মঙ্গলবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১০

দেশের নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে রেলওয়ের বিরাষ্ট্রীয়করণ বন্ধ করতে হবে

দেশের নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস'া উন্নয়নে
রেলওয়ের বিরাষ্ট্রীয়করণ বন্ধ করতে হবে

পরিবেশ, অর্থনীতি, জনসেবা, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব, নিরাপত্তা, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস'ান এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকার রেলের মাধ্যমে পরিবহণ সুবিধা প্রদান করে দেশের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের পরিবহণ ব্যবস'া ও সার্বিক উন্নয়নে রেল যোগাযোগ আরো বিস-ৃত করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে পূর্ব-পশ্চিমাঞ্চাল রেল যোগাযোগ ব্যবস'া জোরদার সহ রাষ্ট্রীয় ব্যবস'াপনায় রেল উন্ন্‌য়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা জরুরী। সেক্ষেত্রে রেল পরিচালনার জন্য জাতীয় বাজেটে রেলের বরাদ্দ আরো বেশি দেওয়া প্রয়োজন।

ঋণ প্রদানকারী সংস'াগুলো পরিবহণ ব্যবস'ার উন্নয়নের নামে সড়কপথেই বেশিরভাগ ঋণ প্রদান করায় রেলওয়ের উন্নয়ন বরাবরই উপেক্ষিত থেকেছে। কিন' গবেষক ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতো সড়ক পথে অপরিকল্পিত বিনিয়োগ বর্তমানে পরিবেশ দূষণ, দুঘর্টনা, অর্থনৈতিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করেছে। বিগত দিনে ঋণ প্রদানকারী সংস'া কর্র্তৃক রেলওয়ের উন্নয়নে ঋণ প্রদান করেছে। কিন' এ সকল ঋণ সহায়তায় রেল উন্নয়নে স্টেশন রি মডেলিংয়ের নামে শত শত কোটি টাকা এরকম অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করা হয়েছে। স্টেশন আধুনিক করা অপেক্ষা রেল লাইন উন্নয়ন ও রেলে বগি, ইঞ্জিন বাড়ানো জরুরি ছিল। কিন' সে দিকে নজর দেওয়া হয়নি। একদিকে বলা হচ্ছে ঋণ ছাড়া চলা সম্ভব নয়, অপর দিকে এমন খাতে ঋণ দেওয়া বা নেওয়া হচ্ছে যা অপ্রয়োজনীয়। কথিত ঋণ সহযোগীদের পরামর্শ ও দিক নির্দেশায় এ ধরনের উন্নয়ন গৃহীত এবং হয়েছে এবং হচ্ছে।

দুঃখজনক হলেও সত্য যেসব খাতে বিনিয়োগ করলে রেলওয়ে সেবাকে জনগণের কাছে সহজলভ্য ও রেলের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সরাসরি সহায়ক হতো সেসব খাতে যথেষ্ট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে রেলের অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয়িত ঋণের টাকা সুদে আসলে পরিশোধ করতে হচ্ছে। বস'তপক্ষে ঋণপ্রদানকারী সংস'ার কারণে রেলের সত্যিকার উন্নয়ন বাধাগ্রসৱ হচ্ছে। ঋণ গ্রহনের পূর্বে অবশ্যই বিবেচনা করা প্রয়োজন এ অর্থ কিভাবে পরিশোধ করা হবে? এ ঋণ হতে কি পরিমান লাভ হবে? ঋণপ্রদানকারী সংস'াগুলোর সম্পর্কে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ এবং অনুযোগ সর্তকতার সাথে বিবেচনা করা দরকার। কারণ ইতিপূর্বে যে সকল প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে এডিবি এবং বিশ্বব্যাংক পরামর্শ দিয়েছে সেগুলো আশানুরূপ ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে। উদ্ভুত পরিসি'তিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের বৃহত্তর স্বার্থে ঋণ প্রদানকারী সংস'ার পরামর্শ ও শর্ত বর্জন করা প্রয়োজন। রেলের উন্নয়নে দেশের নীতিমালার আলোকে ঋণ নিতে হবে এবং এর প্রেক্ষিতে রেলের মাধ্যমে পরিবহণ ব্যবস'ার যথাযথ উন্নয়ন সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে প্রথমেই রেলের কোন কোন খাতে সংস্কার করতে হবে তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে। কোন ঋণ প্রদানকারীর সংস'ার পরামর্শে বা শর্ত পূরণের জন্য ঋণ গ্রহণ করা হলে কাঙ্খিত সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়।

বিগত দিনে এডিবি, বিশ্ব ব্যাংক, আই এম এফ ঋণপ্রদানকারী স্‌ংস'ার পরমার্শে রেলওয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন বিনিয়োগ করা হয়েছে। এখন এ সব সংস'ার পরার্মশে ও চাপে রেলকে প্রাইভেটাইজ করার পায়তারা করছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে শুধু একটি রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠানই নয়। এ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য, সাংবিধানিক অধিকার, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, পরিবেশ, জ্বালানি, দারিদ্র বিমোচন, জনগণের অধিকারের বিষয়সমূহ। রেলের মতো একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ বেসরকারীকরণ করা হলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এবং অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসায় জনগণ একটি চক্রের কাছে জিম্মি হবে। রেলওয়েকে বেসরকারীকরণের ফলে বিশাল জনগোষ্ঠী এবং সম্পদের ক্ষতি করা হয়।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠার বেসরকারীকরণ সমাধান নয় বরং দেশীয় বিশেষ্ণগদের রেল উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারকে সঠিক ও যুগোপযোগী পরামর্শ দিয়ে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানকে সতিকার জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে রূপানৱরের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। ঋণপ্রদানকারী সংস'াগুলোর চাপে রেলের বিরাষ্ট্রীয়করণ বন্ধে সরকারকে সঠিক পরামর্শ ও সমর্থন দিয়ে সহযোগিতা করা আমাদের সকলের কর্তব্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন