মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০১১

পানির উৎস সংরন ও ব্যবহৃত পানি পুনঃব্যবহারে করণীয়


পানির উৎস সংরন ও ব্যবহৃত পানি পুনঃব্যবহারে করণীয়

বিশুদ্ধ পানি
মানুষের জীবন পানির সাথে একসূত্রে গাঁথা। এই ভূ-পৃষ্ঠের যেমন ৭০ ভাগই পানিতে ঢাকা, তেমন আমাদের শরীরেরও প্রায় ৭০ ভাগ পানি। শুধু আমাদের জীবনই নয়, পৃথিবীর সব জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গ, গাছপালা সবকিছুর জীবনই এই পানির ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া আমাদের দৈনন্দিন যাবতীয় কাজ, চাষাবাদ, শিল্প-কারখানায় উৎপাদন সবকিছুর জন্যই আমরা পানি উপর নির্ভরশীল। এক কথায় পানি হলো এমনি এক প্রাকৃতিক উপাদান, জীবনের জন্য যার কোন বিকল্প নেই।

বিশ্বের প্রায় ৮০ টি দেশে নিরাপদ পানির সমস্যা রয়েছে এবং পৃথিবীর প্রায় ৪০ ভাগ মানুষ পানির জন্য সংগ্রাম করছে। শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এ শতকে বিশ্বে মিঠা পানির ঘাটতি ২০ভাগ বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছে। বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন একটি বিশাল সমস্যা। গবেষকদের মতে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে প্রতিবছর দেশের ৭ হাজার কোটি টাকা বাঁচবে।

বিশুদ্ধ পানি অভাবে সৃষ্ট সমস্যা ঃ
ভূ-গর্ভের চারভাগের তিনভাগই পানিতে পরিপূর্ণ কিন্তু মানুষের ব্যবহারের উপযোগী পানি মাত্র এক ভাগ। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুসারে সুপেয় পানির অভাবে ও দূষিত পানি পানের কারণে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে সোয়া কোটি মানুষ। সাধারণ খাওয়া, গোসল, রান্নাবান্না ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন একজন মানুষের গড়ে ৫০ লিটার পানি প্রয়োজন। অথচ বর্তমানে পৃথিবীতে ১১০ কোটি মানুষ প্রতিদিন পান করার জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পায় না।

পানি দূষণের কারণে বাংলাদেশে ডায়ারিয়া ও অন্যান্য পানি বাহিত রোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিলীন হচ্ছে জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদ। এছাড়া অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে গবেষকগণ মতামত প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের ৮ কোটি মানুষ আর্সেনিকের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এভাবে চলতে থাকলে সমস্যা মহামারির আকার ধারণ করতে পারে। গত এক যুগে দেশের ৬১ জেলার ২৭০ উপজেলায় আর্সেনিক দুষণযুক্ত পানির কারণে বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হরঢছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশে আর্সেনিকজনিত ক্যান্সারের কারণে ২০০,০০০-২৭০,০০০ মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশংকা করছে। গবেষণায় দেখা যায় দেশের ৩০ ভাগ নলকূপের পানি আর্সেনিক দূষণে দূষিত এবং প্রতিদিন দুষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি কাজ ও চাষাবাদের জন্য পানি একটি বড় বিষয়। বর্তমানে চাষাবাদের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হয়। শহর অঞ্চলেও পানির সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। ফলে দেশের অধিকাংশ বিভাগীয় ও জেলা শহরেরই পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। হ্রাস পাচ্ছে সুপেয় পানি পরিমান।

বাংলাদেশে পানির উৎসঃ
পানি সম্পদের দিক দিয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত সম্পদশালী। এর ভূ-পৃষ্ঠে যেমন আছে পদ্মা- মেঘনা- যমুনার মত প্রমত্তা নদী, তেমনি ভূ-গর্ভেও রয়েছে সুপেয় পানি। এদেশের বুকের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট-বড় প্রায় সাতশ নদ-নদী এবং অসংখ্য খাল-বিল, দীঘি-পুকুর ও হাওর-বাঁওড়। বর্ষাকালে সারাদেশ পানিতে থৈ থৈ করে। বাংলাদেশে বাৎসরিক গড় বৃষ্টির পরিমান প্রায় ২০৫০ মিলিমিটার। আর বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে ৮০% ভাগ বৃষ্টি হয়। কিন্তু আমাদের অবহেলা ও অপরিকল্পনার কারণে পানির উৎস আজ হুমকির সম্মুখীন।

বিশ্বব্যাপী পানির অবস্থা
জাতিসংঘ তথ্য অনুসারে আগামী ২০ বছরের কম সময়ের মধ্যে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা ৫০% বৃদ্ধি পাবে। ২০২৫ সাল নাগাদ ২/৩ অংশের মানুষের (৪৮ টি দেশের ২.৮ বিলিয়ন মানুষ) বিশুদ্ধ পানি সমস্যার সম্মুখীন হবে। পৃথিবীর প্রায় ৯৭% পানি লবনাক্ত। ব্রাজিল, কানাডা, চায়না, কলম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া বিশ্বের বিশুদ্ধ পানির অর্ধেক ভান্ডার ৬টি দেশের অধীনে। যদিও বিশ্বের ৬০% মানুষ বসবাস করে এশিয়ায় এবং মধ্যপ্রাচ্যে। বিশ্বের ৭০% পানি ব্যবহার হয় কৃষি কাজে, ২২% ব্যবহার হয় শিল্প কারখানায় এবং ৮% ব্যবহার হয় মিউিনিসিপালটি ও জনগনের ব্যবহারের জন্য।
বাংলাদেশে সেচ ও মহানগরীগুলোতে পানি ব্যবহার
বর্তমানে দেশের মানুষপানি আহরণের েেত্র ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। পানির চাহিদার একটি বড় অংশ যায় কৃষি কাজে। এ সময় ভুপৃষ্টের পানি ব্যবহার করা হলেও এখন ব্যপকভাবে ভূগর্ভের পানি ব্যবহৃত হয় এবং দিন দিন এই ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নে ২০০৩ সাল হতে ২০১০ পর্যন্ত জমিতে সেচ সংক্রান্ত একটি তথ্য উপস্থাপন করা হলেও।


সেচ ছাড়াও পৌরসভা, নগর এবং মহানগরের পানি সরবরাহ ও আহরনের েেত্র অধিকাংশ সংগ্রহ করা হয় ভূগর্ভস্থ হতে। নিচে দেশের ছয়টি মহানগরীর পানি সংগ্রহের তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হলেও।

ঢাকা : ঢাকা ওয়াসা ৫৭৫টি গভীর নলকূপ ও চারটি পানি শোধনাগারের মাধ্যমে দিনে ২০৬ থেকে ২১০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে। এছাড়া বেশকিছু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সেক্টরে ছোট-বড় অনেক পাম্প বসানো আছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১১ হাজার পাম্প দিয়ে প্রতিদিন ভূগর্ভস্থ পানি উঠানো হচ্ছে প্রায় ১শ ৮০ থেকে ১শ ৯০ কোটি লিটার।

২০০৯ সালের পর ঢাকা শহরের পানির চাহিদা পূরণের ল্েয আরো ৬৪টি গভীর নলকূপ স্থাপন এবং ৭৫টি নলকূপ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এতে করে পানির উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ কোটি লিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির নির্ভরতা কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পানি সংগ্রহের ল্েয সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ বর্তমানে চলছে এবং আগামী বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। প্রকল্পটি শেষ হলে দিনে আরো সাড়ে ২২ কোটি লিটার পানি শোধনাগার থেকে রাজধানীতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মহানগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা ৫০ কোটি লিটার। এর বিপরীতে ওয়াসা সরবরাহ করছে ২১ কোটি লিটার। ঘাটতির পরিমাণ ২৯ কোটি লিটার। সরবরাহকৃত পানির চার ভাগের একভাগই অপচয় হয়ে যাচ্ছে। ফলে কাগজে-কলমে ২১ কোটি লিটার পানি সরবরাহের কথা বলা হলেও কার্যত নগরবাসী পানি পাচ্ছেন ১৫-১৬ কোটি লিটার। যা দিয়ে চাহিদার খুব সামান্য একটি অংশই পূরণ হচ্ছে। পুরো পানিই উত্তোলন করা হচ্ছে ভুগর্ভস্থ হতে।

চট্টগ্রাম ওয়াসায় গত ২৫ বছরের মধ্যে একটিও পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি। রাঙ্গুনিয়া থানার পোমরা এলাকায় ৩১ দশমিক ৫৫ একর জায়গায় কর্ণফুলী পানি শোধনাগার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কর্ণফুলী নদী থেকে পানি নিয়ে পরিশোধন করে মহানগরীতে সরবরাহ দেয়া হবে। প্রকল্পটি থেকে দৈনিক সাড়ে ১৩ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা যাবে।

খুলনা: খুলনা মহানগরীতে পানির চাহিদা প্রায় ৩ কোটি লিটার। কিন্তু সেখানে ওয়াসা প্রতিদিন সরবরাহ করছে মাত্র ৯০ লাখ লিটার পানি। যখন পানি সরবরাহ ব্যবস্থা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অধীন ছিল, তখনো পানি সরবরাহ হতো ৯০ লাখ লিটার। খুলনা ওয়াসার নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে বর্তমানে ৭২টি পাম্প সচল ও ৭টি পাম্প বন্ধ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই খুলনা মহানগরীতে পানির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। ওয়াসার একাধিক গভীর ও অগভীর নলকূল অকেজো হয়ে পানির পাম্প বন্ধ রয়েছে। একমাত্র সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটিও আট বছর ধরে অকেজো। এ অবস্থায় ১৫ লাখ নগরবাসীর দৈনিক পানির চাহিদার অর্ধেকও পূরণ করতে পারছে না খুলনা ওয়াসা।
রাজশাহী: প্রায় ৬ লাখ অধ্যুষিত রাজশাহী নগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা ১০ কোটি ৩০ লাখ লিটার। এতে বিভিন্ন পাম্প থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে ৭ কোটি ৫১ লাখ ৯০ হাজার লিটার পানি। বৃষ্টিপাতের অভাবে রাজশাহীতে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নীচে নেমে যাচ্ছে। তাই ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে পদ্মার পানি শোধন করে মহানগরীতে সরবরাহের ল্েয শ্যামপুরে 'শহীদ কামারুজ্জামান পানি শোধনাগার' উদ্বোধন করা হয়েছে। শিগগির নগরীর পশ্চিমপ্রান্তে আরেকটি পানি শোধনাগার নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সিলেট : সিলেট নগরীতে বর্তমানে পানির চাহিদা প্রায় ৬০ হাজার ঘনলিটার। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয় সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২ হাজার ঘনলিটার পানি। প্রতিদিন পানির ঘাটতি প্রায় ৪০ হাজার ঘনলিটার। সিলেট নগরীতে জনসংখ্যা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে পানির চাহিদা। নগরীতে অনেক বাসাবাড়িতে নিজস্ব গভীর-অগভীর নলকূপের মাধ্যমে পানির সংস্থান রয়েছে। অন্যরা পানির জন্য সিটি কর্পোরেশনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের পানি সরবরাহ চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।

বরিশাল: ৪৫ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে ১ কোটি গ্যালন পানির প্রয়োজন রয়েছে। ২৪টি পাম্পের মাধ্যমে ৬৫ লাখ গ্যালন পানি সরবরাহের মতা থাকলেও বর্তমানে এর ১৯টি বিকল রয়েছে। ফলে বর্তমানে বাকী পাম্পগুলোর সাহায্যে ৪০ লাখ গ্যালন পানি সরবরাহ করছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। ১২ হাজার গ্রাহক এই সরবরাহের সাহায্যে তাদের চাহিদা পূরণ করছে। আপতদৃষ্টিতে ১২ হাজার গ্রাহক উপকার ভোগী হলেও মূলতঃ এর সংখ্যা আরো কম।

ভূ-গর্ভস্থ পানি হ্রাস
কৃষিপ্রধান এবং নদীমাতৃক এ দেশে বর্তমানে পানি একটি প্রধান সমস্যা। সারা দেশে ব্যবহৃত মোট পানির ৯৫% আসে ভূ-গর্ভস্থ পানি থেকে। অথচ ভ ূ-গর্ভস্থ পানির সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুকনো মৌসুমে আমাদের দেশে সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না। অত্যাধিক ভুগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, বৃষ্টিহীনতা এবং খরার মাত্রা বৃদ্ধিতে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্থর ভয়াবহ পরিমাণে নেমে গেছে, গভীর নলকূপের দ্বারা পানি উঠানোও সম্ভব হচ্ছে না।

বিগত ১২ বছরে ঢাকা নগরীর পানির স্তর আরও ৩৫ মিটার নিচে নেমে গেছে। বর্তমানে পানির স্তর অবস্থান করছে ৬১ দশমিক ১৮ মিটার গভীরে। অথচ সত্তর দশকে মাত্র ১১ দশমিক ৩ মিটার নিচে পানি পাওয়া যেতো। ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ এই সময়ে মধ্যে বছরে গড়ে তিন মিটার করে পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিএডিসির গবেষকদের মতে, এই ঘটনার কারণ হচ্ছে অব্যাহত গতিতে দ্রুত ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ভূগর্ভস্থ পানির রিচার্জ হওয়ার প্রক্রিয়া ব্যহত হওয়া। ঢাকা শহরে ৪শ মতো গভীর নলকুপ দিয়ে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। অপর দিকে জলাভূমি ও খালগুলো ভরাট করায় এবং নদী তীরবর্তী এলাকা দখল হওয়ায় বর্ষা মৌসূমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর যেভাবে রিচার্জ হওয়ার কথা সেভাবে রিচার্জ হচ্ছে না। শহরের অধিকাংশ স্থানে ইট, বালু, সিমেন্টের আস্তর ভুগর্ভস্থ পানি প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিএডিসির তথ্য অনুসারে দেশের ৪৫ শতাংশ জমিতে অগভীর নলকুপ দিয়ে পানি দেওয়া যাচ্ছে না।

বিশুদ্ধ পানি উৎস দূষণ বা হ্রাস
পানি দূষণের প্রধান উৎস হিসাবে চিহিৃত করা হয় শিল্প-কারখানার, পয়ঃবর্জ্য, বিদুৎকেন্দ্র এবং আবর্জনা প্রক্রিয়াজাতকরণ স্থাপনাগুলোকে। এসব থেকে নির্গত বর্জ্য সাধারণত পাইপের মাধ্যমে নদী, জলাশয় বা স্রোতধারায় মিশ্রিত হয়। কৃষিেেত্র কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার পানিদূষণের অন্যতম কারণ। এছাড়া ধূলা, কীটনাশক, সার, ধাতু, লবণ, তেল, গ্রিজ, জঞ্জাল এমনকি বায়ুবর্জ্য যা বৃষ্টির সঙ্গে বায়ুমন্ডল থেকে নিচে পতিত হয় এসবের দ্বারাও পানি দূষিত হয়। পানি দূষণের উৎসকে প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট এই দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক উৎসসমূহ মনুষ্যসৃষ্ট নয় তবে এগুলো মানুষের কর্মকান্ডের দ্বারা আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে। পানির প্রধান তিনটি উৎস হলো বৃষ্টির পানি, ভূ-পৃষ্ঠের উপরের পানি ও ভূ-গর্ভস্থ পানি। এর সবকটির েেত্রই দূষণ ঘটে। ভূপৃষ্ঠের ওপরের পানি ভূগর্ভস্থ পানির তুলনায় অধিক সংবেদনশীল বা তুলনামূলকভাবে সহজে প্রভাবিত হয়, কেননা ভূগর্ভস্থ পানি প্রাকৃতিভাবেই ভূপৃষ্ঠের ওপরের ক্রিয়াকান্ড থেকে সুরতি।

বাংলাদেশের পানি সম্পদের প্রতি নানাভাবে বিরূপ আচরন করা হচ্ছে। যথেচ্ছভাবে নদী দূষণ, দখল, নদী খনন এবং নদীখাতের যথাযত সংরণ ও নদী শাসনের প্রতি অবহেলা ইত্যাদি কারণে দেশের নদ-নদী শোচনীয় পরিস্থিতির সম্মুখীন। আমরা যদি ঢাকা মহানগরের পয়ঃবর্জ্যরে কথা চিন্তা করি তাহলে দেখতে পাই প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ঘনমিটার পয়ঃবর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। উৎপাদিত এই বর্জ্য ঢাকার আশেপাশের নদ-নদীতে গিয়ে পরিবেশ ও পানির দূষণ করছে। এই দূষিত পানি আবার মানুষ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে নানা রকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

নদ-নদী, খাল-বিল
অসংখ্য নদ-নদী পরিবেষ্টিত বাংলাদেশ প্রধানত একটি নিম্ন সমতলভূমি বিশিষ্ট অঞ্চল। জালের মত নদী ও খাল ঘিরে রেখেছে এ দেশকে। যুগে যুগে এই নদ-নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে জনপদ, শিল্পকলকারখানা ও বানিজ্যিক কেন্দ্র, সেই সাথে স্থায়ী হয়েছে বাঙালি সমাজের অগ্রগতি ও স্বাচ্ছন্দ্য। বাংলাদেশ চারটি দেশের (চীন, ভূটান, নেপাল ও ভারতের) ১.৫৫ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার অববাহিকার পানি নিস্কাশনের আধার। বিপুল জলরাশি, প্রায় ৬ মিলিয়ন কিউসেক পানি গঙ্গা, ব্রপুত্র, মেঘনা নদী ও তাদের শাখা প্রশাখা নদী দ্বারা প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশছে। যার ফলে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে ১,৪৪,০০০ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপে। প্রতি বছর প্রায় আড়াই বিলিয়ন টন পলি বহন করছে এই নদীগুলো।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। ৫৫,৪৯৮ বর্গমাইল আয়তন নিয়ে বাংলাদেশ। যার জলভাগের আয়তন হচ্ছে ৩,৬৬১ বর্গমাইল। আর সমগ্র দেশে নদীর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৮,৪৬৫ মাইল। বাংলাদেশের নদ-নদীর সংখ্যা নিয়ে নানা মত রয়েছে। অনুমান ও হিসাব কষে (খাল-বিল, ছড়াসহ) বাংলাদেশে ৭০০ নদী আছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলেন। এক সুন্দরবনেই খাল-নদী রয়েছে ১৭০টি। কোনটি খাল আর কোনটি নদী তার সীমারেখা আঁকা সত্যিই বড় কঠিন। পঞ্চাশ বছর আগে যেখানে নদী ছিল আজ সেখানে আবাদ ভূমি, আবার একটি শাখা বা উপনদী নানাস্থানে নানা নামে অভিহিত হয়েছে।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার নদ-নদী বিলীন হয়ে গেছে। এ বিলীন হওয়ার পেছনে যে সকল কারণ পরিলতি হয় তা শুধু পলি ভরাট হয়ে নদী ভরাট হয়েছে তা নয়, মানুষের দখলদারিত্ব তার একটা বিশেষ কারণ। ঢাকার পাশ দিয়ে বুড়িগঙ্গা, নারায়ণগঞ্জের পাশ দিয়ে শীতলা, টঙ্গীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত তুরাগ। এ নদীগুলোর পাশে অবস্থান করছে রাজধানীর শহর বন্দর। সেই সুবাদে জনবসতি এ শহরে-বন্দরমুখী মানুষের যাত্রা, শহর বন্দরকেন্দ্রের মানুষের বসবাস, আবাসন প্রয়োজনেও নতুন নতুন শিল্প-কারখানা ও দোকানপাট গড়ে উঠছে। সেই সাথে নদীর পাড় ভরাট প্রতিযোগীতায় নেমেছে ভূমি খেকো ও ভূমি দস্যুরা। এভাবেই নদীর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ছোট হয়ে আসছে।

প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুস্ক মৌসুমে নদ-নদীতে পানি হ্রাসের ফলে নৌচলাচলে সংকট দেখা দেয়। নদীবে জেটে ওঠে অসংখ্যা চর। নদী মাতৃক বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গুরুতর সমস্যা। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার েেত্র নৌপথ একটি প্রধান মাধ্যম। নৌপথ যেমন যাতায়াত তেমনি মালামাল পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দণিাঞ্চলের যোগাযোগের একটি বড়ো মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। কিন্তু এই নৌপথগুলোর নদ-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে নানা সমস্যার সম্মূখীন হতে হচ্ছে। শুস্ক মৌসুমে নদ-নদীর পানি কমতে থাকে এবং নদ-নদীতে চর জেগে ওঠে। নদ-নদীর নাব্যতা একদিকে যেমন নৌচলাচলের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তেমনি এর বহমানতা ুণ হলে বা পানি ধারণ মতা না থাকলে বন্যার আশংকা থেকে যায়। এসকল বিষয় বিবেচনা করে নদী শাসন, নদী খনন ও নদীর গতিপথ সচল রাখার ব্যাপারে সুসংগঠিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

হাওর বাওর বিল
আমাদের মৌলিক খাদ্য সম্পদ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান ত্রে হচ্ছে দেশের হাওরগুলো। দেশের বহু অঞ্চলে হাওর-বিল-জলাশয় প্রভূতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও প্রকৃত হাওর অঞ্চল বলতে যা বোঝায় তা আমাদের দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি জেলায় বিস্তৃত। এ সাতটি জেলার প্রায় ৫০টি উপজেলায় প্রধান হাওরগুলো রয়েছে। সাধারণভাবে বলা যায় নিচু সমতল ভূমি, বিল, জলাশয়, খাল প্রভৃতি জলাধারসহ বির্স্তীর্ণ এক বৈচিত্র্যময় অঞ্চল হাওর। বছরের অর্ধেক সময় হাওর ডুবে থাকে স্বচ্ছ মিঠাপানিতে। এখানে রয়েছে মৎস সম্পদ, বিভিন্ন প্রজাতির বৃ, লতা-পাতা, সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জনপদ। প্রতিবার পানি নিয়ে আসে পলি, উর্ব্বর করে জমি। গ্রীষ্মমন্ডলীয় উষ্ণতা ও প্রাকৃতিক খাদ্য ভান্ডার প্রতি শীতে আমন্ত্রণ করে আনে ঝাঁকে ঝাঁকে ভিনদেশী শীতার্ত পাখিকে। বাংলাদেশের সাতটি জেলার ৪০ টি থানায় মোট ৪৭ টি ছোট বড় হাওর রয়েছে। হাওর এলাকায় রয়েছে অসংখ্য খাল, নদী এবং প্রায় ৬৩০০ টি বিল, যার মধ্যে ৩৫০০ টি স্থায়ী। মনুষ্য সৃষ্ঠ বিভিন্ন দূষণের ফলে দেশের সমৃদ্ধ এই অঞ্চলের প্রাকৃতি ও মানুষের জীবন আজ হুমকির সম্মুখীন।

পুকুর ও দীঘি
পুকুর ও দীঘিতে সাঁতার কেটে দিন কাটানো অনেক অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। পূর্বে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য পানি সংগ্রহ করা হত এই পুকুর ও দীঘি হতে। শুধুমাত্র খাবার পানি নলকূপ বা কুয়া হতে সংগ্রহ করা হতো। দেশের সকল এলাকায় কম বেশী পুকুর ও দীঘি ছিল। বাড়ীতে নিজস্ব পুকুর বা দীঘি থাকা আভিজাত্যের প্রতীক ছিল। গৃহস্থালী মাছের চাহিদা পুরণ করা হতো পুকুর ও দিঘী হতে। অনেক কিংবদন্তী গল্প ও জড়িয়ে রয়েছে এই পুকুর ও দীঘি ঘিরে। কিন্তু বিগত বেশ অনেক দিন ধরে অবিবেচকের মতো পুকুর ও দিঘী ভরাট করা হচ্ছে। এগুলো ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে অট্টালিকা বা মার্কেট। এই পানির জলাধারগুলো ধ্বংশের ফলে শহরগুলোর ভুগর্ভস্থ পানি স্তর হ্রাস, জলাবদ্ধতা, পানি সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে দেশের জেলা শহরগুলোতে এখনো কম বেশি পুকুর বা জলাধার রয়েছে। এই জলাধারাগুলোর পানি স্থানীয় জনগন তাদের গোছল থেকে শুরু করে দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন। এতে করে ভূগর্ভের পানির উপর চাপ কম পড়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে পুকুর ভরাট করে তৈরি করছে বহুতল ভবন সেই সাথে আবার গৃহস্থালী বর্জ্য ফেলে দূষিত করা হচ্ছে পুকুরের পানি। পুকুরের পানি ব্যবহার উপযোগী না থাকায় চাপ পড়ছে ভূ-গর্ভের পানির উপর। দেশের পানি সংঙ্কট নিরসনে পুকুরের পানি বিশুদ্ধ পানির চাহিদা হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রয়োজনীয় আইন ও নীতিমালার মাধ্যমে পুকুরগুলোকে দূষণের হাত থেকে বাঁচিয়ে অবৈধ দখল থেকে রা করতে হবে।

পানির উৎস সংরন ও ব্যবহৃত পানি পুনঃব্যবহারে করণীয়:

পানির পুনব্যবহার:
পৃথিবীতে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানি পায় না। ঢাকা মহানগরের অনেক এলাকায় বসবাসরত মানুষ পানি না পাওয়ার কারণে তীব্র পানি সঙ্কটে পড়ছে। বর্তমানে ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২২০ কোটি লিটার পানি প্রয়োজন থাকলেও ওয়াসা উৎপাদন করছে ১৭০ থেকে ১৯০ লিটার। এই পানির বেশিরভাগই পাম্পের সাহায্যে ভূ-গর্ভ থেকে উত্তোলন করে সরবরাহ হচ্ছে। এতে যেমন প্রচুর অর্থ খরচ হচ্ছে আবার প্রতিনিয়ত ভূ-গর্ভের পানির স্থর নীচে নেমে যাচ্ছে।

আমাদের ভূ-গর্ভের পানির চাহিদা কমিয়ে ভূপৃষ্ঠের পানি কিভাবে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। ঢাকা শহরের বহুতল ভবনগুলোতে প্রচুর পরিমান পানি অপচয় হয়। ভবনগুলোতে একবার টয়লেট ব্যবহারে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লিটার পানি অপচয় হচ্ছে। এছাড়া কাপড় ধোয়া, রান্নাবান্না, গোসলে প্রয়োজনের তুলনায় প্রচুর পানি ব্যবহৃত হচ্ছে। কাপড় ধোয়ার পানি, রান্নাবান্না এবং গোসলের পানিকে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূনর্ব্যবহার করে পানির অপচয় কমাতে পারি। এছাড়া ঢাকা শহরের আশেপাশে যে সকল নদ-নদী, খাল-বিল আছে তার পানি পরিশোধনের মাধ্যমে পূর্নব্যবহার করে পানির ঘাটতি হ্রাস করা সম্ভব।

ভূপৃষ্টের পানি ব্যবহার
বাংলাদেশের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে এদেশের এখনো প্রচুর নদ-নদী,খাল,বিল, পুকুর, দীঘি রয়েছে। কিন্তু পানি সংগ্রহের জন্য এই উৎসগুলোর কথা চিন্তা করা হয়নি। এই জলের আধারগুলোকে অবহেলা করে প্রকল্পের কারণেই ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরত বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর অবহেলা, অপরিকল্পিত বাধ, রাস্তা, ব্রিজ এবং দখলদারদের কারণে নদীগুলোতে নি¯প্রাণ হয়ে গেছে। যে সকল নদীতে প্রাণ আছে তা আবার শিল্প কারখানাসহ নানা কারণে দুষিত হচ্ছে। কিন্তু এসব নদীই হতে পারত ঢাকা শহরের পানির প্রধান উৎস। তবে বাস্তবে তা হচ্ছে না।

বুড়িগঙ্গা, শীতল্য, বালু, তুরাগ, এবং ধলেশ্বর নদীর পানিকে ব্যবহারের মাধ্যমেও নগরীর পানির চাহিদা মিটানো সম্ভব। পৃথিবীর অনেক দেশেই নগর পরিকল্পনার েেত্র নগরের আশেপাশের নদীনালার পানিকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাদেরও একইভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। আমরা নদীর পানিকে কলকারখানার বর্জ্য, সুয়ারেজ বর্জ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত দূষিত করছি। ঢাকা শহরের সুয়ারেজ অব্যবস্থপনার কারণে নদীনালা, খাল-বিল এর পানি দূষিত হচ্ছে। শহরের ভবনগুলোর দৈনন্দিন কাজে ব্যবহুত পানি মল-মূত্রের সাথে মিশে সুয়ারেজ লাইনের মাধ্যমে নদীতে গিয়ে নদীর পানি দূষিত করছে। এতে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে আবার মানুষ সে পানি ব্যবহার করে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।

সুয়ারেজ এর পানি ও মল-মূত্রের আর্বজনা পৃথক পাইপের মাধ্যমে ফেলার চিন্তা করতে হবে। এেেত্র ভবনের মল-মূত্রের জন্য সেফটি ট্যাংক থাকতে হবে যাতে করে আর্বজনা নদীতে মিশে দূষণ ছড়াতে না পারে এবং দৈনন্দিন কাজের ব্যবহৃত পানি সরাসরি সুয়ারেজ লাইনের মাধ্যমে নদীনালয় গিয়ে পড়ে। নগরীতে বসবাসরত মানুষের বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে আশেপাশের নদীনালার পানিকে দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর পরিকল্পনা করতে হবে।

ঢাকা শহরের মোট চাহিদার মাত্র ১৩ থেকে ১৫ ভাগ পানি নদী থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের পানি অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় তা পরিশোধনের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে শীতল্যা থেকে পানি এনে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারে প্রতিদিন প্রায় ২২ কোটি লিটার পরিশোধন করা হয়। রাজশাহীতে স¤প্রতি নদী পানি শোষণ করে সরবরাহ করার ব্যবস্থা করেছে। খুলনা, চট্টগ্রাম অঞ্চলে এধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তবে চাহিদা ও উত্তোলনের তুলনায় ভুপৃষ্টের পানি ব্যবহারের পরিমান কম।


বৃষ্টির পানি সংরন ও ব্যবহার
বৃষ্টির পানিকে সংগ্রহ এবং সংরণ করে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে নগরীর পানির চাহিদা হ্রাস করা সম্ভব। এেেত্র বর্ষাকালে নগরের বহুতল ভবনে ছাদের পানি সংগ্রহ ও সংরণ করে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ব্যবহার করে পানির চাহিদা কমানো যাবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশেই বৃষ্টির পানি সংগ্রহ (রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং) সিস্টেম চালু হলেও বাংলাদেশে এর প্রচলন নেই। একমাত্র ঢাকা ওয়াসা ভবনের ছাদে এক সময় এ ব্যবস্থা চালু করা হলেও পরবর্তীকালে তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে বেসরকারী উদ্যোগে কিছু প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ভবনে বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে আসছে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় বৃষ্টির পানির সংরন ও ব্যবহারের বিধান থাকলেও তা বলবৎযোগ্য নয়।

সুপারিশ
১. বিশুদ্ধ পানির উৎসঃ নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় রায় কঠোর আইন প্রণয়ন।
২. বৃষ্টির পানি সংরণ ও ব্যবহারে ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন করি প্রতিটি বাড়ীতে বৃষ্টির পানি সংরন ও ব্যবহৃত পানি পুনব্যবহারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৪. শিল্প-কারখানার, পয়ঃবর্জ্য, বিদ্যুাৎকেন্দ্র এবং আবর্জনা প্রক্রিয়াজাতকরণ স্থাপনার বর্জ্য নদী বা জলাশয়ে ফেলা বন্ধ।
৫. পানি ব্যবহারে সংযমী হতে জনসাধারণকে উৎসাহী করা।
৬. ভুগর্ভস্থ পানির ব্যবহার হ্রাস করা এবং ভূ-পৃষ্টের পানির ব্যবহার বৃদ্ধির ল্েয প্রয়োজনী পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়ন।
৭. পুকুর, দীঘি, খাল-বিল-নদীসহ যে কোন জলাশয় ভরাট বন্ধে কার্যকর পদপে গ্রহণ।
৮. পানি পরিশোধনের ল্েয প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ ও অবিলম্বে নদী- দূষণের প্রক্রিয়া বন্ধ করা।
৯. নদীর পানির অপসারন রোধ এবং সাগরে নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে অুন্ন রাখতে হবে।
১০. নদী, খাল, বিলসহ যে কোন ধরনের জলাশয়কে পেছনে দিয়ে এ ধরনের স্থাপনা বা পরিকল্পনা নিষিদ্ধের ল্েয প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ। যদি জলাশয় সামনে থাকে তবে মানুষ এ সকল স্থানে ময়লা আর্বজনা ফেলবে না।
১১. নদীর পানি ব্যবহার, নদীর গতিধারা পরিবর্তনে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প, নদী তীরে নির্মিত বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানা নির্মাণে বানিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করতে হবে।
১২. বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে পানি প্রকল্পসমূহ যথাযথভাবে পুনরমূল্যায়ন করতে হবে এবং পানি প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. নদী দূষণকারী ও দখলদারদের কাছ থেকে তিপুরণ ও জরিমানা আদায় করা।
১৪. সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেয়া এবং অবৈধ দখলদারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা। সি এস দাগ ধরে নদীর সীমানা নির্ধারন করে, নতুন করে আর যাতে কোন স্থাপনা না গড়ে উঠে সেদিকে ল্য রাখা।
১৫. নদী ও খালের দুইপারে মানুষের বিনোদনের জন্য হাঁটার ব্যবস্থা রাখা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন