সোমবার, ১৪ জুন, ২০১০

তামাকের ক্ষতিকর দিক থেকে নারীদের রক্ষা করতে হবে

তামাক ব্যবহারের ভয়াবহতা এবং নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আলোচনা আমাদের দেশে নারীদের তামাক ব্যবহার ও ক্ষতির বিষয়টি সব সময় অবহেলিত রয়ে যায়। আমাদের দেশের নারীরা তামাকজাত অন্যান্য পণ্য যেমন- জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে। ইদানিং প্রচারণার বিভিন্ন কারণে নারীদের মাঝে সিগারেটের ব্যবহারও বাড়ছে। বর্তমানে পুরুষদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার বেশি হলেও, নারী মাঝে তামাক সেবীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ওঞঈ (ঞযব ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঞড়নধপপড় ঈড়হঃৎড়ষ চড়ষরপু ঊাড়ষঁঃরড়হ চৎড়লবপঃ) ২০১০ এর তথ্য অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে নারী তামাক সেবী বেড়েছে ২৪.৪% থেকে ৩২.০% এবং নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়েছে ১.৩ %.


নারীদের তামাক ব্যবহারের ভয়াবহতা অনুধাবন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারন করেছে ুএবহফবৎ ধহফ ঃড়নধপপড় রিঃয ধহ বসঢ়যধংরং ড়হ সধৎশবঃরহম ঃড় ড়িসবহচ্ যা প্রশংসার দাবী রাখে। নারীদের মাঝে তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নারীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের ভয়াবহতা ব্যপক। তামাক ও ধূমপানের ফলে ফুসফুসে ক্যান্সার, মুখ, জরায়ু ও মুখগহররে নানারকম ক্যন্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তামাক সেবনের ফলে হাঁপানি, যক্ষ্মা, কাশি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবে গর্ভধারন ক্ষমতা দ্রুত লোপ পায়, ঋতুস্রাবে সমস্যা দেখা দেয়। তামাক ও ধূমপানের প্রভাবে মহিলাদের কম ওজনের বা মৃতু্য শিশু বা অকাল প্রসবের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

নারীরা শুধূমাত্র ধূমপান বা তামাক সেবনের মাধ্যমেই নয়, পরোক্ষ ধূমপানের কারনেও মারাত্বমকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ধূমপায়ীরা ধূমপানের সময় সামান্য পরিমাণ ধোঁয়া গ্রহণ করে এবং বেশিরভাগ ধোঁয়া বাইরে ছেড়ে দেয়। ফলে ধূমপায়ীর আশপাশে অবস্থানকারী নারী-শিশুসহ অধুমপায়ীরাও পরোক্ষ ধূমপানের ফলে ধূমপানজনিত ক্ষতির ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। বাসায় বাবা-ভাই-স্বামীর ধূমপান, কর্মক্ষেত্রে সহকমর্ীর ধূমপান, যানবাহনে ও পাবলিক প্লেসে অন্যান্যদের ধূমপানের ফলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়ায় অ্যাজমা, সত্দন ও ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। তবে দেশে তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে সরকার ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করে। এ আইন হওয়ার পর পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়ায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা এসেছে। তবে এখনও বিভিন্ন স্থানে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচেছ নারীরা।

তাছাড়া নারী শ্রমিকদের স্বল্প মজুরিতে পাওয়া যায় বিধায় তামাক চাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও তামাক শুকানোসহ সব কাজে নারীকে সম্পৃক্ত করা হয়। ফলে নারীরা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তারা পরিবারে ঠিকভাবে সময় দিতে পারে না। তামাকের বিরূপ প্রভাব থেকে নারীদের রক্ষায এখনই সচেতনতার পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর বৃদ্ধি, আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমেই তামাক ব্যবহার হ্রাস করা সম্ভব।

তামাক ব্যবহারের ভয়াবহতা শুধূমাত্র বাংলাদেশী নারীরা নয় সারা বিশ্ব ঝুঁকির মধ্যে আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে প্রায় ১ বিলিয়ন নারী ধূমপান করে যা বিশ্বের মোট ধূমপায়ীর ২০%। এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুধূতাই নয় বিশ্বে তরুনীদের মধ্যেও তামাক ব্যবহার ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৫১টি দেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় সে সমসত্দ দেশে প্রায় ৭% কিশোরী ধূমপান করে যেখানে কিশোর ধূমপায়ীর সংখ্যা ১২%। কিছু কিছু দেশে কিশোর কিশোরী ধূমপায়ীর হার প্রায় সমান। তামাকের ভয়াবহতা রোধে নারীদের স্বাস্থ্য রক্ষা ও এর উন্নয়ন বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের সুস্বাস্থ্য ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এই শতাব্দিতে ১ বিলিয়ন লোক তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে মারা যাবে। নারীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের মাত্রা কমিয়ে আনার মাধ্যমে অনেক জীবন রক্ষা করা যেতে পারে। সচেতনতার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে ধূমপান নিষিদ্ধ, শতভাগ ধূমপানমুক্ত স্থান, তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি, সকল তামাকজাত দ্রব্যেকে আইন ও করের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে নারীদের তামাকের ক্ষতিকর দিক হতে রক্ষা করা বহুলাংশে সম্ভব।

কামরুনি্নছা মুন্না,

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন