদ্ধতাগুলো অতিক্রম করা সম্ভব দেশে সম্মান ও ভাবমুর্তি আরো উজ্বল হবে। কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিদ্যমান সীমাবদ্ধতাগুলো অতিক্রম আইনটি সংশোধন করা ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব নয়।

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ১৯৯৯-২০০৯

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ১৯৯৯-২০০৯
সৈয়দ মাহবুবুল আলম, নীতিবিশ্লেষক

বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সরকার, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন ও গনমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তামাক নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমকর্মী ও বেসরকারী সংগঠনের কর্মীদের ১৯৯৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ধারাবাহিক সক্রিয় কার্যক্রমের ফসল তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয সরকারের গৃহীত ব্যাপক নীতিগত পদপে। তামাক নিয়ন্ত্রণে গৃহীত এ সকল নীতিগত পদপে বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে সুদৃঢ় করেছে। বিগত বছরে পাবলিক প্লেস ও পরিবহন ধূমপানমুক্তকরণ, তামাক কোম্পানির বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, তামাকের তিকর সচেতনতা বিষয়ে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে ধারাবাহিকভাবে আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন, আইন উন্নয়ন, তামাক কোম্পানির বিজ্ঞাপন কার্যকরভাবে নিষিদ্ধ এবং তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে দেশে কার্যকরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।

১৯৯৯ সালের পূর্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে স্বাস্থ্যতি এবং বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালন বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করা হতো। ১৯৯৯ সালের বিএটি গোল্ডলীফের প্রচারণা ভয়েজ অব ডিসকভারী শীর্ষক কার্যক্রম প্রতিহত করার ল্েয কার্যরত সংগঠনগুলো সম্মিল্লিত উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৯৯ সালে নভেম্বর মাসে হাইকোর্ট ভয়েজ অব ডিসকভারীর সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুলনিশি জারি করে। ফলে তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রত্য ও পরো বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধের দাবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদপে যোগ হয়। উল্লেখ্য যে, সে সময়ে তামাক কোম্পানিগুলো জনসাধারণকে তামাক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার ল্েয লটারীসহ বিভিন্ন প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ বছর বিএটির ভয়েজ অব ডিসকভারী প্রতিহত করার মধ্য দিয়ে কার্যকরভাবে তামাক কোম্পানির বিভিন্ন প্রলুব্দ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের ল্েয একটি আইন প্রণয়নে বিষয়টি উঠে জোরালোভাবে আসে।

২০০০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে তামাক বিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম ঝড়ঁঃয ঊধংঃ অংরধ অহঃর-ঞড়নধপপড় (ঝঊঅঅঞ) মশাল নিয়ে সারা দেশে প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করে। বেসরকারী সংগঠনগুলো এ মশাল নিয়ে জনসচেতনতার ল্েয দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রচারণা কার্যক্রম গ্রহণ করে। এ কার্যক্রমের সংবাদ নিয়মিত প্রচারের মাধ্যমে গণমাধ্যমও জনসচেতনতার ল্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালণ করে। ২০০০ সালে অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে তামাক ব্যবহারের প্রেেিত দারিদ্রতা ও অপুষ্টি বিষয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। যা তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে একটি ভিন্নমাত্রা যোগ করে। এ বছর মাননীয় হাইকোর্ট ভয়েজ অব ডিসকভারীর রীটের প্রেেিত ভয়েজ অব ডিসকভারীর কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করে এবং সরকারকে তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয সুস্পষ্ট কিছু নির্দেশনা প্রদান করে, যার মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন অন্যতম।

২০০১ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে দতা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ প্রদান করা হয়। এ বছর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োজনীয়তা, আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এফসিটিসি, তামাক ব্যবহারের স্বাস্থ্য, অর্থ ও পরিবেশের তির বিষয়টি প্রধান্য পায়। এ বছর তামাক নিয়ন্ত্রণে বেসরকারী সংগঠনগুলোর দতা ও সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির ল্েয ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের এ সংবাদগুলো জাতীয় ও স্থানীয় প্রচার মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। তামাক বিরোধী সচেতনতার ল্য স্বাস্থ্য কার্যক্রমের পাশাপাশি, ঋণ দান, সঞ্চয়, পুষ্টি, মানবাধিকার ইত্যাদি কার্যক্রমের সাথেও তামাক ব্যবহার সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম সম্পৃক্ত করা হয়। উল্লেখ্য যে, এ বছর প্রথমবারের মতো সারা দেশের বিভিন্ন সংগঠন স্থানীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে।

২০০২ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন, এফসিটিসি, তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি বিষয়ে সারা দেশে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করে। তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সংগঠনগুলোর দতা ও জ্ঞান বৃদ্ধির প্রেতি সংগঠনগুলো জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারকদের সাথে তামাক নিয়ন্ত্রণের কার্যকর বিভিন্ন নীতি ও আইন প্রণয়নের বিষয়ে আলোচনা শুরু করে। ফলে এ বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সচেতনতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের তামাক নিয়ন্ত্রণের এ মতামতসমূহ ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরার ল্েয গণমাধ্যম সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করে।

২০০৩ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন, এফসিটিসি স্বার বৃদ্ধির বিষয়ে প্রচারণা বৃদ্ধি বিষয়ে ব্যপক কর্মসূচী গৃহীত হয়। গণমাধ্যমের কর্মীরা এ সংবাদগুলো গুরুত্বের সাথে প্রচার মাধ্যমে তুলে ধরে। এ বছরের উল্লেখযোগ্য সফলতা হচ্ছে এফসিটিসি স্বার। বাংলাদেশ বিশ্বে সর্বপ্রথম এফসিটিসি চুক্তিতে স্বারকারী দেশ হবার গৌরব লাভ করে। এছাড়া এ বছর ইম্পিরিয়াল টোব্যাকো কোম্পানি তাদের টেমস নামক একটি সিগারেটের এ দেশে বাজারজাত করণের ল্েয টেমস খান লন্ডন যান শীর্ষক লোভনীয় ও প্রতারণামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারনা শুরু করে। এ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত বেসরকারী সংগঠনগুলো আদালতে মামলা করে এবং মাননীয় আদালত তামাক কোম্পানির প্রতারণামূলক এ কার্য়ক্রম নিষিদ্ধ করে।

২০০৪ সালে এফসিটিসি র‌্যাটিফাই এবং এফসিটিসির আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের দাবি জোরদার হয়। সংগঠনগুলো র‌্যালী, মানববন্ধন, সভা-সেমিনার, স্বার কর্মসূচী ইত্যাদি মাধ্যমে জনমত সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করে। গণমাধ্যম এ দাবিকে সারা দেশের মানুষের কাজে পৌছে দেয়। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের তামাক বিরোধী আন্দোলনের জোরালো হওয়ায় সরকার এফসিটিসি র‌্যাটিফাই এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।

২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার বহুল প্রত্যাশিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করে। দেশের সকল গণমাধ্যম এ বিষয়ে গুরুত্বের সাথে প্রচার করে। সারা দেশের মানুষের মাঝে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিষয়ে ইতিবাচক সমর্থন পাওয়া যায়। পাবলিক প্লেস ও পরিবহনের ধূমপান অনেকাংশে হ্রাস পায়, বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড ও গণমাধ্যমসহ তামাক কোম্পানির সকল প্রচারনা কার্যক্রম বন্ধ হয়, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সারাদেশে তামাক কোম্পানির বিজ্ঞাপন অপসারিত হয়। বেসরকারী সংগঠনগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মনিটরিং এ মাধ্যমে আইন বাস্তবায়নে অবস্থা প্রশাসন ও গনমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বিঘিœত হলে গণমাধ্যম গুরুত্বের সাথে বিষয়টি তুলে ধরে। বেসরকারী সংস্থা ও গনমাধ্যমের যৌথ মনিটরিং এর ফলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করে তামাক কোম্পানির বিভিন্ন প্রচারণা কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সরকার আইনী পদপে গ্রহণ করে।

২০০৬ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন এবং আইনের কয়েকটি ধারা আরো বিশ্লেষণ করে বিধিমালা পাশ, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মনিটরিং, আইন বাস্তবায়নের ল্েয জনমত সৃষ্টির ল্েয গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালণ করে। এ বছর আইন বাস্তবায়নের ল্েয ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম গৃহীত হয়। এ বছরের উল্লেখযোগ্য সফলতা হচ্ছে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা পাশ, আইন বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের বেসরকারী সংস্থাগুলোর দতা বৃদ্ধির ল্েয ব্যাপক পদপে গ্রহণ করা হয়।

২০০৭ সালে তামাক কোম্পানির আইন ভঙ্গের বিষয়টি গণমাধ্যম তুলে ধরে। এ বছর সরকার আইন বাস্তবায়নের ল্েয সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এছাড়াও এ বছরের উল্লেখযোগ্য সফলতা হচ্ছে, তামাক নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল গঠন, তামাক নিয়ন্ত্রণ জাতীয় ও স্থানীয় টাস্কফোর্স গঠন। এছাড়া এ বছরের উল্লেখযোগ্য অপর একটি বিষয় হচ্ছে সিগারেটের উপর ট্যারিফ বৃদ্ধি। কিন্তু কোম্পানিগুলোর কুটকৌশলে সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি না পাওয়ার প্রেেিত কাঙ্খিত ল্য অর্জন ব্যহত হয়েছে।

২০০৮-০৯ এ বছরগুলোর সারা দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতের ব্যাপক প্রচারণা করা হয়। বিশেষ করে ধূমপানমুক্ত স্থান গঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, দি ইউনিয়ন, টিএফকের সহযোগিতার সারা দেশে ব্যাপক কার্যক্রম গৃহীত হয়। পাবলিক প্লেস ও পরিবহনগুলোর বিপুল সংখ্যক ধূমপানমুক্ত সাইন সম্বলিত স্টিকার, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়। পর্যবেনমূলক গবেষণায় দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকার পাবলিক প্লেস ও পরিবহন ধূমপান ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ বছরগুলোতে তামাক কোম্পানিগুলোর সাইনবোর্ডসহ নানা ধরনের প্রত্য বিজ্ঞাপন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলোর পরোভাবে ব্যপক বিজ্ঞাপন শুরু করে।

বেসরকারী সংগঠনগুলোর তামাক কোম্পানিগুলোর পরো বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে জোরালো জনমত সৃষ্টি করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তামাক কোম্পানিগুলোর পরো বিজ্ঞাপন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। ইষড়ড়সনবৎম ওহরঃরধঃরাব এর আওতায় তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ নিশ্চিত করার ল্েয সারা দেশে বিভিন্ন কার্যক্রম গৃহীত হয়। এরই ধারাবাহিকতা সারা দেশের বিভিন্ন স্থানের জেলা ও উপজেলা তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স সক্রিয়ভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ বছরগুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ল্েয সারা দেশের জনমত সৃষ্টি ও সুপারিশ তৈরি করা হয়।






যে কোন কিছুর একটি দীর্ঘস্থায়ী ফলাফল পেতে সময়ের প্রয়োজন। দেশে ব্যাপকভাবে তামাক ব্যবহার হ্রাস একটি সময় সাপে প্রক্রিয়া। এ ধরনের কাঙ্খিত ফলাফল পেতে শুধু নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেক দেশকে অপো করতে হয়েছে এক যুগের বেশী সময়। কিন্তু ১৯৯৯-২০০৯ মাত্র ১০ বছরের এ নীতিগত অর্জনগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে সুদৃঢ় করেছে। এ নীতিগত কার্যক্রমগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন আমাদের কাঙ্খিত ল্েযর দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা আশা করি, আগামী দিনগুলোতে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণকে গতিশীল করবে। ফলে দেশে তামাকজনিত রোগ,মৃত্য, অর্থ অপচয় বহুলাংশে হ্রাস পাবে। বাংলাদেশ বিশ্বে তামাক নিয়ন্ত্রিত দেশে হিসেবে মাথা উচু করে দাড়াবে।

গত বছরগুলোতে আমাদের অর্জন অনেক। দেশে কার্যক্ররভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ করার ল্েয আমাদেরকে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যের উপর ব্যাপক হারে মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি আইনটির দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের অন্যতম ইতিবাচক দিক হচ্ছে, এ সেক্টরে সরকারী সংস্থাগুলো, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক তামাক বিরোধী সংগঠন, গণমাধ্যমকর্মীরা সম্মিলিতভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করে থাকে। আমরা আশা করি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশে কার্যকরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

বিকল্প কর্মসংস্থান ও রোগের চিকিৎসা খরচ তামাকজাত দ্রব্য হতে আদায় করতে হবে

বিকল্প কর্মসংস্থান ও রোগের চিকিৎসা খরচ
তামাকজাত দ্রব্য হতে আদায় করতে হবে
সৈয়দ মাহবুবুল আলম, নীতি বিশ্লেষক


রোগ ও মৃত্যু রোধ করা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের ল্েয মানুষের রোগ ও মৃত্যু হ্রাসে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করছে। সড়ক ও রেল দুঘর্টনা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা অন্য ঘটনায় কোন কারণে এক সঙ্গে কিছু মানুষের মৃত্যু হলে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়। সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এ মৃত্যু রোধে নানামুখি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবি জানায়। অথচ তামাক ব্যবহারের প্রত্য ফল হিসেবে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৭,০০০ জন মৃত্যুবরণ এবং ৩৮২,০০০ লোক পঙ্গুত্ব বরণ করলেও এ বিষয়ে কার্যকর পদপে করা হয়নি। বরং এ ল্েয গৃহীত বিভিন্ন পদপেগুলোকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।

তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয শতভাগ ধূমপানমুক্ত স্থান, বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, প্যাকেটের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানীর, সচেতনতার পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি একটি কার্যকর উপায় বলে স্বীকৃত। কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণের এ পদপে গ্রহণ করতে গেলে একটি শ্রেণী কর্মসংস্থান হ্রাস হবে, রাজস্ব কমে যাবে, দরিদ্র মানুষ তিগ্রস্ত হবে বলে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে থাকে। প্রথমত প্রশ্ন হচ্ছে অর্থ বা রাজস্ব পাব বলেই কি আমরা মানুষের রোগ ও মৃত্যুঘাতী পন্যকে উৎসাহিত করবো কিনা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। মানবিকতা, সংবিধান ইত্যাদি কোন দিন থেকেই তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকে উৎসাহিত করা সম্ভব নয়।

তামাক চাষ ও উৎপাদনের লাভবান হয় কোম্পানির মালিক। তিগ্রস্ত হয় চাষী, শ্রমিক ও ব্যবহারী। অথচ চাষী, শ্রমিক ও ব্যবহারীকারীদের দোহাই দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণের বিরোধীতা করা হয়। তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্তর্জাতিক চুক্তি এফসিটিসি অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের উপর বৃদ্ধির ল্েয সরকার পদপে গ্রহণ করা প্রয়োজন। অথচ বিগত কয়েক বছরে তামাকজাত দ্রব্যের উপর মুদ্রাস্ফীতি অনুসারে কর বৃদ্ধির কোন পদপে গ্রহণ করা হয়নি। বরং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সস্তায় তামাকজাত দ্রব্য প্রাপ্তির প্রেেিত তামাক ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত বছরে সরকার তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি পদপে গ্রহণ করলেও কোম্পানিগুলোর ভ্রান্ত প্রচারণার কারণে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি।

তামাক এর অনেকগুলো তিকর দিকের মধ্যে তামাক চাষ অন্যতম। কৃষি জমিতে তামাক চাষ ও তামাক পাতা পোড়ানোর জন্য গাছ কেটে বনাঞ্চল ধ্বংস করায় খাদ্য ঘাটতি তৈরী হচ্ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এ বছর বাংলাদেশে তামাক চাষ আংশকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিক জনসংখ্যার সীমিত ভুখন্ডের এ দেশ। খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে।

তামাক ব্যবহার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলছে। গবেষণায় দেখা যায় তামাকের পিছনে ব্যয়কৃত অর্থের ৬৯% খাদ্যের পিছনে ব্যায় করা হলে ৫০% শিশুকে অপুষ্টি থেকে বাচাঁনো সম্ভব। এছাড়া তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির ফলে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাস করে এবং তামাক কোম্পানির নতুন ধূমপায়ী (বিশেষ করে যুবক এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে) তৈরিতে বাধাগ্রস্ত করে।

তামাক কোম্পানিগুলো কর বৃদ্ধি হলে রাজস্ব এবং কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে বলে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, কর বৃদ্ধি হলে তামাক ব্যবহার হ্রাস পেলেও দাম বৃদ্ধির প্রেেিত সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ হলে ১৮.৭% চাকুরি বৃদ্ধি পাবে। তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মাধ্যমে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব সরকার প্রয়োজনে দরিদ্র লোকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় করতে পারে। তামাককের উপর কর বৃদ্ধির ফলে সরকার তিনভাবে লাভবান হবে, প্রথমত রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে, দ্বিতীয়ত জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন হবে, তৃতীয় তামাক হতে রাজস্বের আদায়কৃত রাজস্ব তামাক শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানে ব্যয় করা সম্ভব হবে।

প্রায়শই কোম্পানিগুলো অনেক টাকা রাজস্ব দেয়া বলে নিজেদের জাহির করতে চায়। আমাদের একটি কথা স্মরণ রাখা প্রয়োজন কোম্পানিগুলো মূলত সংগৃহীত ভ্যাট রাজস্ব খাতে জমা দেয়, ভ্যাট পুরোটা জনগনের টাকা। মাত্র ১৫% ভ্যাটের টাকা রাজস্ব খাতে দিয়ে, সরকারের উপর রোগ ও অসুস্থ্যতার বোঝা চাপিয়ে কি পরিমান অর্থ লাভ হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়।

তামাক চাষ ও উৎপাদনে প্রেেিত কোম্পানির মালিক, কর্মকর্তাগণ লাভবান হলেও, তিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ ব্যবহারকারী, চাষী ও শ্রমিক আর এ সকল দিক বিবেচনায় এ সকল তিপুরণ কোম্পানি হতেই আদায় করা প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্মত কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা অগ্রাধিকার দিয়ে এ বাজেটে সরকার সকল ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির পদপে গ্রহণ করবে।

সকল কিছুর দাম বাড়ে তামাকের দাম বাড়বে না কেন?

সকল কিছুর দাম বাড়ে তামাকের দাম বাড়বে না কেন?
সৈয়দ মাহবুবুল আলম, নীতি বিশ্লেষক

তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার হ্রাসে সব ধরনের তামাকের উপর কর বৃদ্ধি ও প্রকৃত মূল্য বৃদ্ধি, ধূমপানমুক্ত স্থান, বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, প্যাকেটের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্যসতর্কবানী ইত্যাদি আইন ও নীতিগত বিষয়গুলো আন্তর্জাতিকভাবে পরিীত একটি কার্যকর উপায়। বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানমুক্তকরণ, বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, প্যাকেটের গায়ে স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদানের পদপে গ্রহণ করেছে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির সাথে সামঞ্চস্য রেখে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাসে কর বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশে যথার্থ পদপে গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ৪৩.৩% (৪১.৩ মিলিয়ন) প্রাপ্ত বয়স্ক লোক তামাক ব্যবহার করে । এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে রায় এবং নিরুৎসাহিত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মতো কার্যকর পদপে গ্রহণ করা জরুরি।

আজকের আলোচনার ২০১০-২০১১ সালের বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের বিষয়ে যে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে তা তুলে ধরছিঃ
১) জনস্বাস্থ্যের জন্য তিকর বিবেচনায় সিগারেটের মূল্যস্তর ও সম্পুরক শুল্ক যুক্তিসঙ্গত হারে বৃদ্ধি।
২) কৃষি জমিতে তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে তামাক (আন-ম্যানুফ্যাকচার্ড) রপ্তানির েেত্র ১০ শতাংশ হারে রপ্তানি শুল্ক আরোপ।
৩) সকল প্রচার সিগারেট, বিড়ি, গুল, জর্দ্দাকে কুটির শিল্পের আ্ওতা বহির্ভুতকরণের ল্েয প্রজ্ঞাপন জারিকরণ।
৪) সিগারেটের খুচরা মূল্য এবং সম্পুরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেেিত মূল্যস্তর ভেদে বিভিন্ন স্ট্যাম্প/ব্যান্ডরোল ব্যবহার এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পুরক শুল্ক পরিশোধ বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক একটি সাধারণ আদেশ জারিকরণ।
৫) ফিল্টারযুক্ত বিড়ির েেত্র স্থানীয় পর্যায়ে নতুনভাবে ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণের প্রেেিত মাঠ পর্যায়ে গৃহীতব্য কার্যক্রমের বিষয়ে একটি সাধারণ আদেশ জারিকরণ।

জনস্বাস্থ্যের জন্য তিকর বিবেচনায় দীর্ঘদিন পর বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাসের ল্েয যে সকল পদপে গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আমরা আশা করি প্রতিবছর সরকার তিকর তামাকজাত দ্রব্য হতে উচ্চ হারে কর আদায় করে বিকল্প কর্মসংস্থান ও তামাকজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যয়কৃত অর্থের যোগান নিশ্চিত করবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের উপর কর বৃদ্ধির যে প্রস্তাবনা করা হয়েছে মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় কম। ফিল্টার বিড়ির েেত্র কর আরোপ করা হয়েছে। বাজারে ফিল্টার বিড়ির ব্যবহার নেই বললেই চলে। অপরদিকে বাজারে বহুল ব্যবহৃত বিড়ির উপর কোন ধরনের শুল্ক আরোপ করা হয়নি।

তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি কেন জরুরি
তামাক একটি মরণঘাতী পণ্য। এ পণ্যের কারণে প্রতিদিন দেশের মানুষ নানাবিধ কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আপনাদের অবগতির জন্য বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিত্র তুলে ধরছি।

১. তামাক ব্যবহারের প্রত্য ফল হিসেবে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫৭,০০০ জন মৃত্যুবরণ, ৩৮২,০০০ লোক পঙ্গুত্ব বরণ করে
২. প্রতিবছর ১২,০০,০০০ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত প্রধান ৮টি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে রোগীর চিকিৎসা, অকালমুত্যু, পঙ্গুত্বের কারণে বছরে দেশের অর্থনীতিতে ১১০০০ কোটি টাকার তি হচ্ছে
৩. তামাক চাষ ও উৎপাদনে লাভবান হয় কোম্পানির মালিক। তিগ্রস্ত হয় চাষী, শ্রমিক ও ব্যবহারী। তামাকের উপর হতে উচ্চকর আদায় করে তামাক সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান ও তামাকজনিত রোগের চিকিৎসার আর্থিক যোগান নিশ্চিত করা সম্ভব।
৪. কৃষি জমিতে তামাক চাষ ও তামাক পাতা শুকানোর জন্য গাছ কেটে বনাঞ্চল ধ্বংস করায় খাদ্য ঘাটতি তৈরী হচ্ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে ।
৫. তামাক ব্যবহার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলছে। তামাকের পিছনে ব্যয়কৃত অর্থের ৬৯% খাদ্যের পিছনে ব্যায় করা হলে ৫০% শিশুকে অপুষ্টি থেকে বাচাঁনো সম্ভব ।
৬. ধূমপানসহ তামাক সেবন মাদক ব্যবহারের প্রবেশদ্বার। তামাক ব্যবহার বৃদ্ধি দেশে মাদক ব্যবহারকে আরো বৃদ্ধি করবে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির পদপে গ্রহণ জরুরি। মানুষের জীবন অপো কোন কিছুই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১১ এবং অনুচ্ছেদ ১৮ (১) সমূহের এ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হানিকর মদ ও ভেজষের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের করনের কথা বলা হয়েছে। আন্তজার্তিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-র আর্টিকেল-৬ নং ধারায় তামাক ব্যবহার হ্রাস কর বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে । নীতিনির্ধারনের েেত্র জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতির উপর তামাকের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিবেচনা তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর আরোপ করার অর্থ সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন।

তামাক ব্যবহার হ্রাসে কর বৃদ্ধির গুরুত্ব:
বিগত কয়েক বছরের অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেলেও তামাকজাত দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায়নি বরং কমেছে। সস্তায় তামাকজাত দ্রব্য প্রাপ্তির কারণে মানুষের মধ্যে তামাক ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, গড়ে ১০% মূল্য বৃদ্ধিতে উচ্চ আয় ও নিম্ন আয়ের দেশসমূহে ধূমপায়ী এবং ধূমপানজনিত মৃত্যু উল্লেখ্যযোগ্য হারে হ্রাস পায়। দণি এশিয়ার দেশগুলোতে ধূমপায়ী হ্রাসের মাত্রা (সিগারেট ব্যবহারী) ৩ মিলিয়ন এবং মৃত্যু হ্রাসের মাত্রা হবে ০.০৭ মিলিয়ন । গবেষণায় দেখা যায় থ্যাইল্যান্ডে ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে যারা ধূমপান ত্যাগ করেছে তার মধ্যে ৬১.২% মূল্যবৃদ্ধির কারণে ধূমপান ত্যাগ করেছে। ২০০৮ সালে মেক্সিকোতে সিগারেটের দাম ১০% বৃদ্ধির প্রেেিত তামাক ব্যবহার ৬.৪% হ্রাস পায় ।

বাংলাদেশে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর উচ্চহারে কর বাড়ালে ধূমপায়ীদের ৬০.১% বলেছেন তামাক ব্যবহার হ্রাস করবে, ২৮.২% বলেছেন সম্পূর্ণ ত্যাগ করবে, ৫.২% অন্য সস্তা তামাক ব্যবহার করবে। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় তামাক ব্যবহার হ্রাসে আইনের পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের উপর প্রতিনিয়ত কর বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধি, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক
তামাক ব্যবহারকারী হ্রাস হবে বিধায় কোম্পানিগুলো তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধিকে ভয় পায়। বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলো নানা ধরনের বিভ্রান্তমূলক প্রচারণার মাধ্যমে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে থাকে। কর বৃদ্ধি হলে সরকারের রাজস্ব হ্রাস পাবে এটি তাদের বিভ্রান্তমূলক প্রচারণা। গবেষণা ও অভিজ্ঞতায় দেখা যায় তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির ফলে সরকারের রাজস্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। মেক্সিকোতে ২০০৮ সালে সিগারেটের দাম ১০% বৃদ্ধিতে সরকারের রাজস্ব ১৬% বৃদ্ধি পায় । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ গবেষণা ঞড়নধপপড় ঈড়হঃৎড়ষ রহ উবাবষড়ঢ়রহম ঈড়ঁহঃৎরবং এ দেখা যায়, তামাকের উপর ১০% কর বৃদ্ধিতে সরকারের রাজস্ব ৭% বৃদ্ধি পায়। ১৯৯১, ১৯৯৩ এবং ২০০৭ সাল পর্যন্ত থ্যাইল্যান্ড সরকার তামাকজাত দ্রব্যের উপর ৮ বার কর বৃদ্ধি করেছে। ফলে কর বৃদ্ধি ও এ কারণে সিগারেটের দাম বাড়ায় ধূমপানের হার ও ধূমপায়ীর সংখ্যা কমলেও থাই সরকারের রাজস্ব ব্যাপক হারে বেড়েছে। ৯৩ সালে থাই সরকারের রাজস্ব যেখানে ১৫,৩৮৫ মিলিয়ন বাথ ছিল, তা ২০০৭ সালে বেড়ে দাড়ায় ৪১,৫২৮ মিলিয়ন বাথ। থ্যাইল্যান্ড সরকার তামাক হতে প্রাপ্ত রাজসের একটি অংশ জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য ব্যয় করছে। উন্নয়ন সমন্বয় এবং ট্যোবাকো ফ্রি কিডস এর গবেষণায় দেখা যায় সিগারেটের উপর ৭৯% নির্ধারণ করা হলে এবং বিড়ির উপর ২৬% কর বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার ২০১০-২০১১ অর্থ বছরের সিগারেটে হতে ৯০৩ কোটি টাকা আয় করতে পারে, যা বর্তমান রাজস্বের ২০ শতাংশ এবং বিড়ি হতে ৬৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারে।

তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি বিকল্প কর্মসংস্থান সম্ভাবনা:
তামাকজাত শিল্প হতে লাভবান হয় কোম্পানির মালিক। তিগ্রস্ত হতে হয় তামাক চাষী, শ্রমিক এবং সেবনকারীদের। কোম্পানির মালিকের লাভের জন্য দরিদ্রতা, রোগ, অশিা, স্বাস্থ্যহানি এবং মৃত্যু এ সকল কিছুই জোটে জনগনের ভাগ্যে। তামাক কোম্পানিগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থ কোন অবস্থাই মানসম্মত নয় । তবু যখনই সরকারর বিড়ি-সিগারেটসহ সব তামাকের উপর কর বৃদ্ধির পদপে গ্রহণ করে তখনই কোম্পানিগুলো কর্মসংস্থান কমে যাবে বলে বিভ্রান্তকর প্রচারণা চালিয়ে নীতিনির্ধিারক, গণমাধ্যম কর্মীসহ সংশ্লিস্টদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে থাকে।

প্রথমেই একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন শুধুমাত্র কোম্পানির লাভের জন্য আমরা এদেশের জনগনকে কোন স্বাস্থ্যহানিকর কর্মকান্ডে নিয়োজিত রাখতে পারি না। আমরা অবশ্যই চাই না দরিদ্ররা তামাক ব্যবহার করুক। আমরা চাই দরিদ্ররা তাদের অর্থ মৌলিক প্রয়োজনে ব্যয় করুক। এজন্য তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নেই।

পাটের মতো একটি পরিবেশবান্ধব এবং অর্থকরী শিল্প যেখানে আমরা রা করতে পারিনি। নানা কারণে দেশের অনেক পাটকল বন্ধ হয়েছে। সেখানে কেন তামাক নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে পারবো না? তামাকজাত দ্রব্য হতে উচ্চ কর আদায় করে, সেই অর্থে পাটের মতো পরিবেশ বান্ধব শিল্পে বিনিয়োগ করা সম্ভব।

শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বেই তামাক কোম্পানিগুলো শ্রমিকের সংখ্যা ও কর্মসংস্থান এর বিষয়গুলো তুলে কর বৃদ্ধির বিরোধী করে থাকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরে‌্যা ২০০৭ প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ১৫ বছর ও তার উর্ধ্বে প্রায় ২,৬৬,৮১৮ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কাজ করে । অথচ কোম্পানিগুলো তার চেয়ে অনেক বেশি তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে আসছে।

বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ হলে ১৮.৭% চাকুরি বৃদ্ধি পাবে। উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণায় দেখা যায় বর্তমান ২০১০-২০১১ বাজেটের বিড়ির উপর ২৬% কর বৃদ্ধি করলে ৮৪৭ জন কাজ হারাবে । তামাক হতে আদায়কৃত করে মাধ্যমে এ সকল লোকের কর্মসংস্থানও সম্ভব।

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিবছরের বিড়ির পিছনে যে পরিমান টাকা (২৯১২ কোটি টাকা) খরচ হয় তা দিয়ে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে। এ গবেষণা অনুযায়ী বিড়ির বার্ষিক খরচ দিয়ে ৪৮৫ কোটি ডিম অথবা ২৯ কোটি ১ কেজি ওজনের মুরগী, অথবা ২৯ ল গরু অথবা ১৪ ল টন চাল অথবা ২৩ ল রিকশা কিনা সম্ভব । এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তামাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যহানিকর পেশায় রাখব, নাকি তাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বান্ধব কার্যক্রমের সৃষ্টি করবে।

তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মাধ্যমে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব সরকার প্রয়োজনে দরিদ্র লোকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় করতে পারে। প্রায়শই কোম্পানিগুলো অনেক টাকা রাজস্ব দেয়া বলে নিজেদের জাহির করতে চায়। আমাদের মনে রাখা দরকার, কোম্পানিগুলো মূলত সংগৃহীত ভ্যাট রাজস্ব খাতে জমা দেয়, ভ্যাট পুরোটা জনগনের টাকা। মাত্র ১৫% ভ্যাটের টাকা রাজস্ব খাতে দিয়ে, সরকারের উপর রোগ ও অসুস্থ্যতার বোঝা চাপিয়ে কি পরিমান অর্থ লাভ হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। আমরা আশা করি জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্মত কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে বাজেটে সরকার সকল ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির পদপে গ্রহণ করবে।

৫.খাদ্যের জমিতে, তামাক চাষ- আমাদের শংকা:
বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে কৃষি জমির পরিমান এমনিতেই কম। দেশের মানুষের জন্য খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করার একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ২০০৮-০৯ সালে বাংলাদেশে ৩২৯৭০একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল। ২০০৯-২০১০ সালে তামাক কোম্পানিগুলোর প্রলুব্ধকর প্রচারণার কারণে তামাক ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এ বছর প্রায় ১,০১,২৭০ একর এলাকায় তামাক চাষ হয় । বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় তামাক চাষ ও তামাক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোন প্রকার আর্থিক সাহায্য না করার জন্য দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক-কে নির্দেশনা জারি করে। সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী তামাক চাষের জন্য সকল ধরনের ভতুর্কী বন্ধের ঘোষণা করেছেন। তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক এর এই নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

অধিক জনসংখ্যার সীমিত ভুখন্ডের এ দেশ। খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। পাশাপাশি তামাক চাষ দরিদ্রতা ও অপুষ্টি বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তামাক পাতা শুকানোর জন্য প্রতিবছর দেশের বনাঞ্চল ধবংস হয়ে যাচ্ছে, বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। তামাক চাষের সময়ে স্কুলে বাচ্চাদের উপস্থিতির হার কমে যায় । তামাক প্রক্রিয়াজত করণের সাথে বেশিরভাগ েেত্র নারী ও শিশুরা জড়িত। তামাক চাষ অনেক শ্রমের প্রয়োজন ও কঠিন কাজ। তামাক ফলে নারী ও শিশুরা বিভিন্ন শারিরীক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে । তামাক চাষের জন্য পরিবারের প্রতিটি লোকজনকে শ্রম দিতে হয়। কিন্তু হিসেবে এ শ্রমকে আনা হয় না। তামাক চাষে যে শ্রম দিতে হয় তা যোগ করলে তামাক চাষ কোনভাবেই লাভজনক হয় না ।

তামাক চাষের সঙ্গে সম্পৃক্তদের হাঁপানিসহ শ্বাস ও চর্মজনিত রোগের বিস্তার ল্য করা যায়। এছাড়া মারাত্মক বার্জাজ ডিজিজ এর মত ভয়াবহ রোগও ল করা যাচ্ছে। তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায় এবং ১০ বছর পর সে জমি সম্পূর্ণভাবে চাষ অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর কার্যক্রম দরকার। এ অবস্থার প্রেেিত আমাদের ভাবতে হবে মানুষের জন্য খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো, না স্বাস্থ্যহানিকর তামাক চাষ করবো?

পরিশিষ্ট:
তামাক নিয়ন্ত্রণের ল্েয শতভাগ ধূমপানমুক্ত স্থান, বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, প্যাকেটের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানীর, সচেতনতার পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি একটি কার্যকর উপায় বলে স্বীকৃত। কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণের এ পদপে গ্রহণ করতে গেলে একটি শ্রেণী কর্মসংস্থান হ্রাস হবে, রাজস্ব কমে যাবে, দরিদ্র মানুষ তিগ্রস্ত হবে বলে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে থাকে। কিছু রাজস্ব পাব বলেই কি আমরা মানুষের রোগ ও মৃত্যুঘাতী পন্যকে উৎসাহিত করবো কিনা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। মানবিকতা, সংবিধান জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি কোন দিক থেকেই তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকে উৎসাহিত করা সম্ভব নয়। তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং সংশোধনে যে ধরনের সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির েেত্র অনুকরণীয় ও দৃষ্টান্তমূলক পদপে গ্রহণ করা প্রয়োজন।

জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রায় তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধিতে সকল জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন চাই


জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রায় তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধিতে
সকল জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন চাই

তামাক ব্যবহারের প্রত্য ফল হিসেবে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৭,০০০ জন মৃত্যুবরণ করছে এবং প্রতি বছর ১২,০০,০০০ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত প্রধান ৮টি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রোগীর চিকিৎসা, অকালমুত্য, পঙ্গুত্বের কারণে বছরে দেশের অর্থনীতিতে ১১০০০ কোটি টাকার তি হচ্ছে।

তথাপিও বিগত কয়েক বছরের অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেলেও তামাকজাত দ্রব্যের দাম সে অনুসারে বৃদ্ধি পায়নি বরং কমেছে। সস্তায় তামাকজাত দ্রব্য প্রাপ্তির কারণে মানুষের মধ্যে তামাক ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, গড়ে ১০% মূল্য বৃদ্ধিতে উচ্চ আয় ও নিম্ন আয়ের দেশসমূহে ধূমপায়ী এবং ধূমপানজনিত মৃত্যু উল্লেখ্যযোগ্য হারে হ্রাস পায়।

বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ৪৩.৩% (৪১.৩ মিলিয়ন) প্রাপ্ত বয়স্ক লোক তামাক ব্যবহার করে। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে রায় এবং নিরুৎসাহিত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মতো কার্যকর পদপে গ্রহণ করা জরুরি।

অধিক জনসংখ্যার সীমিত ভুখন্ডের এ দেশ। খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। অপরদিকে তামাক কোম্পানিগুলোর প্ররোচনার কারনে তামাক চাষ অগ্রাসীভাবে বিভিন্ন খাদ্য ভান্ডারের জমি দখল করে নিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭৪০০০ হেক্টর জমিতে তামাক হচ্ছে। বিগত ২ বছরে তামাকচাষ প্রায় ৬৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভান্ডার বলে পরিচিত চলনবিল এখন দখল করে নিচ্ছে তামাক চাষ। পাবর্ত্য এলাকায় এ বিষের ছোয়া রন্ধে রন্ধে।

শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বেই তামাক কোম্পানিগুলো শ্রমিকের সংখ্যা ও কর্মসংস্থান এর বিষয়গুলো তুলে কর বৃদ্ধির বিরোধী করে থাকে। বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ হলে ১৮.৭% চাকুরি বৃদ্ধি পাবে। গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিবছরের বিড়ির পিছনে যে পরিমান টাকা (২৯১২ কোটি টাকা) খরচ হয় তা দিয়ে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হতে পারে। এ গবেষণা অনুযায়ী বিড়ির বার্ষিক খরচ দিয়ে ৪৮৫ কোটি ডিম অথবা ২৯ কোটি ১ কেজি ওজনের মুরগী, অথবা ২৯ ল গরু অথবা ১৪ ল টন চাল অথবা ২৩ ল রিকশা কিনা সম্ভব।


গবেষণায় দেখা যায় সিগারেটের উপর ৭৯% নির্ধারণ করা হলে এবং বিড়ির উপর ২৬% কর বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার ২০১০-২০১১ অর্থ বছরের সিগারেটে হতে ৯০৩ কোটি টাকা আয় করতে পারাত, যা উক্ত সময়ের রাজস্বের অতিরিক্ত ২০ শতাংশ আয় করতে পারে।

তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির মাধ্যমে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব সরকার প্রয়োজনে দরিদ্র লোকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় করতে পারে। প্রায়শই কোম্পানিগুলো অনেক টাকা রাজস্ব দেয়া বলে নিজেদের জাহির করতে চায়। আমাদের মনে রাখা দরকার, কোম্পানিগুলো মূলত সংগৃহীত ভ্যাট রাজস্ব খাতে জমা দেয়, ভ্যাট পুরোটা জনগনের টাকা। মাত্র ১৫% ভ্যাটের টাকা রাজস্ব খাতে দিয়ে, সরকারের উপর রোগ ও অসুস্থ্যতার বোঝা চাপিয়ে কি পরিমান অর্থ লাভ হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়।

উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির পদপে গ্রহণ জরুরি। মানুষের জীবন অপো কোন কিছুই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১১ এবং অনুচ্ছেদ ১৮ (১) সমূহের এ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হানিকর মদ ও ভেজষের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের করনের কথা বলা হয়েছে। আন্তজার্তিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-র আর্টিকেল-৬ নং ধারায় তামাক ব্যবহার হ্রাসে কর বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। নীতিনির্ধারনের েেত্র জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতির উপর তামাকের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিবেচনা তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর আরোপ করার অর্থ সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন।

প্রতিবছর তামাক কোম্পানিগুলো ভ্রান্ত প্রচারণা মাধ্যমে সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের বিভ্রান্ত করে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির বিরোধী করে। নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের উপর কর বৃদ্ধি হলে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি হবে না কেন? আমরা সকল জনপ্রতিনিধিদের জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতি রায় সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি বিষয়ে বলিষ্ঠ পদপে গ্রহনের আহবান জানাই।

তামাক চাষ খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ জন্য হুমকি

তামাক চাষ খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ জন্য হুমকি

বিগত কয়েক বাংলাদেশে তামাক চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে জোরদার আন্দোলনে করে আসলেও সরকারীভাবে এ বিষয়ে উদ্যোগ এখনো সমন্বিত ও আশানুরূপ নয়। সাম্প্রতি বান্দরবন জেলাজজ কোর্টে একটি রায়ে অত্র এলাকায় তামাক চাষ ১০০০ একরের মাঝে রাখার নির্দেশনা প্রদান করেছে, যা একটি মাইল ফলক। সীমিত ভুখন্ডের জনবহুল এদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে, না কি তামাককের মতো তিকর দ্রব্যের বৃদ্ধি করতে দেয়া হবে এক বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের দ্রুত পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে দূর্বল নীতি বা অবস্থান দেশের কৃষি জমি ধ্বংশ, খাদ্য নিরাপত্তা সংকট, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সমস্যার মতো বিষয়গুলো প্রকট করে তুলবে।

আমাদের আবাদী জমির পরিমান খুবই সীমিত। তথাপিও সড়কনির্মাণ, শিল্পস্থাপন, ঘরবাড়ী নির্মাণ, নদীভাঙ্গনসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে কৃষিজমি ১ শতাংশ হারে হ্রাস পাচ্ছে। এদেশে ১৯৭১ সালে আবাদী জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ হেক্টর। ১৯৮৬ সালে কমে দাড়ায় ৮১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর এবং ২০০৩ সালে কমে দাড়ায় ৭০ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টরে। এমত অবস্থায়ত্র্র তামাক কোম্পানিগুলোর প্ররোচনার কারনে তামাক চাষ অগ্রাসীভাবে বিভিন্ন খাদ্য ভান্ডারের জমি দখল করে নিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭৪০০০ হেক্টর জমিতে তামাক হচ্ছে। বিগত ২ বছরে তামাকচাষ প্রায় ৬৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভান্ডার বলে পরিচিত চলনবিল এখন দখল করে নিচ্ছে তামাক চাষ। পাবর্ত্য এলাকায় এ বিষের ছোয়া রন্ধে রন্ধে।

তামাকের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫৭০০০ হাজার লোক মারা যাচ্ছে এবং ৩৮২০০০ লোক পঙ্গুত্ব বরণ করছে। এছাড়াও তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা খরচ বরাদ্ধ রাষ্ট্রের আর্থিক তির পরিমান ১১,০০০ কোটি টাকা। এছাড়া বাংলাদেশে ২৫ভাগ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে, সারাদেশের অতিদরিদ্র মানুষ প্রধান খাদ্য চাল ক্রয়ে তাদের আয়ের ৭৬ভাগ ব্যয় করে এবং শতাকরা ৫৮ভাগ পরিবার পর্যাপ্ত খাদ্য ক্রয় করতে পারে না। অপুষ্ঠিতে শিশু মৃত্যুর পরিমাণ প্রতিদিন ৯০০ জন। আর এ সকল অবস্থাগুলো বিবেচনা করে সরকারের তামাক চাষ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। দুঃখের বিষয় হচ্ছে এ বাস্তবতার পরও খাদ্য নিরাপত্তা কথা বিবেচনা না করে কিছু ব্যক্তিবর্গ তামাক কোম্পানির সাথে সুরমিলিয়ে তামাক চাষের স্বপে বক্তব্য তুলে ধরে থাকেন।

তামাক চাষ শুধুমাত্র খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, এই বিষবৃ চাষ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিপনন সকল েেত্র তিগ্রস্ত করছে জনসাধারণকে। তামাক এমন একটি ফসল যা চাষের কারণে জমির উর্ব্বরতা হ্রাস পায় এবং এই জমিতে একসময় কোন ফসল ফলানো যায় না। তামাকের কারণে ৩টি মৌসুমের ফসলের তি হয়। কারণ জমি তৈরি, বীজ বপন, পরিচর্যা, পাতা তোলা, গোড়া তোলা ইত্যাদি কারণে তামাক চাষের সময়কাল আগষ্ট থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৯ মাস। উবিনীগ এর এক গবেষণায় দেখা যায়, বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় ৫৩৯৯ একর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। এসব জমিতে ২১ ধরনের খাদ্যশস্য চাষ করা যেত এবং তার মূল্য দাড়াত ১১ কোটি টাকা। চাষীদের বক্তব্য অনুসারে তামাক চাষ করলে অন্য কিছু করার সুযোগ পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু প্রতিবছর নানা অর্থ ও নানা প্রলোভনের কারণে চাষীরা তামাক চাষে নিয়োজিত হয়ে পড়ে।

গ্রামীণ কৃষক সমাজ ও দরিদ্রতা অনেকেেত্রই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই দরিদ্রতাকে পুঁজি করে তামাক চাষ ভয়াবহভাবে বিস্তার লাভ করেছে। তামাকের মূল্য অন্য যেকোন ফসলের চাইতে অনেক বেশী। তামাক কোম্পানি এ ধরনের বাহারী বিজ্ঞাপনের আড়ালে হারিয়ে যায় তামাক চাষের সমস্যাগুলো। প্রতিটি চাষীই প্রতিবছর তামাক কোম্পানি হতে ঋণ নিয়ে তামাক চাষ করে, অথচ কোম্পানিগুলো প্রচারণা চালায় তামাক চাষ লাভজনক। তামাক যদি লাভজনক হয় তবে চাষী কেন প্রতিবছর ঋণ নেবেন? এই প্রশ্নটি কেহই করে না। অধিকমূল্য বিষয়টি কৃষকদের তামাক চাষে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। অনেক কৃষক তাদের ভাগ্য ফেরাতে, ধনী হবার আশায় কোন কিছু না ভেবেই তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে। কারণ কৃষকদের বর্তমান অর্থনৈতিক দুরাবস্থার পাশাপাশি, তারা প্রতিনিয়ত স্থানীয় মহাজনদের দ্বারা অর্থনৈতিকভাবে নিগৃহিত হয়।

তামাক চাষ বৃদ্ধির েেত্র বিদ্যমান সমাজ কাঠামো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। গ্রাম এবং শহর দুই স্থানেই, ধনী ব্যক্তি দরিদ্র ব্যক্তির চেয়ে অধিক সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা পায়। গ্রামীণ সমাজে এই বিষয়টির বহুমাত্রিক প্রভাব রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে এক গোষ্ঠীর মানুষ অন্য গোষ্ঠীর মানুষের সাথে অধিক পরিচিত। তাই একজন ধনী কৃষকের সামাজিক অবস্থান একজন দরিদ্র কৃষককে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। এই সমস্ত বিষয়গুলি দরিদ্র কৃষককে এমনভাবে প্রভাবিত করে যে, অধিক লাভ আসে ঐরকম ফসল চাষ করে সে দ্রুত তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চায়। কিন্তু এ লাভের অংক যোগাতে গিয়ে সে তামাক চাষের চক্রে পড়ে যায়।

তামাক চাষে যে কৃষকের সামর্থ থাকে তারা শ্রমিক ভাড়া করে। কিন্তু অধিকাংশ চাষীর এ সামর্থ থাকে না। ফলে তামাক পাতা উঠানোর মৌসুমে বাড়ীর নারী, পুরুষ শিশু সকলে একসাথে মাঠে কাজ করতে হয়। এসময় শিশুরা স্কুল কামাই করে তাদের অবিভাবকদের সাথে মাঠে কাজ করে। এছাড়াও তামাক পাতা পোড়ানোর সময় আগুনের পাশে দিনরাত সর্তকভাবে বসে থাকতে হয়। ফলে তামাক চাষীদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এভাবে তাদের শিাজীবনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ায় তারা শিার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এক গবেষনায় দেখা যায়, তামাক চাষ থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ পযর্ন্ত সময়কালে বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলে বিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপস্থিতির হার কমে যায়। শিা জীবনে সমস্যার পাশাপাশি শিশুরা স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও তিগ্রস্থ হয়ে থাকে । বিনামূল্যে শ্রম প্রাপ্তির ল্েয তামাক চাষী তার পরিবারের সদস্যদেরকে তামাক চাষ থেকে প্রক্রিয়াজাত করণ পর্যন্ত সকল কাজে সম্পৃক্ত করে। ফলে পারিবারিক জীবনযাত্রায় বিঘœ্ ঘটে। তামাক পোড়ানোর সময় পরিবারের সদস্যরা নির্ঘুম রাত কাটায় এতে করে পারিবারিক জীবনে প্রচন্ড অশান্তির সৃষ্টি হয়।

জমি কৃষকের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ। প্রচুর রাসায়নিক ও কীটনাশকের ব্যবহার তামাক চাষের একটি বড় তিকর দিক। নানাবিধ কারণে বিগত ১০ বছরে কীটনাশক ব্যবহারের পরিমান ৩২৮ভাগ বেড়েছে। এ রাসায়নিক ও কীটনাশক মাটির উর্ব্বরতা হ্রাস, পানি ধারণ মতা নষ্ট এবং য় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া রাসায়নিকের প্রভাবে জনস্বাস্থ্য, বনভূমি, পানি, জলজ প্রাণী, পরিবেশ মারাত্মকভাবে তিগ্রস্ত হচ্ছে। পার্বত্য এলাকার মানুষ প্রাকৃতিক পানিনির্ভর। অথচ সাঙ্গু, মাতামুহুরীসহ পার্বত্য জেলা বান্দরবান এর নদী ও জলাশয়ের ঢালু উর্বর জমিতে তিকর তামাক চাষ করায় এ জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক ও তামাকের রাসায়নিক গিয়ে নদী-জলাশয়ের পানিতে মেশায় সে পানি দূষিত হয়ে পড়ছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকগুলো পানি সাথে মিশে গিয়ে সুপেয় পানির উৎস নষ্ট করছে। যা পানি বাহিত রোগের সম্ভবনা বৃদ্ধি করছে। বিশেষ করে মাছে ডিম পাড়ার সময়ে তামাকের কীটনাশক পানির সঙ্গে মেশার ফলে মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং ক্রমশ মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তামাক পাতার কারণে এমন সব পোকার আগমন ঘটে যা আশেপাশের ফসলী জমির ফসলকে আক্রমণ করে।

তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কাঠ, তুষ বা খড় ব্যবহার করা হয়। পার্বত্য এলাকায় তামাক পাতা শুকানোর জন্য ব্যাপকভাবে বনাঞ্চলের গাছ কাটা হয়, বনভূমিকে ধ্বংশ করছে।একর প্রতি তামাক উৎপাদন হয় ১০০০-১২০০ কেজি। প্রতি কেজি তামাক পোড়াতে ৫ কেজি জ্বালানী কাঠ লাগে। প্রতি একর তামাক পাতার জন্য ৫ টন জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন হয়। একসময় কুষ্টিয়া মেহেরপুর অঞ্চলের অনেক চুল্লিতে কাঠ ব্যবহার করা হতো। কিন্তু গাছ কমে যাওয়ার কারণে এ সকল এলাকায় তুষ বা খড় ব্যবহার করা হয়। তামাক কোম্পানিগুলো তাদের কারণে সৃষ্টি সমস্যা আড়াল করতে বৃরোপন অভিযান এর নামে নিজেদের স্বার্থে দ্রুত বৃদ্ধি পায় এ ধরনের বিদেশী গাছ লাগাচ্ছে বনাঞ্চলে,যা আমাদের জীববৈচিত্রের জন্য হুমকি স্বরূপ।

তামাক পাতা শুকানোর সময় উক্ত এলাকায় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কাঠ, তুষ বা খড় পোড়ানোর ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। তামাক চাষ করার ফলে কৃষক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হবার আশংকা থাকে। গবেষনায় দেখা গেছে, তামাক চাষী ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বার্জার্স এবং গ্রীণ টোব্যাকো সিকনেস (এঞঝ) ব্যাপকভাবে লনীয়। এক গবেষনায় দেখা গেছে যে, টানা কয়েকদিন তামাক পোড়ানোর পর অনেক কৃষক এত বেশী অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তারা শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। তামাক পোড়ানো শেষে কৃষককের বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট, শারীরিক দূর্বলতা দেখা যায় ।

তামাক এর সাথে দরিদ্রতার একটি সম্পর্ক রয়েছে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই দরিদ্ররা বেশী তামাক ব্যবহার করে, ফলে তাদের আয়ের একটি বড় অংশ তামাক ক্রয়ের পিছনে ব্যয় হয়। তামাক ক্রয়ের ল্েয অর্থ ব্যয় করার ফলে দরিদ্র জনগণ অনেক েেত্র মৌলিক প্রয়োজনে অর্থ ব্যয় করতে পারে না। এছাড়া তামাক উৎপাদনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের খুবই দরিদ্র এবং খুবই অল্প টাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে হয়। বাংলাদেশে দরিদ্রতা এবং অপুষ্টি একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশে জনসংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে জমির উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। জনসংখ্যার অনুপাতে জমির পরিমাণ কম থাকায় খাদ্য ঘাটতি পুরণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। যেখানে সব আবাদী জমিতে খাদ্য উৎপাদন করা দরকার সেখানে তামাক কোম্পানিগুলোর প্রলুব্ধকর প্রচারণায় দরিদ্র অনেক কৃষক তামাক চাষে অভ্য¯ত হয়ে পড়ছে। তা দারিদ্রতাকে ত্বরান্বিত করছে, পুষ্টি ঘাটতি ও খাদ্য ঘাটতি বৃদ্ধি করছে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালা জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়ন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন -২০০৫ সংশোধনের মাধ্যমে আইনভাবে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।